রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তিনি অন্যান্যদের চেয়ে অধিকতর যোগ্য বলে বিভিন্নসূত্রে জানা যায়। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের(সিভাসু) মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে ইপিডেমিওলজি বিষয়ের অধ্যাপক। প্রায় তিন দশকের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ বরেণ্য এই বিজ্ঞানী গত ১২ আগস্ট থেকে সিভাসু’র ওয়ান হেল্থ ইনস্টিটিউট এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন(ডিভিএম) এবং ফার্মাকোলজি বিষয়ে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের অধিনস্থ দ্যা রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজ এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে ইপিডেমিওলজি বিষয়ে দ্বিতীয় এমএসসি ডিগ্রী এবং অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযু্িক্ত বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক আহসানুল হক ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিন বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাঙ্গামাটিতে তিন বছরের কর্ম জীবনে ড. হক পার্বত্য অঞ্চলের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। পার্বত্য অঞ্চলে কাজ করার সুবাদে তিনি পরবর্তীতে শিক্ষকতা ও গবেষণায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন। তিনি ১৯৯৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন চট্টগ্রাম সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ফার্মাকোলজির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে কলেজটি বিশ^বিদ্যালয়ে উন্নীত হলে ক্রমান্বয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজে অধ্যাপক ড. হক এর যেহেতু অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং বিদেশেও গবেষণা কাজে অভিজ্ঞতা থাকায় আর পূর্বে পার্বত্য অঞ্চলে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় ড. আহসানুল হক রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়কে আদর্শ বিশ^বিদ্যালয়ে পরিনত করে পাহাড়ে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলনের অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলে বিভিন্ন সূত্র অভিমত জানান। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ে ইপিডেমিওলজি এবং এপ্লাইড ইপিডেমিওলজি বিষয়ে এমএস ডিগ্রী এবং জনস্বাস্থ্য(পাবলিক হেল্থ) বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী (এমপিএইচ) চালুর ব্যাপারে অধ্যাপক হক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সিভাসু ও বাংলাদেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি যেমন প্রবলেম বেইসড লার্নিং (পিবিএল) ও ইভিডেন্স বেইসড ভেটেরিনারি মেডিসিন (ইবিভিএম) পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল মুখ্য। সিভাসুতে দেশের প্রথম ওয়ান হেল্থ ইনস্টিটিউট স্থাপনের ব্যাপারে অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সিভাসুতে দেশের প্রথম ভেটেরিনারি ক্লিনিক্যাল স্কিলস ল্যাব স্থাপিত হয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের একবছর মেয়াদী ভেটেরিনারি ইন্টার্নশিপ চালু এবং নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে ইন্টার্নশিপকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ রাখতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ইন্টার্ন ভেটেরিনারিয়ানদের ভারত, থাইল্যান্ড ও য্ক্তুরাষ্ট্রে বিশেষ ক্লিনিক্যাল ট্রেইনিং আয়োজনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশ^ প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে সিভাসু এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচীর মাধ্যমে সিভাসুর বিভিন্ন ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। টাফটস বিশ^বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী তাদের সামার রিসার্চ কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে আসে। শিক্ষা, গবেষণা ও দক্ষতা আদান প্রদানের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করা উক্ত প্রকল্পের বাংলাদেশে জাতীয় সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. হক। সিভাসুতে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাকাজ বেগবান করার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং দেশ বিদেশের গবেষকদের অংশগ্রহণে বার্ষিক রিসার্চ কনফারেন্সের মুখ্য উদ্যোক্তাদের একজন অধ্যাপক আহসানুল হক। অধ্যাপক আহসানুল হকের তত্ত¡াবধানে অদ্যাবধি নয়জন শিক্ষার্থী পিএইচডি, তিন জন শিক্ষার্থী এমফিল, ৩৮ জন শিক্ষার্থী এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষার্থীদের মাঝে সিভাসু ছাড়াও ওঈউউজই, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজ, লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ^বিদ্যালয়, ডিয়াকিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীৗ রয়েছে। দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অধ্যাপক হক বেশ সমাদৃত তাঁর আধুনিক এবং উদার শিক্ষানীতির জন্যে। অধ্যাপক আহসানুল হক এখন পর্যন্ত ১১০টি আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউড গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন এবং তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক রিসার্চ কনফারেন্সে তিনি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধ যুক্তরাজ্যেরে প্রাচীনতম ভেটেরিনারি শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। গবেষণায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য অধ্যাপক আহসানুল হক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্কলারশিপ ইন ভেটেরিনারি ইপিডেমিওলজি এবং অস্ট্রেলিয়ান লিডারশীপ এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড কলেজ অফ ভেটেরিনারি সাইন্টিস্টের ইপিডেমিওলজি চ্যাপ্টারের আজীবন সদস্য। এছাড়াও ওয়ান হেল্থ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। অধ্যাপক হক একাধিক গবেষণা জার্নালের সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। International Veterinary Student Association (IVSA) এবং One Health Young Voice Bangladesh এর উপদেষ্টা হিসিবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গমতাসহ সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে আগ্রহী এবং প্রায় প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই এর ছাপ রেখেছেন। শিক্ষা ও গবেষণায় তাঁর বিশেষ অবদান ও নেতৃত্বের জন্য অধ্যাপক আহসানুল হক দেশে-বিদেশে স্বীকৃত। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে প্রাণিসম্পদ ও প্রাণিস্বাস্থ্য উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অসামান্য।