মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে পাত্তাই দিচ্ছে না হলিউড। মনে করা হচ্ছে শুল্ক সংক্রান্ত যে হুমকি তিনি দিয়েছেন তা কেবলই ফাঁকা আওয়াজ! গত সোমবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন। গাজার যুদ্ধে শান্তি আনার জন্য তার পরিকল্পনা মানাতে চেষ্টার অংশ হিসেবে। একই দিনে তিনি কংগ্রেসের শীর্ষ চার নেতার সঙ্গেও বৈঠক করেন, সরকারের বাজেট অনুমোদন ও ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে শাটডাউন রোধ করার জন্য।
তবে সকালে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে বিদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রের ওপর শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেন।
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যবসা চুরি করে নিচ্ছে অন্যান্য দেশ। এখানে তারা সিনেমা করছে। কিন্তু শুল্ক পরিশোধ করছে না ঠিকমতো। এই চুরিটা একদম শিশুর কাছ থেকে মিষ্টি চুরি করার মতো।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিদেশে নির্মিত এবং বিদেশি সব চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
স্টুডিও ও স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলো এই হুমকিতে বিস্মিত হয়। তবে ট্রাম্পের হুমকিকে পাত্তাই দিচ্ছে না হলিউড। গত মে মাসেও ট্রাম্প একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। তখন এক স্টুডিও নির্বাহী বলেছিলেন, ‘তিনি প্রেসিডেন্ট, তাই তাকে সিরিয়াসলি নিতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তার কথায় বিভ্রান্ত। তিনি বলেন বেশি। সেগুলো কার্যত বাতাসে উড়ে বেড়ানো ফাঁকা আওয়াজ।’
মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনও কোনো মন্তব্য করেনি এই হুমকি নিয়ে। তবে সূত্র বলছে, মঙ্গলবার বোর্ড বৈঠক পূর্বেই নির্ধারিত ছিল। বোর্ডের সদস্য ও বিনোদন নেতারা, যেমন ডিজনির অ্যালান বার্গম্যান, অ্যামাজন এমজিএমের মাইক হপকিন্স এবং এনবিসি ইউনিভার্সালের ডোনা ল্যাংলি, শুল্ক বিষয়ক আলোচনা করবেন।
বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্প্রদায় ট্রাম্পের নতুন হুমকির প্রতিক্রিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তারা চিন্তিত, বিভ্রান্ত দাবি করে ট্রাম্পকে উদাসীন ও কিছু ক্ষেত্রে তিরস্কারও করেছে। তারা মনে করছেন, গেলবারের মতো, এবারও স্পষ্ট নয় ট্রাম্প কেন এই ঘোষণা দিলেন। তার পূর্বের ঘোষণা যেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় করা হয়েছিল সেটি বাস্তবায়নের কোনো নীতি কার্যকর হয়নি।
বিনোদন আইনজীবী স্টিফেন ওয়াইজেনেকার বলেন, ‘এটি দ্বিতীয়বার যখন তিনি হুমকি দিয়েছেন। মনে হচ্ছে তিনি কিছু পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু সেটা কার্যকর হওয়ার চান্স নেই বলা যায়।’
ব্রিটিশ প্রযোজক ফিল হান্ট বলেন, ‘এটা আবার আরেকটি ফাঁকা আওয়াজ। তিনি চলচ্চিত্রকে একটি বৈশ্বিক ব্যবসা হিসেবে বোঝেন না।’
প্রযোজক চর্বসিল জিলিবার্ট বলেন, সম্ভাব্য শুল্ক আর্টহাউস চলচ্চিত্রকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ উচ্চ খরচের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্বাধীন চলচ্চিত্র তৈরি করা সম্ভব নয়।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক প্রযোজক জোশুয়া অ্যাস্ট্রাচান বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট সত্যিই মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পকে সাহায্য করতে চান তবে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করে এমন জাতীয় প্রোগ্রাম তৈরি করা উচিত যা ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের প্রণোদনার সমান।’
কয়েকজন শিল্পী এবং প্রযোজক বলেন, ট্রাম্পের হুমকি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
উত্তর আয়রল্যান্ডের প্রযোজক ট্রেভর বার্নি বলেন, ‘আবারও তিনি কথা বললেন এবং সবাই মজা পাচ্ছে।’