আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে শুরু হচ্ছে চার দিনের ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভাল’ এবং কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অনুষ্ঠিত হবে সাত দিনের পর্যটনমেলা ও বিচ কার্নিভাল।
এ বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট’ বা ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’।
দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস- ২০২৩’ পালনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, পর্যটন খাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিষেবা খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ খাতের বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। কিন্তু করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন পর্যটন খাতকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বৈশ্বিক ঝুঁকি ও সংকট থেকে এ খাতকে পুনরুদ্ধারে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রেক্ষিতে পর্যটন শিল্পে নিয়োজিত জনশক্তির জন্য প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানব সম্পদ উন্নয়ন, ধরিত্রীর জন্য টেকসই অবকাঠামো, সবুজ রূপান্তর এবং সমৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন, উদ্যোগ ও প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে উৎসাহিত করা অতীব জরুরি। এ প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। এদেশের প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে আলাদা সৌন্দর্য ও অসংখ্য স্বতন্ত্র পর্যটন সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান। এসব অঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পিত উপায়ে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেয়া বাণীতে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পর্যটন শিল্পের যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবন করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই শিল্পের প্রসারে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্য অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে জাতীয় পর্যটন উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে – যাতে টেকসই পর্যটন উন্নয়নের লক্ষ্যে ইকো-ট্যুরিজম, কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম, দায়িত্বশীল পর্যটনকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের কার্যকর উন্নয়ন দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।’
প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
তিনি বলেন, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়-পর্বত, গহীণ অরণ্য, জীব-বৈচিত্র্য, সমুদ্র-সৈকত, নদ-নদী, বৈচিত্রময় আদিবাসী সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনসমূহ, অতিথিপরায়ণ মানুষ অর্থাৎ বিশ্বের যে কোন প্রান্তের যে কোন পর্যটককে আকৃষ্ট করার মত সকল উপকরণই বাংলাদেশে বিদ্যমান। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে স্থানীয় জনসাধারণকে পর্যটন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে টেকসই পর্যটন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৩’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস- ২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভাল’ এর আয়োজন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই উৎসবের উদ্বোধন করেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) ব্যবস্থাপনায় ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিন কুয়াকাটা সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ থাকবে নানা আয়োজন।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।