আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য হাজার হাজার প্রার্থী ঢাকায় ভিড় করেছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। গড়ে প্রতি আসনের জন্য ১১জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। চট্টগ্রামের পটিয়া একটি সংসদীয় আসন; পটিয়াকে শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সবচেয়ে অগ্রসর এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে ধরলে সংসদে পটিয়াকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাদের মধ্যে অবিভক্ত বাংলা বা অবিভক্ত ভারতের অনেক বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, দেশব্রতী, স্বাধীনতা সংগ্রামী রয়েছেন।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, উনবিংশ শতাব্দির চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত জননায়ক যাত্রামোহন সেন, পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র কংগ্রেসের সভাপতি, কলকাতা কর্পোরেশনের পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র, ত্রিমুকুটধারী দেশপ্রিয় জেএম সেনগুপ্ত, হারবাং-এর প্রথিতযশা ব্যবহারজীবী ও সমাজ সংস্কারক খান বাহাদুর জালালউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক সাহিত্যিক স্বাধীনতা সংগ্রামী মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, চট্টল গৌরব মহিমচন্দ্র দাশ, বাঁশখালীর গৌরব খান বাহাদুর বদি আহমদ চৌধুরী, নুর আহমদ চেয়ারম্যান, ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ অধ্যক্ষ আবদুল কাশেম, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ সংসদে পটিয়ার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে পটিয়াকে গৌরবান্বিত করেছেন। এই গৌরবের ধারায় আজ আবার পটিয়ার আরেকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সময় এসেছে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। গত তিন টার্ম ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে এবং এখনও আছে।
আশা করা যায়, আসন্ন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখবে। সেজন্য আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য মানুষের এত তোড়জোড়। কারণ সবার মনে এ ধারণাই বদ্ধমূল যে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট পেলেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আর কোন সমস্যাই হবে না। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে তো আর কথাই নেই। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ের পথে আরো কোন কাঁটাই থাকবে না। এ পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু পটিয়ার আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুঃখজনকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে টেনে আনা হয়েছে। এর কোন দরকারই ছিলো মনে হয় না। মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো অতীতে কোন কোন নির্বাচনে ব্যক্তিগতভাবে কোন বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু অনলাইন পোর্টালে এটাকে একটা বিতর্কের বিষয় হিসেবে দাঁড় করিয়ে তাতে একজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য প্রদানের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আমরা হতবাক হয়ে গেছি।
গোলাম কিবরিয়া বাবুলকে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করতে প্ররোচিত করে পরোক্ষভাবে আরেকজন প্রার্থীর মনোনয়ন লাভের পদ সুগম করে তোলার চেষ্টাই এতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাবুল একজন সরল ছেলে, তাঁকে কি বুঝানো হয়েছে জানি না, কিন্তু সে যেভাবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন কথা বলেছে, তা একদিকে যেমন অশোভন, তেমনি অন্যদিকে এসব কথা বলার মত এখতিয়ার তাঁর ছিলো বলে মনে হয় না।
শামসুদ্দিন আহমদ, আবু সিদ্দিক, আফজল এবং অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরীকে বাদ দিলে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীই বর্তমানে পটিয়ার সিনিয়র ছাত্রনেতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি পটিয়ার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পরিবার সাবরেজিস্ট্রার বাড়ির সুযোগ্য সন্তান এবং একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। কোন রকম দলাদলি, নোংরামির মধ্যে তিনি কখনও ছিলেন না, আজো নেই।
মুক্তিযুদ্ধে তিনি শামসুদ্দিন আহমদ, মৃণাল চৌধুরী এদের সঙ্গে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এটা বাবুলের জানার কথা নয়। বাবুলের যুদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে কি পটিয়া সদর অন্তর্ভুক্ত ছিলো ?পটিয়ার কোন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের অধীনে বাবুল কোন গ্রুপের সাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? পটিয়ায় যারা যুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন তাঁদের মধ্যে হুলাইন গ্রামের আহমদ নবী চৌধুরী একজন কমান্ডার।
এ বিষয়ে জানতে কমান্ডার আহমদ নবী চৌধুরীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী যে একজন মুক্তিযোদ্ধা সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। তাছাড়া ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নাম স্থান পেয়েছে।