একসময় কন্যা শিশুকে পরিবারে বোঝা মনে করা হতো। কন্যা শিশু জন্ম নিলে মানুষের মুখে ফুটে উঠতো অসন্তুষ্টি। তবে সময়ের সঙ্গে এই কন্যাশিশুরাই বড় হয়ে নিজ যোগ্যতায় সমাজের অনেক উঁচু পর্যায়ে স্থান করে নিয়েছেন।
তারা পেয়েছেন নানান সম্মাননা, পুরস্কার এবং কেউ কেউ নোবেলও। এসব নারীরা প্রমাণ করেছেন – সাহস এবং দৃঢ়তার মিশেলে পৃথিবীকে বদলানো সম্ভব। যুদ্ধ, অবিচার ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা শুধু প্রতিবাদ করেননি, বরং শান্তি, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য অনন্য অবদান রেখেছেন। এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তাদের সেই সংগ্রামেরই স্বীকৃতি।
চলুন দেখে নেই, এখন পর্যন্ত কতজন নারী শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন-
১. মারিয়া কোরিনা মাচাদো: ভেনেজুয়েলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতন থেকে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার সংগ্রাম প্রশংসিত হয়েছে। এর ফলস্বরূপ ২০২৫ সালে তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
২. নার্গেস সাফিয়ে মোহাম্মাদি: ইরানে নারীর অধিকার রক্ষা ও মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রচেষ্টার জন্য ২০২৩ সালে তিনি নোবেল পেয়েছেন।
৩. মারিয়া রেসা: তিনি ফিলিপাইনের একজন সাংবাদিক ও মিডিয়া উদ্যোক্তা। প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করেছেন। এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
৪. নাদিয়া মুরাদ: যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাতে যৌন সহিংসতা বন্ধ করার জন্য তার কাজকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এরপর ২০১৮ সালে তিনি নোবেল জয় করেন।
৫. মালালা ইউসুফজাই: শিশু ও যুবকদের প্রতি দমন প্রতিহত করার জন্য এবং সকল শিশুর শিক্ষার অধিকার রক্ষার সংগ্রামের জন্য সম্মানিত হয়েছেন তিনি। যার ফলে ২০১৪ সালে তিনি নোবেল পান।
৬. এলেন জনসন সারলিফ, তাওয়াক্কোল কারমান ও লাইমাহ গ্বোভি: নারীর নিরাপত্তা এবং শান্তি নির্মাণে নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অহিংস সংগ্রামের জন্য ২০১১ সালে এই ৩ জনকে নোবেল দেয়া হয়।
৭. ওয়াংগারি মাাথাই: টেকসই উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং শান্তির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০০৪ সালে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত হন।
৮. শিরিন এবাদি: গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, বিশেষ করে নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য ২০০৩ সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি।
৯. জোডি উইলিয়ামস: অ্যান্টি-পার্সোনেল মাইন নিষিদ্ধ ও অপসারণের কাজে তার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাই তিনি ১৯৯৭ সালে নোবেল লাভ করেন।
১০. রিগোবেরতা মেনচু টুম: সামাজিক ন্যায় এবং স্বদেশীয় জনগণের অধিকার রক্ষায় সংস্কৃতিক সমঝোতার জন্য ১৯৯২ সালে নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন তিনি।
১১. অং সান সুউ কি: গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য অহিংস সংগ্রামের স্বীকৃতির জন্য ১৯৯১ সালে নোবেল পেয়েছেন।
১২. আলভা মায়ার্ডাল: অস্ত্র প্রতিরোধ ও পারমাণবিক ও অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলের জন্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮২ সালে নোবেল পুরষ্কারে সম্মানিত হন।
১৩. মাদার তেরেসা: মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য তার জীবনব্যাপী অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে নোবেল পেয়েছেন।
১৪. বেটি উইলিয়ামস ও মায়রেড করিগান: উত্তর আয়ারল্যান্ডের সহিংস সংঘাত শেষ করার আন্দোলন গঠনের সাহসী প্রচেষ্টার জন্য ১৯৭৬ সালে নোবেল পান।
১৫. এমিলি গ্রিন বাল্চ: জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে শান্তির জন্য অবদান রাখার জন্য তিনি ১৯৪৬ সালে নোবেল ভূষিত হন।
১৬. জেন অ্যাডামস: জাতীয় ও বৈশ্বিক শান্তির আদর্শ পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ১৯৩১ সালে নোবেল পান।
১৭. বার্থা ফন সাটনার: যুদ্ধের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিরোধের জন্য ১৯০৫ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
গত ১১ অক্টোবর, জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি উদযাপন করা হবে মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য।