শিশুদের জন্য একটি আলোকিত ভূবন নির্মাণের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন তিনি এবং সে উদ্দেশ্যে ‘আলোর পাতা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেছিলেন। তাঁর আর্থিক সঙ্গতি ছিল না, তবুও তিনি দুর্মর সংকল্প থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। ধার দেনা করে প্রতিমাসে সাময়িকীটি নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই আলোকিত ভূবন থেকে অন্ধকার ভূবনে হারিয়ে গেলেন। তাঁর নাম এমরান চৌধুরী, তিনি একজন শিশু সাহিত্যিক। ৫দিন পূর্বে তাঁর বাসায় হঠাৎ স্ট্রোক করে তিনি ঢলে পড়েছিলেন এবং সেই থেকে নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ব্রেইন হেমারেজ হয়েছিল, তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং সে অবস্থাতেই তিনি অনন্তের পথে পাড়ি জমান। তাঁর আর কখনও জ্ঞান ফেরেনি এবং গত দু’দিন তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
এমরান চৌধুরী চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে চট্টগ্রামে যাঁরা সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নুর মুহাম্মদ রফিক থেকে আমরা যদি এই তালিকাটা আরম্ভ করি, তাহলে সেখানে যে নামগুলি পর পর চলে আসে, তাঁরা হচ্ছেন ু জহুর উশ শহীদ, মসউদ উশ শহীদ, খন্দকার আখতার আহমদ, মাহবুবুর রহমান, রহীম শাহ, সুজন বড়ুয়া, রাশেদ রউফ, মিজানুর রহমান শামীম, এমরান চৌধুরী, রমজান আলী মামুন, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার, জসীম মেহবুব, ফারুক হাসান, এয়াকুব সৈয়দ, মাহবুবুল হাসান, উৎপল কান্তি বড়ুয়া, রহমান হাবীব, আজিজ রাহমান, শিবু কান্তি দাশ, আহসান মালেক, বিপুল বড়ুয়া, আবুল কালাম বেলাল ইত্যাদি। আরও নাম আছে, কিন্তু এ মুহূর্তে আমি তাঁদের নাম স্মরণ করতে পারছি না। সবার আগে যাঁর নাম উচ্চারণ করতে হবে, তিনি হচ্ছেন সুকুমার বড়ুয়া। এক সময় আর্ট প্রেসের শফি সাহেবের বইঘরের সঙ্গে কাজ করতে স্বনামধন্য ছড়াকার এখলাস উদ্দিন কিছুদিন চট্টগ্রামে এসে চট্টগ্রামের শিশু সাহিত্যের জগতকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।
এমরান চৌধুরী ছড়া, প্রবন্ধ, গল্প লিখতেন। আবার পত্রিকায় কলাম লিখতেন। শিশু সাহিত্য মাসিক ‘আলোর পাতা’ সম্পাদনার কথা আগে বলেছি। শুধু লেখালেখি নয়, সাহিত্যের সংগঠনও তিনি করতেন। শেষের দিকে তিনি বড়দের জন্য লেখা শুরু করেছিলেন। জীবনে অনেক সম্ভাবনা জাগিয়ে, অনেক প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখে এমরান চৌধুরীর পথ চলা থেমে গেল, এটা চট্টগ্রামের সাহিত্যের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।






