বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ, ১৪৩১, ১৫ রজব, ১৪৪৬

আমানত হল থেকে পার্লামেন্টজাফরের অসামান্য কৃতিত্ব : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

জাফর আলম-চকরিয়া থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য। জাফরের জীবনে এটাই একমাত্র কৃতিত্ব নয়। তাঁর আরো কৃতিত্ব হলো-তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চকরিয়া পৌরসভার মেয়রও ছিলেন। অন্যদিকে দলীয় রাজনীতিতেও তিনি চকরিয়ার নেতৃত্ব থেকে জেলার নেতৃপদে সমাসীন হয়েছেন। তিনি একটির পর একটি সোপান অতিক্রম করে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগৈর শীর্ষস্তরে উপনীত হয়েছেন। তিনি এখন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জাফরের আমানত হলের বন্ধুরা, সিনিয়র, নেতা, মুরুব্বি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সতীর্থরা-কেউ কল্পনায়ও আনতে পারেনি জাফর এভাবে সবাইকে ছাড়িয়ে এত উপরে উঠে যাবে। আমার মনে পড়ছে শচিন টেন্ডুলকারের কথা। শচিন যেদিন ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে একটি ছক্কা হাঁকালেন, আমি ধারাভাষ্য শুনছিলাম-তখন ভাষ্যকার বলছিলেন-আজ এই লর্ডসে আমাদের সবার চেয়ে যে ছোট, সেই ছোট মানুষটি সবার মাথার ওপর দিয়ে বল সীমানার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সবার চেয়ে বড় হয়ে গেলেন। আহা শচিন আর জাফরের কত মিল ! একজন ক্রিকেটের মাস্টার ব্যাটসম্যান, আরেকজন রাজনীতির পাকা খেলোয়াড়। শচিনের মতোই জাফর আজ আমাদের সকল পরিচিতি জনকে ছাপিয়ে ছাড়িয়ে আমাদের মাথার তাজ হয়ে বসে গেলেন।
জাফরের কৃতিত্বে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠেছে। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দিনগুলির কথা।
আমি জানি, আরো অনেকেই জাফরের জন্য গর্বিত- আহমদ শরীফ মনীর, সাহাবুদ্দিন সাথী, মজহারুল হক শাহ, অধ্যাপক দিলীপ কান্তি দাশ, আ জ ম ছাদেক, ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম, ড. তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক ইমদাদুল হক, সাঈদ আহমদ, রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী (আমেরিকা প্রবাসী), অধ্যাপক মকবুল আহমদ, চেয়ারম্যান মোস্তাকিমুল হায়দার খান, আমিনুর রসুল, মৃণাল কুসুম বড়–য়া, স.ম. নজরুল ইসলাম, মাহবুব আলম (চেম্বার সভাপতি), আজিজ উদ্দিন হায়দার, জানে আলম, মুজতবা কামাল, মোহাম্মদ হোসেন, মোশাররফ হোসেন, আবদুল মতিন, আশীষ চৌধুরী (অধুনা লন্ডন প্রবাসী), অমিয় শংকর বর্মণ, নাসিরুল হক নবাব, ছালে জহুর মোহাম্মদ বাহাদুর, অধ্যাপক অ্যাডভোকেট বিকাশ রঞ্জন ধর, অধ্যক্ষ শাহ আলম, অধ্যক্ষ দীননাথ দে, অধ্যাপক ইলিয়াস চৌধুরী, মুশতাক (ব্যাংকার), নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক মনসুর উল আমিন চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মুজিবুর রহমান স্বপন, মুনিরুল ইসলাম লতিফি, অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম লতিফি, অজয় রতন বড়–য়া, অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান খান, অ্যাডভোকেট কফিলউদ্দিন চৌধুরী, ব্যাংকার নূর উল আরশাদ চৌধুরী, মুনির, স.ম. জাকারিয়া, শওকত আলী টিপু, মনজরুল হক চৌধুরী বাবুল, হাসিব খান, অধ্যক্ষ আ.ক.ম. গিয়াসউদ্দিন, রফিক, অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, নুরুল আফসার, আসহাবউদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, ফরিদুল আলম, ক্যংজরী, মঙকিউ, মেজবাহউদ্দিন টুলু, আবদুল মাবুদ, দেলোয়ার মোহাম্মদ ফারুক, ফরিদুল ইসলাম সাবু, আখতার হোসেন, মেজবাহউদ্দিন, ওবায়েদ, মেজবাহ উদ্দিন মনু, মোবারক হোসেন, সেলিম কলি, মনেয়ার হোসেন মঞ্জু, আবুল কাশেম, হুমায়ুন কবির, লিটন, আজিজ আহমদ, ফখরুদ্দিন, বাকের হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, দিবাকর বড়–য়া, দীপংকর বড়–য়া, অংথিং মং, মং প্রæ মং চৌধুরী (শাহজালাল হল), দিল মোহাম্মদ, সাদেক চৌধুরী, শওকত, আবু সুফিয়ান, গোলাম রহমান, এমনি আরো কত ভুলে যাওয়া বন্ধু, সহকর্মী নিশ্চয়ই জাফরের গর্বে গর্বিত। আবুল কাশেম, রায়হানুল হক নিশ্চয়ই ওপার থেকে প্রসন্ন চিত্তে হাসিমুখে জাফরকে আশির্বাদ করছে।
৭৮ সালে জাফর যখন আমানত হলের আবাসিক হয়ে হলে উঠলো, সেদিন কেউ কি ভাবতে পেরেছিলো ছোটখাট গড়নের এই যে পুঁচকে ছেলেটি আজ আমানত হলে প্রবেশ করলো, সেই ছেলে ক্রমান্বয়ে আমানত হল, বিশ্ববিদ্যালয়, চকরিয়া এবং কক্সাবাজার জেলার নেতা হবে। দৈহিক উচ্চতায় জাফর খাটো, সেজন্য তার নাম হয়ে গেলো ‘বাইট্টা জাফর’। দৈহিক উচ্চতায় ঊনতাটুকু জাফর পুষিয়ে নিয়েছিলো বুকের ছাতি ফুলিয়ে, মনোবল দিয়ে তেজস্বিতা দিয়ে। জাফরের ছোট্ট বুকে এত সাহস কিভাবে জমা হয়ে ছিলো ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। এই সাহসই জাফরকে রাজনীতিতে এত উচ্চতায় উপনীত হতে সাহায্য করেছে। জাফর অসম সাহসী একজন মানুষ। ছাত্রজীবন থেকে আমি তার সাহস দেখে আসছি। সত্য কথা বলার জন্য তার কখনো সাহসের অভাব হয় না। বিরুদ্ধ পক্ষ যত বড় শক্তিশালীই হউক, জাফর রুখে দাঁড়াবেই।
জাফরও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলো, আমিও পরীক্ষা দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। ঠাঁই নিলাম আমানত হলে। কাশেমই ব্যবস্থা করলো। অবশ্য আমি ঘুরে ঘুরে এক হল থেকে আরেক হল কখনো এফ রহমান হলে রেজাউল করিম চৌধুরী, অধ্যাপক মকবুল আহমদ, বজলী, আলাউল হলে রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, মনজুর উল আমিন চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দীতে মোশাররফ, আমিনুল রসুল, শাহজালালে অধ্যাপক ইমদাদুল হক, সাঈদ ভাই, এঁদের সকলের কাছে যেতাম এবং কোন কোন সময় কারো রুমে থেকেও যেতাম।
আমানত হলে আমি কফিলের ৪০৮ নং রুমে থাকতাম। সেখানে পরে ইমাম শরীফও মনে হয় থাকা শুরু করেছিলো। জাফর ৪০৬ ও ৪০৮ নং রুমে পালা করে থাকতো। জাফরের পর গিয়াসও এসে আমানতে ওঠে। আমানতের সম্মুখে কাশেমের চায়ের দোকান ছিলো। দোকানের সামনে সন্ধ্যায় চেয়ার বিছিয়ে আমি রাজনৈতিক ক্লাশ চালু করেছিলাম। কাশেম, রায়হান, জানে আলম, অজয়, নাসিরুল হক নবাব, জানে আলম, আমিনুর রসুল, আতিক, আশীষ, জাফর, কফিল, ইমাম শরীফ, আসহাবউদ্দিনরা ছিলো সেই ক্লাশের উৎসাহী শ্রোতা। আরো অনেক ছাত্র ক্লাশে ভিড় করতো, তাদের নাম ভুলে গেছি বলে আমি দুঃখিত।
আমাদের সঙ্গে থেকে জাফর হয়তো তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির পুঁজি সংগ্রহ করছিলেন। তখন থেকে রাজনীতিটাকে তিনি এত ভালোভাবে আত্মস্থ করেছিলেন যে, পরে যখন চকরিয়া গিয়ে তিনি এলাকার রাজনীতি শুরু করেন, তখন জাফর সিজনড প্লেয়ার। রাজনীতিতে জাফরের অগ্রগতি বিস্ময়কর। আমার মনে হয়, এখন যদি রাজনীতি করতে চাই, তাহলে জাফরের কাছ থেকেই আমাকে শিখতে হবে।
মনে পড়ে একবার আমি, সাথী ভাই, কাশেম, জানে আলম-আমরা চকরিয়ায় জাফরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিলো জাফর ও তাঁর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা। যাতে ওকে আরো গভীরভাবে রাজনীতিতে টেনে আনতে পারি। গিয়াসের বাড়ি এবং ওর বাবার বইয়ের দোকানেও গেছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্র সংসদ সদস্য হলেন, একজন মিলন, তার পুরো নাম আমি ভুলে গেছি। অপরজন জাফর আলম, যাঁকে নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম। মিলন বিপরীত আদর্শে গা ভাসিয়ে দিয়ে এমপি হয়েছেন; জাফর কিন্তু সম আদর্শে অবগাহন করে এমপি হয়ে গেলেন। এমপি হওয়ার জন্য জাফরকে আদর্শচ্যুত হতে হয়নি-এখানেই জাফরের শ্রেষ্ঠত্ব। আমার টুপিখোলা অভিনন্দন জাফর আপনাকে।
শেষ কথা : আমানতের অনেক বন্ধু ইতিমধ্যে ইহধাম ত্যাগ করেছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদেরকে নিয়ে কি একটা গেট টুগেদার করা যায়? একমাত্র জাফরই এটা করতে পারেন। তিনি কি ভেবে দেখবেন ?

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আরাভকে চিনি না,  প্রাথমিক পরিচয়ও নাই: বেনজীর

দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কীভাবে আরাভ ঢাকায় পুলিশ হত্যা করে দেশের বাইরে গেল, কীভাবে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে দুবাই গেল,

বিস্তারিত »

চসিকের মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা প্রসঙ্গে অল্প বিস্তর : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

সিটি মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৬২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের একটি

বিস্তারিত »

মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন অপারেশন এবং সি-ইন-সি স্পেশাল ফেরদৌস হাফিজ খান রুমু : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

মধ্য আগস্টে দুনিয়া কাঁপানো অপারেশন জ্যাকপটের পর অক্টোবরে এমনি আরেকটি ঘটনায় হানাদার কবলিত চট্টগ্রাম সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠেছিলো। সেই ঘটনাটি হলো মদুনাঘাট পাওয়ার স্টেশন ধ্বংস,

বিস্তারিত »

বখতিয়ারুল আলম : একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখ : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

ষাটের দশক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি অগ্নিগর্ভ সময়। সংগ্রামী ছাত্র সমাজই ওই দশকের নায়ক। বায়ান্নে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতের রক্তস্রোতে সিক্ত বাংলার পালল মৃত্তিকায়

বিস্তারিত »

মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের দৃষ্টি আকর্ষণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধ’ : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

শিক্ষা বিষয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কাকে বলবো, কোথায় বলবো বুঝতে পারছিলাম না। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রেস কনফারেন্স করবো। সেজন্য ইঞ্জিনিয়ার হারুন ভাই, ডা. মাহফুজ

বিস্তারিত »

চট্টগ্রামের সন্তান রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত এখন বিশ্বসেরা নিউরোসার্জন : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

চিকিৎসা শাস্ত্রে চট্টগ্রামের অবদান ন্যূন নয়। আলোপ্যাথির আগে আয়ুর্বেদ যুগেও চট্টগ্রামে এমন দু’একজন দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিভাবান চিকিৎসক আবির্ভূত হয়েছিলেন, যাদেরকে শুধু কবিরাজ, বৈদ্য বা হেকিম পরিচয়ে

বিস্তারিত »
বঙ্গবন্ধুর কোলে শামীমা হারুন লুবনা (ইনসেটে বর্তমান ছবি)

পিতার পথেই হাঁটছেন হারুনপুত্রী : নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

শামীমা হারুন লুবনা-এই সময়ের সাহসী নেত্রী, যিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগকে তারুণ্যের শক্তিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে উজ্জীবিত করে তুলেছেন। তাঁর নিজের শিক্ষাগত

বিস্তারিত »

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : রাজনীতির বরপুত্র নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : রাজনীতির বরপুত্র নাসিরুদ্দিন চৌধুরী       পিতা ও পুত্রের মধ্যে কী সীমাহীন বৈপরীত্য। পিতা ছিলেন মাঠে-ময়দানে, রাজপথ কাঁপানো স্লোগানমুখর

বিস্তারিত »