আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের তৎপরতা শুরু করেছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমানে বামপন্থি দলগুলোর যেসব জোট রয়েছে, সেগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে।
এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বামপন্থি দল ও জোটের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা চলছে। চলতি অক্টোবরের মধ্যেই নতুন একটি জোট আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। নিজ নিজ দল গোছানোর পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের বিভিন্ন তৎপরতাও চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে জোট সম্প্রসারণ এবং বৃহৎ জোট গঠনের তৎপরতা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বামপন্থি দলগুলোও নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বামপন্থি রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠন এবং বিদ্যমান জোটকে সম্প্রসারণ ও একাধিক জোটকে একত্রিত করে বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জোটে বামপন্থি দল ছাড়াও প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দলগুলোকে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাম গণতান্ত্রিক জোট জোর তৎপরতা শুরু করেছে। এই জোটের প্রধান দুই দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নতুন নির্বাচনী জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম ও ঐক্য ন্যাপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এসব দলসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার দলগুলোকে নিয়েও জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এসব দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলে আসছে। দল ও জোটগুলোর নেতারা বেশ কয়েকবার পরস্পরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। এর বাইরে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চকে বামপন্থি দলগুলোর বৃহত্তর জোটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে।
বামপন্থি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে যে আলোচনা হয়েছে, তা অনেকটাই ইতিবাচক। বিশেষ করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। বৃহত্তর জোট গঠনের ক্ষেত্রে এসব দলের অধিকাংশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ও সাড়া দিয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে বামপন্থি দলগুলোর উদ্যোগে নতুন নির্বাচনী জোট অচিরেই আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে জানিয়েছেন দলগুলোর নেতারা।
নেতারা আরও জানান, শুধু নির্বাচনী জোটই নয়, রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয়কেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী দিনে দেশের যেকোনো সংকটে এবং ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে নতুন জোট কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু, জনদুর্ভোগ, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুকে সামনে নিয়ে নতুন জোট মাঠে থাকবে। প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করব, আমাদের করণীয় কী হবে, তা নিয়ে জোটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। বাম গণতান্ত্রিক জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করছে। অন্যান্য বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনেরও চিন্তা আছে।
তিনি বলেন, আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাকে নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের চিন্তা করছি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী মোর্চার সঙ্গে আলোচনা হবে। এ ছাড়া জোটের বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপসহ কিছু বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দল। তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। ইতোমধ্যে এসব দল ও জোটের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। যদি তারা আসে তাহলে সবাইকে নিয়ে একটা নতুন জোট করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা সিপিবি-বাসদের বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এর বাইরে গণফোরাম আছে, ঐক্য ন্যাপ আছে—তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সবাই মিলে একটা জোট গঠন করা হবে। এই উদ্যোগ অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করছি শিগগিরই একটি নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করবে। চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই নতুন জোট গঠন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এর বাইরে প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর আরেকটি জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এই জোট দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যে গণতন্ত্র মঞ্চকে সঙ্গে নিয়েও বৃহত্তর একটি জোট গঠন করা যায় কি না, সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলো।