গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে মধ্যাঞ্চলীয় চাউং উ শহরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পালনের পাশাপাশি জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির একজন নারী সদস্য বলেছেন, সন্ধ্যায় থাদিঙ্গুত পূর্ণিমা উৎসবের জন্য চাউং উ শহরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় উৎসবে অংশ নেওয়া লোকজন জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঠিক সেই সময় সামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির গণতন্ত্রকামীরা সশস্ত্র বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে উৎসব ও জান্তা–বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দু’টি বোমা ফেলে অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, কমিটির সদস্যরা লোকজনকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। যে কারণে প্রায় এক–তৃতীয়াংশ মানুষ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার উড়ে এসে অনুষ্ঠানস্থেলে দু’টি বোমা নিক্ষেপ করে।
ওই নারী বলেন, বোমার আঘাতে শিশুদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আমরা বিস্ফোরণের স্থানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা মানবদেহের খণ্ড–বিখণ্ড অংশ, মাংসের টুকরা ও হাত–পা সংগ্রহ করছিলাম।
সোমবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাউং উ এলাকার আরেক বাসিন্দা। তিনি বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, লোকজন প্যারাগ্লাইডারটি মাথার ওপর উড়তে দেখে দৌড়াতে শুরু করে। আর ঠিক তখনই দুটি বোমা ফেলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে তিনি বলেন, আমার দুই সহযোদ্ধা আমার সামনেই মারা গেছেন। আরও অনেকেই আমার চোখের সামনে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার নিহত ৯ জনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তিনি অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও সামরিক জান্তার হামলায় ৪০ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে এই হামলার বিষয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কোনও মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।
মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির জান্তা সরকার বলেছে, আগামী নির্বাচনই জাতীয় পুনর্মিলনের পথ তৈরি করবে।
তবে জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ ওই নির্বাচনকে প্রতারণা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দেশটির এই নির্বাচন চলমান সামরিক শাসনকে আড়াল করার প্রচেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর নির্বাচনকে সাজানো অভিহিত করে তা ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে।