প্রতিবেশী দেশ ইরানের হামলায় মঙ্গলবার পাকিস্তানে দুই শিশুর মৃত্যু এবং তিনজন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। তবে ইরানের দাবি, জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল আদলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। ইরানের সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত একটি সংবাদ সংস্থা এই তথ্য জানাচ্ছে।
এই হামলার ঘটনাকে ‘বেআইনি কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করে পাকিস্তান বলেছে এটি ‘সংকটজনক ফল’ ডেকে আনতে পারে।
এই নিয়ে গত কিছুদিনের মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে ইরানের হামলার শিকার হলো পাকিস্তান। এর আগে ইরান সোমবার ইরাকে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার দপ্তর ও সিরিয়ায় আইএস এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
হামলার ঘটনায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এবং এর পরবর্তী ফলাফলের দায় ইরানকেই নিতে হবে।
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনাটি নজিরবিহীন হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার পাকিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমে প্রদেশের একটি গ্রামে আঘাত হানে এই ক্ষেপণাস্ত্র।
পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে প্রায় নয়শো কিলোমিটার (৫৫৯ মাইল) সীমানা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সীমানার নিরাপত্তা দুই দেশের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সীমান্তবর্তী এসব অঞ্চলে জনবসতি তুলনামূলক অনেক কম। অল্প জনবসতিপূর্ণ এসব অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বিছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যুদ্ধ করে আসছে পাকিস্তান ও ইরান। এর মধ্যে জইশ আল আদলও অন্যতম।
গত মাসে এই সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় একটি হামলার ঘটনায় এক ডজনের বেশি ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়। তেহরান ঐ ঘটনার জন্য জঙ্গী গোষ্ঠী জইশ আল আদলকেই দায়ী করে আসছিলো।
সে সময় ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ ওয়াহিদি দাবি করেছিলেন, হামলায় অভিযুক্ত জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে তার দেশে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছিলো।
মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, জইশ আল আদল হলো সবচেয়ে সক্রিয় এবং প্রভাবশালী সুন্নী জঙ্গিগোষ্ঠী। যারা মূলত তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে সিস্তান ও বেলুচিস্তানে।
মঙ্গলবার ইরাকের কুর্দিস্তানে অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। হামলায় চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে ইরাক। ইরাকে হামলার চালানোর একই সময় সিরিয়ায় আইএস’র একটি ঘাঁটিতেও হামলা চালায় ইরান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়েছে রয়টার্স।
ইরাকের উত্তরের ইরবিলের কাছে এই হামালার ঘটনাটি ঘটে। হামলায় চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছিলো ইরাকের কুর্দিস্তান নিরাপত্তা পরিষদ। ইরাকের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, হামলায় নিহতদের মধ্যে কুর্দি ব্যবসায়ী পেশরাউ দিজাই এবং তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন।
সোমবার রাতে ঐ ঘটনার পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন জানান, আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন চালিয়ে যাবো। তবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এই হামলাটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
ইরান রেভ্যুলেশনারি গার্ড তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘জায়োনিস্টদের সাম্প্রতিক নৃশংসতা, রেভ্যুলেশনারি গার্ডস ও অ্যাক্সিস কমান্ডারদের হত্যার কারণে ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তর এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।’
এর আগে গত মাসে সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের এই এলিট ফোর্সের তিন কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। সেই সময়ই ওই ঘটনায় প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান।
ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডসের (আইআরজিসি) বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ‘আমরা আমাদের জাতিকে আশ্বস্ত করছি, শহিদদের রক্তের শেষ বিন্দুর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত গার্ডসদের এই সশস্ত্র অভিযান অব্যাহত থাকবে’।
ইরাকি কুর্দি প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি ইরবিলের এই হামলাকে কুর্দি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ বলেও নিন্দা জানিয়েছে।
ইরাকের নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, এই হামলার সময় ইরাবিল বিমানবন্দরের বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
ইরান এর আগেও বেশ কয়েকবার ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। দেশটির দাবি, ওই এলাকা ইরানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি চিরশত্রু ইসরায়েলের এজেন্টদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল ও ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের এই সকল হামলা সেটি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য ইরানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে তারা বড় ধরনের সংঘাতে জড়াতে চায় না। ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতার জায়গা থেকেই বিভিন্ন গোষ্ঠী ইসরায়েল ও তার মিত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।