চট্টগ্রামে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন নাসিমন ভবনের কেয়ারটেকার কাজী মাহমুদ হোসেন। পরে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
মামলার নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন— নুরুল আজিম রনি (৪০), মনোয়ার আলম চৌধুরী নোভেল (৪৩), ওমর খৈয়াম তৈয়ব (৪০), গোবিন্দ দাস (২৫), মোহাম্মদ তুষার (২৫) ও ব্ল্যাক হৃদয় (২৪)। আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় নুরুল আজিম রনিসহ ছয়জনের নামীয় ও অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন জুয়েল দেবের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি চট্টগ্রাম দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট হয়ে দেওয়ান হাট মোড়ের গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। এদিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে নুরুল আজিম রনি ও মনোয়ারুল ইসলাম নোভেলসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জন হাতে থাকা লাঠি সোটা, লোহার, মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে নিয়ে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ বিএনপির পার্টি অফিসের গেট ভাঙচুর করে। পরে সেখানে ঢুকে চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, দরজা ও জানালার কাঁচের গ্লাস ভাঙচুর করে আনুমানিক ৮০ হাজার টাকার জিনিসপত্র ক্ষতি করে। তাছাড়া পার্টি অফিসে সংরক্ষিত এক লক্ষ টাকা মূল্যের একটি লেপটপ লুট করে নিয়ে যায়। এসময় আসামিরা ওমর ফারুক রুবেলসহ অনেককে মারধর করে।
এসময় তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার, ভাংচুরসহ পার্টি অফিসের সামনে অগ্নি সংযোগ এবং কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে পার্টি অফিসের সামনে মূল সড়ক অবরোধ করে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে কিছুক্ষণ পর স্থান ত্যাগ করে।
পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে খবর পেয়ে বিএনপি নেতা মাহবুর রহমান শামীম, মহানগরের আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হোসেন বক্করসহ নেতাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করে।
পরদিন (২০ জুলাই) বিকেলে এ ঘটনায় কেয়ারটেকার কাজী মাহমুদ হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি অসুস্থ জানিয়ে ওসি তদন্ত মামলা গ্রহণ করেনি বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়।
আদালতে দায়ের করা মামলায় বাদীসহ মোট ৯ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীতে কেন্দ্রঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পদযাত্রা শেষে ফেরার পথে বিএনপির একদল নেতাকর্মী নগরীর লালখান বাজার চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করে। এ সময় প্রচারণার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের ১৯ জন আহত হন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি নগরীর কোতোয়ালী থানার নুর আহমদ সড়কে বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন ভাঙচুর করে।
পরে এই ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। হামলার ঘটনায় খুলশী থানার পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ তারা পায়নি বলে জানান কোতোয়ালী থানা পুলিশ।