মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : রাজনীতির বরপুত্র
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
পিতা ও পুত্রের মধ্যে কী সীমাহীন বৈপরীত্য। পিতা ছিলেন মাঠে-ময়দানে, রাজপথ কাঁপানো স্লোগানমুখর এক জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। একদিকে প্রকৃতির মার-রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-জলের অত্যাচার, আর একদিকে পুলিশের মার-লাঠি, রাইফেল, ব্যাটন নিয়ে ছুটে আসা পুলিশ, দুয়ের মাঝে ছিলো মুসলিম লীগের গু-াবাহিনী, এনএসএফ-এর মাস্তান-মাস্লম্যান। এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে করে যে নেতাটির জন্ম হয়েছিলো চট্টগ্রামে-তাঁর নাম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, তিনিই পিতা। তুলনায় বিলাত-ফেরত পুত্রের ভদ্র-ন¤্র, নমনীয়-কমনীয় চেহারা। সাহেবদের কাছ থেকে শিখে এসেছেন রাজনৈতিক শিষ্টাচার, বিয়েও করে নিয়ে এসেছেন একজন মেম; যেমন প্রায় একশো বছর পূর্বে জননেতা দেশহিতৈষী যাত্রামোহন সেনের পুত্র যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত (জেএম সেনগুপ্ত) বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে একজন ইংরেজ দুহিতাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলেন, যিনি পরে নেলী সেনগুপ্তা নামে ভারতবিখ্যাত হন। ত্রিকুমুটধারী জেএমসেনগুপ্ত পাঁচবার কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বঙ্গীয় ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে দেশবাসীর দ্বারা ‘দেশপ্রিয়’ উপাধিত ভূষিত হন। কিন্তু রাঁচীতে অন্তরীণ অবস্থায় অকালে দেহ ত্যাগ করে রাজনীতিতে তিনি কোথায় পৌঁছতে পারতেন দেশবাসীকে সেটা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন।
পাঠক আমাকে মাফ করবেন, মহান ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা, দেশপ্রেমিক, চট্টগ্রামবাসীর প্রিয় ‘ব্যারিস্টার সাহেব’, যিনি বুলক ব্রাদার্সের জাহাজ ধর্মঘট, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট, কুতুবদিয়ায় নির্বাসিত রাজবন্দীদের মামলা এবং বিপ্লবীদের আরো কিছু চাঞ্চল্যকর মামলা পরিচালনা করে অসামান্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে মহিউদ্দিন-পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-এর তুলনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। দেশপ্রিয় অবিভক্ত বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জননেতা, আর মাননীয় সাংসদ ও উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল-এর রাজনৈতিক জীবনের সোনালী প্রভাত মাত্র সূচিত হয়েছে।
মহিউদ্দিন-পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কথা বলছিলাম। পিতা জীবনে বহু কীর্তি স্থাপন করে অমর হয়ে আছেন চট্টগ্রামের ইতিহাসে; পুত্রের সম্মুখে পড়ে আছে বিস্তৃত সময়; যে সময়ে তিনিও অনেক কিছু করার, অনেক কীর্তি স্থাপন করে পিতার রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ পাবেন। হয়তো পিতার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগও আসবে তাঁর সামনে। যেমন যাত্রা মোহন সেনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন পুত্র দেশপ্রিয়।
তবে ওই যে ÔMorning shows the day’ বলে যে কথাটা চালু আছে, সেটা নওফেলের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ইংল্যান্ডে তিনি যখন পড়াশোনা করতে যান, তখন তিনি নিতান্তই কিশোর। কিন্তু যখন দেশে ফেরেন, তখন রীতিমতো যুবক। এই দীর্ঘ সময় বিলাতে কাটিয়েও স্বদেশ ও স্বজাতির কথা তিনি বিস্মৃত হন নি। পিতার রাজনৈতিক সংগ্রাম মনে রেখেছেন তিনি। তাঁর রাজনীতি ও দলকে মনে মনে নিজের রাজনীতি ও দল বলে মেনে নিয়েছেন। পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে নওফেল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ¯্রােতধারায় মিশে যান। বিজয় টিভি পরিচালনার জন্য তাঁকে ঢাকায় থাকতে হচ্ছিলো। সেই সুবাদে তিনি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। নেত্রীর ¯েœহে ও পরিচর্যায় নওফেলের রাজনৈতিক জীবন বর্ধিত হতে থাকে। তাঁকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির বলয়ে টেনে নেন নেত্রী। এর মধ্য পিতার মৃত্যু ঘটলে চট্টগ্রামের রাজনীতিতেও যুক্ত হওয়ার জন্য নওফেলের প্রতি আমন্ত্রণ আসে। চট্টগ্রাম তাঁর শহর, পিতার কর্মক্ষেত্র, তাকে নিজের কর্মক্ষেত্র করে নেবার অনেক দিনের সাধ পূরণ হলো নওফেলের। নির্বাচন আসলো। নেত্রী তাঁকে কোতোয়ালী আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট দিলেন। নওফেল সাংসদ হলেন। তারপর কেবিনেট গঠনের সময় নেত্রী তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে এইসব কীর্তি স্থাপন করতে পারাও কম কৃতিত্বের কথা নয়।
রাজনীতিতে সাফল্য ও সিদ্ধির জন্য যা’ দরকার যেমন লেখাপড়া, দলের নেতা, কর্মী ও জনগণের আস্থা, সাংগঠনিক দক্ষতা, ত্যাগ, রাজনীতিতে সময় ও শ্রম দেয়াÑ এসব গুণ নওফেলের আছে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার ফলে তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাও আছে।
আর একজন রাজনীতিকের জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো সংগ্রামী মনোভাব। অন্যায়, দুর্নীতি এবং জনগণের সমস্যা ও অভাব-অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করার মধ্য দিয়ে একজন রাজনীতিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতিকে যদি একটি শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে হয়, তাহলে সেটা হবে আন্দোলন বা সংগ্রাম। সারাজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাঁকে কখনো আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যায় নি। ন্যায়ের প্রশ্নে, আদর্শের প্রশ্নে তিনি অটল হিমাদ্রির মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন। এক্ষেত্রে তিনি কখনো আপস করেন নি। রিক্সাঅলা, ঠেলাগাড়িঅলা, মেথর, মুচি, দোকানদার, কুলি, শ্রমিক, বস্তিবাসী প্রত্যেকের জন্য তিনি আন্দোলন করেছেন। তিনি বলতেন ‘সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না’। সেজন্য আঙুল বাঁকা করতেন, ঘাড় ত্যাড়া করে রাখতেন। পিতার এই সংগ্রামী মানসিকতা ও আগুনে মনোভাব নওফেলকে আত্মস্থ করতে হবে।
নওফেলকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি। তাঁর চরিত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি আশ্চর্য সংহতি ও পরিমিতিবোধ, হিসেবী চালচলন; মাপা কথাবার্তার মানুষ তিনি। কখনো ধৈর্যহারা হয়ে সংযমের বাঁধ ভেঙে অসংযত কথা বলেন না। এমন কোন কথা বলেন যা অনাবশ্যক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। বেফাঁস মন্তব্য করে তাঁকে কখনো বিব্রত হতে হয়নি। এতদিন রাজনীতি করছেন নওফেল, কিন্তু কখনো কারো সঙ্গে অপ্রীতিকর বিতর্কে জড়াতে দেখিনি।
রাজনীতি যখন অর্থের বৃত্তে বন্দী; চাঁদাবাজি, তোলাবাজি, ঠিকাদারি, কমিশন, দালালি, অস্ত্র, পেশীশক্তি, মাস্তানি যখন রাজনীতির প্রধান অনুষঙ্গ, তখন নওফেল আদর্শের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে কঠিন পথটি বেছে নিয়েছেন। বিপ্রতীপ সময়ে উজান ¯্রােতে লগি ঠেলে বৈঠা বেয়ে নওফেলের নৌকা কতদূর যেতে পারে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। নওফেলের জন্য শুভ কামনা।
তবে খুব খারাপ সময়ে রাজনীতির বন্ধুর পথে তিনি যাত্রা করেছেন। তাঁর দল ক্ষমতায়, তাঁর দলের নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নগর পিতা-তাতে মনে হতে পারে তিনি সুসময়ে রাজনীতির মাঠে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু দলের অভ্যস্তরে নীতি-আদর্শের চর্চা কী তিনি দেখতে পাচ্ছেন? পদের জন্য, ক্ষমতার জন্য মারামারি হয়, কই আদর্শের জন্য তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখি না। শিবিরের ছেলেরা একচেটিয়া কোচিং, প্রাইভেট পড়িয়ে ছাত্র পিকআপ করে, তারপর তাদেরকে মৌলবাদী জঙ্গিবাদী বানায়। স্বাস্থ্য, সেবাখাতও তাদের দখলে। কেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা এসব করতে পারে না। তারা বিতর্ক, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা করে ট্যালেন্ট হান্ট করতে পারেন না?
দেশ গঠনমূলক কাজের মাধ্যমেও একটি দল জনগণের হৃদয়ে আসন গেড়ে বসতে পারে। জনজীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা উদ্যোগী হতে পারেন। যেমন আগ্রাবাদ সিডিএ’র জলাবদ্ধতা সমস্যা, বর্ষায় শহরর বিভিন্ন স্থানে জলজট সমস্যা, পাহাড় ধসে প্রাণহানি, ভূমিকম্প ও অগ্নিকা-ে মানবিক বিপর্যয়-এসব ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ভলান্টিয়ার করতে পারে, মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমাদের দেশে এক সময় ছাত্ররা স্বেচ্ছাশ্রমে উন্নয়নমূলক অনেক কাজে অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ভাঙা রাস্তাঘাট ও সেতু সংস্কার, হাজামজা খাল খনন ও পুনঃখনন, পুকুর-দিঘির পঙ্কোদ্ধার করেছে। নিকট অতীতে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন কা-ে যোগদান করতে দেখা যায়। সুতরাং ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে দেশ গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করলে লাভ বৈ ক্ষতি তো নেই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনেক অনুসারী দেখতে পাই। কিন্তু তারা কি চৌধুরী সাহেবের আদর্শ অনুসরণ করেন?
মাননীয় মন্ত্রী নওফেল সাহেব, আপনাকে কি কেউ বলেছেন যে ৯১-এর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে নিহত হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ যখন পতেঙ্গা, কাটগড়, হালিশহর, বন্দরটিলা, সাইটপাড়া, কাট্টলী প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলো, শেয়াল আর শকুন কুরে কুরে খাচ্ছিলো মানুষের হৃদয়, পঁচে ফুলে ফেঁপে ওঠা লাশের দুর্গন্ধে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিলো, তখন আপনার শ্রদ্ধেয় পিতা জনাব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে নিজ হাতে লাশ ধুইয়ে গোসল করিয়ে কাফন পড়িয়ে নিজে খাটিয়া বহন করে কবরস্থানে দাফন করেছেন।
তারপর সব লাশের দাফন কাফন যখন হয়ে গেলো, তখন দেখা দিলো ডায়রিয়া, মহামারি আকারে। মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথমে দারুল ফজল মার্কেটে আওয়ামী লীগ অফিসে স্যালাইন প্রকল্প চালু করলেন, তাতে সংকুলান না হওয়ায় মুসলিম হল ভাড়া করে সেখানে নিয়ে গেলেন। বন্দরটিলায় নৌবাহিনীর গুলিতে স্থানীরা লোক মারা গেরে মহিউদ্দিন চৌধুরী সেখানে ছুটে যান। জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ ও শোকের অংশীদার হয়ে নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পিতা-পুত্রের অমিলের কথা বলেছি, এবার মিলের কথা বলি। পিতা আদর্শের রাজনীতি করতেন, পুত্রও তাই করেন। পিতা বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন অগ্রনায়ক, পুত্রও নিজেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সমর্পিত করেছেন। পিতা খাঁটি বাঙালি ও খাঁটি চাটগাঁইয়া ছিলেন, পুত্রও তাই। পিতা রাজনীতির জন্য বেশি লেখাপড়া করতে পারেন নি। কিন্তু লেখাপড়ার মর্ম বুঝতেন, জ্ঞানী গুণীদের কদর করতেন। পিতা যখন রাজনীতিতে যোগ দেন, সেই সময় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে স্বশিক্ষিত নেতা ছিলেন জহুর আহমদ চৌধুরী। তিনি প্রচুর বই পড়তেন, জ্ঞানচর্চা করতেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী এই জ্ঞানী নেতাটিকেই তাঁর পরম ‘মুরশিদ’ বলে মনে মনে মেনে নিলেন। জ্ঞানীগুণীর সঙ্গ পছন্দ করতেন বলেই মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর শিক্ষক সিটি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম চৌধুরীর ন্যাওটা ছিলেন। মহাজ্ঞানী রেজাউল করিম সাহেবও বেয়ারা টাইপের গাট্টা গোট্টা ছাত্রটিকে পরম ¯েœহ ও আদরে মানুষ করতে থাকেন। রেজাউল করিম সাহেবের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার অফিযোগ ছিলো। দেশ স্বাধীন হলে তাঁকে সেই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাঁর ছাত্র মহিউদ্দিন চৌধুরী, সুলতান-কামালরা কোর্ট বিল্ডিংয়ে ডিসি অফিসে চড়াও হয়ে এমন হাঙ্গামা শুরু করেন যে, শেষ পর্যন্ত রেজাউল করিম সাহেবকে মুক্তি দিয়ে প্রশাসন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর দুর্বলতার আরেকটা প্রমাণ দিই। দেশ স্বাধীন হলে যখন কেউ কেউ গুদাম ভাঙা, দোকানপাট লুটপাটে মেতে ওঠে, মহিউদ্দিন চৌধুরী তখন গল্পকার হেনা ইসলাম, কবি স্বপন দত্ত, লেখক প্রদীপ খাস্তগীর প্রমুখকে নিয়ে নালাপাড়া থেকে ‘আন্দোলন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার পর মহিউদ্দিন চৌধুরী শিক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিপ্লব সাধন করেন। প্রথম বিপ্লব করেছিলেন নূর আহমদ চেয়ারম্যান। মহিউদ্দিন চৌধুরী সব স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করেন এবং ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার প্রতি, জ্ঞানের প্রতি পিতার দুর্মর আকর্ষণের কথা বললাম। পুত্রের কথা কি বলবো। পুত্র তো নিজেই জ্ঞানী।
তবে স্বভাবে পুত্র সমিল পয়ার, পিতা অমিত্রাক্ষর। পিতা সোডা ওয়াটারের মতো ফস করে জ্বলে ওঠে দপ করে নিভে যান। পুত্র গম্ভীর, স্বভাবে তাঁর সমুদ্রের অতলান্ত গভীরতা; পিতা ছিলেন ‘অহমৎু ুড়ঁহম সধহ’, পুত্র চড়ষরঃব ঢ়ড়ষরংযবফ মবহঃষবসধহ. পুত্রের এত গবধংঁৎবফ, হিসেবি চাল যে, কখনো পা ফস্কাতে দেখলাম না। পিতার জীবনে অনেক চড়াই উতরাই, নরম- গরম ব্যাপার ছিলো। পুত্র সম্ভবত মায়ের স্বভাব পেয়েছেন। শৈশবেই তো মাকে হারান নওফেল, কিন্তু মাতৃজঠরে বড় হওয়া নওফেলের ধমনীতে সম্ভবত মাতৃরক্তের ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। নওফেলের মামা ইঞ্জিনিয়ার তাহের সাহেবকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, মিশেছি। তাঁকে আমি খুব সজ্জন, অমায়িক এবং নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পেয়েছি। তাঁর ভাগিনার মধ্যেও সেই ভদ্রলোকি কেতা দেখতে পাচ্ছি।
লেখাটা শেষ করতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ আমার মানসপটে মান্নান ভাইর ছবি ভেসে উঠলো। নওফেলের মধ্যে আমি মান্নান ভাইর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। মান্নান ভাইর রাজনীতির উত্তরাধিকারী ছিলো না। এখন তাঁর শিষ্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘরে তাঁর রাজনীতির একজন উত্তরসূরি সম্ভবত দেখতে পাচ্ছি।
জয়তু মান্নান ভাই, জয়তু মহিউদ্দিন ভাই, জয়তু মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।