আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় দলকে ক্ষমতায় আনতে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে দেশবাসী।
তিনি বলেন, “নির্বাচন বাতিলের জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অনেকে আন্তর্জাতিকভাবেও জড়িত। তারা বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করছে। আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেব।”
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে টুঙ্গিপাড়ায় সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী ৭ জানুয়ারি আমাদের নির্বাচন। নৌকা মার্কায় আমরা ভোট করবো। আপনারা সকালে সকলে সশরীরে এসে ভোট দিয়ে এই বিশ^কে দেখাবেন যে এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আমরা তা করতে জানি ও করতে পারি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমরা করতে পারি।”
তিনি বলেন, তিনি চান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক। আওয়ামী লীগ সভাপতি টুঙ্গিপাড়াবাসীর সমর্থনকে নিজের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর দায়িত্ব¡ নেওয়ার জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, আমি ৩ শ’ আসন দেখি। আর আমাকে দেখেন আপনারা। কাজেই এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া, আমার মত একজন সৌভাগ্যবান প্রার্থী বাংলাদেশে আর নেই। এটা হলো বাস্তবতা। তার কারণ আপনারা। আপনারাই আমার দায়িত্ব নেন। আপনারা আমাকে দায়মুক্ত করে রেখেছেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারছি।
“আমি একজন প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, ভোট দেবেন তো?”
তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে চিৎকার করে জনতা দুই হাত তুলে ভোট প্রদানের সম্মতি জানায়। “আমি জানি আপনারা দেবেন,” প্রতিউত্তর দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সোয়া ১১টায় সমাবেশস্থলে পৌঁছান এবং সমাবেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। সমাবেশটি একটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে বোমা মেরে ফিলিস্তিনে নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে (এখানে বাংলাদেশে) একই কাজ করেছে তারেক জিয়া। বাংলাদেশে এ সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন চলবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহ যদি দিন দেয় আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে-ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটা হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব।
নির্বাচন বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয় পক্ষ কী করতে পারে? দেশের কোনো উন্নতি করতে পারে না। ২০০৭-এ আপনারা দেখেছেন কী করেছে। তার আগে তো জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া, এরাই তো ছিল, মানুষের তো কোনো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি! মানুষ তো যে অন্ধকার-অন্ধকারেই ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ চায় দেশে শান্তি থাকুক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। দেশের উন্নতি তরান্বিত হোক। আর তারা বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিন্তু এটা করেও তারা সফল হতে পারছে না।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এই যাত্রা সফল করতে পারে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের সে যোগ্যতাই নাই। কারণ, বিএনপি হচ্ছে খুনিদের পার্টি আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের পার্টি।
বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো বিদেশে কয়েকজন রয়ে গেছে। নূর, রশিদ, ডালিম, মুসলেহ উদ্দিন, রাশেদ এখনো ফেরারি। তাদের আনার জন্য বিদেশের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি, আইনগত ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি জানি না কেন আমেরিকা সেই খুনি রাশেদকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কানাডা নূরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। ডালিম আর রশিদ পাকিস্তান আর লিবিয়াতে যাতায়াত করে। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে ওই খুনিদের ধরে এনে আমরা রায় কার্যকর করবো। জাতির পিতার হত্যাকারীদের রায় আমরা কার্যকর করব। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আমরা নিয়ে এসেছি। ওদের রায় আমরা কার্যকর করেছি।
এদিকে, শেখ হাসিনার নিজের নির্বাচনী এলাকার এ জনসভায় যোগ দিতে শনিবার (ডিসেম্বর ৩০) ভোর থেকে এ মাঠে জড়ো হন এখানকার মানুষ। ঢাক-ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে উৎসব করতে করতে নানা রঙের পোশাক পরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থকরা।