ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাস ছয়েক পর দলটি নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।
এর জেরে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এবার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দিকে এগোচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
আওয়ামী লীগের অপরাধের তদন্ত করতে ইতিমধ্যে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা দেবে প্রসিকিউশন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম (প্রশাসন) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চারটি শাস্তির মধ্যে একটি হচ্ছে দল নিষিদ্ধ করা। অপরাধ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল দল নিষিদ্ধ করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল কী করবেন, সেটা তাঁর বিষয়।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, তারা (আওয়ামী লীগ) মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা ইনানকে বলেছেন, “ছাত্রলীগ নামিয়ে দাও”। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানককে বলেছেন, “মোহাম্মদপুরে লোক নামিয়ে দাও”। তাপসের সঙ্গে বলেছেন, ঢাবির তৎকালীন ভিসিকে বলেছেন, “ছাত্রলীগ-যুবলীগকে বলে দিয়েছি”। এসব দলীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হবে, তারা আর কোনো সরকারি বা নির্বাচিত পদে প্রার্থী হতে বা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
ট্রাইব্যুনাল অভিযোগের আমলে নেওয়ার আগেই এ ধরনের ব্যক্তিরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন — এমনটাই বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর সংশোধনী গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন সোমবার অধ্যাদেশ জারি করে আইনে ধারা যুক্ত করেছেন।
নতুন ধারায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৯(১) ধারা অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হবে, তারা জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
একই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও।
এছাড়া, এ ধরনের ব্যক্তিরা প্রজাতন্ত্রের কোনো সরকারি পদে নিয়োগ বা দায়িত্ব পালনের যোগ্য থাকবেন না, গেজেটে আরও বলা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। চলতি মাসেই এ আসনগুলোতে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
বাকি আসনগুলোর একটি অংশে সমমনা ও জোট শরিক দলের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেবে। বাকি আসনগুলোতে দলের প্রার্থী ঠিক করতে একটু সময় লাগবে।
ওই আসনগুলোতে দলের অধিক সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচন করতে চাইছেন। দলীয় সূত্র জানায়, দু’একটি ছাড়া নভেম্বরে ৩০০ আসনেই দল এবং জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ওদিকে চলতি মাসের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত এবং তাদেরকে নির্বাচনী গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
খুব শিগগিরই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থী দেয়া হবে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে দুটি বিকল্প সুপারিশ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। একটি হলো জুলাই সনদ নিয়ে ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট করা।
অন্যটি হলো আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেওয়া। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করবে আগামী জাতীয় সংসদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই সূত্রমতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য খসড়াটি বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে। আজ বুধবার সকালে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন মনে করে, সংবিধান–সম্পর্কিত যেসব সংস্কার প্রস্তাব জুলাই সনদে আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসবে। নিয়মিত সংসদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ আছে।
এভাবে সংবিধান সংশোধন করা হলে পরে এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু যদি আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকবে না। সংস্কার টেকসই করতে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন।
গণভোটের মাধ্যমে বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সর্বশেষ রবিবারের বৈঠকে এবিষয়ে দলগুলো মতৈক্যে পৌঁছায়। তবে, গণভোট কখন- সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই নাকি এর আগে; সংসদের উভয় কক্ষে নাকি শুধু উচ্চকক্ষে পি আর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংবিধান আদেশ জারি করা হবে নাকি হবে না।
মোটা দাগে এখন এই তিন ইস্যুতেই আটকে আছে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হওয়া না হওয়া।
বিএনপিসহ দলটির মিত্র দল-জোটগুলো এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনেই একসঙ্গে পৃথক ব্যালটে গণভোট আয়োজনের পক্ষে।
গণভোট অনুষ্ঠানের সময়ের ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে একমত হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় এনসিপি, এক্ষেত্রে সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে দলটি। এছাড়া, নতুন এই দলটি চায় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ একইসঙ্গে গণপরিষদ ও নিয়মিত সংসদ হিসেবে ফাংশন করবে।
অন্যদিকে, সংসদ নির্বাচনের আগেই নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিংবা তফসিলের আগে গণভোট চায় জামায়াত।
এই খবরে বলা হচ্ছে, অর্থবছরের শুরুতে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদের হার এবং লাগামহীন মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বড় ধাক্কা খেয়েছে।
সার্বিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৪.২ শতাংশ থেকে কমে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক দশকের মধ্যে অন্যতম নিম্নস্তর।
উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ঋণ সংকট, ব্যাংক খাতের অনিশ্চয়তা এবং নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের অনীহা অর্থনীতির গতি শ্লথ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই ধীরগতি শুধু প্রবৃদ্ধিকেই নয়, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভাবনাকেও গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।
এই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা নতুন শিল্প ও উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। উচ্চ সুদের হার, ব্যয়বহুল কাঁচামাল ও অনিশ্চিত মুদ্রানীতি ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নিতে নিরুৎসাহ করেছে।
এই খবরে বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আরও বেড়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছর ২০২৩–২৪ সালে ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এই বহুপাক্ষিক সংস্থা মঙ্গলবার প্রকাশিত তাদের প্রতিবেদন “দ্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট”-এ জানিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং শ্রমবাজারের দুরবস্থা মিলিয়ে দারিদ্র্যের এই অবনতি ঘটেছে।
এর আগে, গত আগস্টে স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) জানায়, ২০২৫ সালের মে মাসে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং বেকারত্ব বৃদ্ধিই দারিদ্র্য বাড়ার প্রধান কারণ।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, যিনি সরকারের পক্ষে সামগ্রিক অর্থনীতি তত্ত্বাবধান করছেন, বিশ্বব্যাংকের এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গত ৮ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন হবে গণভোটের মাধ্যমে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে গণভোট হতে পারে।
এ জন্য গণভোটের আগে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে ইসিকে ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে। গণভোট হবে জুলাই সনদের ওপর। আর সনদের যে ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সংসদকে।
গতকাল মঙ্গলবার অনলাইনে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাথে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ বৈঠকে এমন মতামত উঠে এসেছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের পাশাপাশি একটি বিকল্প প্রস্তাব বা সুপারিশও সরকারকে দেয়ার পক্ষে কমিশন।
তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাথে ফের বৈঠক করবে কমিশন। সেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আগে ও পরে করণীয় বিষয়ে নানা দিক আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে হবে কমিশনের চূড়ান্ত বৈঠক।
মূলত সবকিছুর সিদ্ধান্ত আসবে আজকের এই বৈঠক থেকে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।