ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে এক ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ১০৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। মঙ্গলবার ( ২ জুলাই) হিন্দুদের ধর্মীয় জমায়েত ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পরে হঠাৎই দৌড়োদৌড়ি শুরু হওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সিনিয়র পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার সিং জানিয়েছেন, “একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, হাথরাস জেলার মুঘলগড়ি গ্রামে ভোলে বাবার অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে।“
জেলার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার উমেশ কুমার বলেছেন যে, আহতদের অনেককে ইটাহ-র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিকান্দ্রারাউ শহরের একটি ট্রমা সেন্টারে। তিনি জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জনের মতো মানুষ আহত হয়ে ভর্তি আছেন।
মৃতদেহের ময়না তদন্ত করে নাম পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ট্রমা সেন্টারে নিহতদের পরিবারের এক সদস্য বলেন, “এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখানে উপস্থিত নেই। ভোলে বাবাকে এখানে এত বড় অনুষ্ঠান করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশাসন কোথায়?”
আলিগড় রেঞ্জের পুলিশ আইজি শলভ্ মাথুর সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ‘ভোলে বাবা’ নামে ওই ধর্মগুরুর অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমস সংবাদপত্র ‘ভোলে বাবা’ নামের ওই ধর্মগুরুর ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে হাজির এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন জানিয়েছেন, যে প্রচণ্ড গরমে তাঁবুর মধ্যে অনুষ্ঠান চলছিল। গরমের কারণে পুরো অনুষ্ঠান চলাকালীনই ভক্তদের অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছে। তাই অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই হুড়োহুড়ি করে বেরুনোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বের হবার পথ ছিল না। একজন আরেকজনের ওপরে পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে গেছেন। আমি নিজেও বেরোতে গিয়ে দেখি মোটরসাইকেল রাখার কারণে বেরুনোর পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
যোগী আদিত্যনাথের বিবৃতি
সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে একটি বিবৃতি জারি করে হাথরাসের দুর্ঘটনায় মৃতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্রুত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া এবং ঘটনাস্থলে ত্রাণ বিলি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আগ্রার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক এবং আলিগড়ের কমিশনারকে এই দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
এর আগে, দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার এক মন্দিরে নতুন বছরের অনুষ্ঠান চলাকালীন অবৈধ বাজি বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ১১২ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের কাছে সেতু ভেঙ্গে পড়ে ১১৫ জন ভক্ত মারা গিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ভারত শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় হিন্দু তীর্থস্থান বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায় ১২ জন।