মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ৩ আষাঢ়, ১৪৩২, ২০ জিলহজ, ১৪৪৬

বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মাতাল ঝড়ে মনিরুজ্জামান মন্টু এক সাহসী নাবিক

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

গত শতাব্দির উনসত্তর, সত্তর, একাত্তরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মাতাল ঝড়ে বাংলাদেশ লÐভÐ হয়ে যাচ্ছিলো, সেই ঝড়ো হাওয়ার দিনে কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু ছিলেন, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস (সাধারণ সম্পাদক)। মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তিনি এবং তাঁর ভিপি জালাল উদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তিনি ষাটের দশকের শেষ দিকে চট্টগ্রামের একজন সম্মুখ সারির ছাত্রনেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ভারতে যান এবং হরিণা ক্যাম্পে এক সেক্টরের সদর দপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকায় সারাক্ষণ তৎপর ছিলেন।
কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার পাইকপাড়া গ্রামে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম কাজী বদিউজ্জামান ও মাতা মরহুমা নূরজাহান বেগম।
তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের বিপর্যয় শুরু হয় তৎকালীন আইয়ুব-মোনায়মের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন এন, এস, এফ এর মারমুখী কর্মকাÐের ফলে। তারা প্রতিদিন ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন করতে লাগল। কলেজ ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মী হতাশ ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ল। ছাত্রলীগের এই চরম বিপর্যয়ের সময় কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু চট্টগ্রাম কলেজে তার বন্ধুদের নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে এন,এস,এফ এর সন্ত্রাসী বাহিনীকে মোকাবেলা করে ছাত্রলীগের অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে অটুট রাখার জন্য যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এ ভর্তি হন এবং এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে গঠিত ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের আহŸায়ক, ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রচার সম্পাদক, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রচার সম্পাদক, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর চট্টগ্রাম মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ৬ দফা আন্দোলনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে স্বাধীনতার লক্ষ্যে গঠিত ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াসের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের এবং যাত্রিকের একজন সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও ১৯৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচনী দল যাত্রিকের মনোনয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে ৬ দফা ভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রতিরোধ আন্দোলনে উদ্ভূত গণঅভ্যুত্থানে তিনি নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
কাজী মনিরুজ্জামান মন্টু ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এক দফার প্রবক্তা চট্টল শার্দূল জননেতা এম,এ, আজিজের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে সারা চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারণায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের প্রথম থেকেই চট্টগ্রামের বিহারী অধ্যুষিত এলাকায় বাঙালি নিধন শুরু হয়। হাজারী গলিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের অফিস ছিলো। প্রতিদিন ছাত্রলীগ অফিসে খবর আসতে লাগল বিহারীরা গণহারে বাঙালিদেরকে হত্যা করছে। আর ছাত্রলীগ অফিস থেকে বিভিন্নস্থানে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, নিজেদের রক্ষা করার, বিহারীদের প্রতিরোধ করার এবং বিহারীদের সাথে লড়াই করার এবং প্রয়োজনবোধে সশস্ত্রভাবে তাদের মোকাবেলা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছিল। আর এই হাজারী গলিতে মন্টুদের বাসা এবং মূল রাস্তার পাশেই জেলা আওয়ামী লীগের অফিস। ফলে এখানে গড়ে উঠে প্রতিরোধের ঘাঁটি। সমস্ত নির্দেশনা, কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণ এখান থেকেই হতে লাগল। এই সময় জনাব মন্টু মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ছাত্র যুবক এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর লোকজন নিয়ে সংগঠিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেন। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পরে চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাব এবং অস্ত্র আমদানীকারক মানজারাং কোম্পানির গুদাম হতে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।
২৫ মার্চে কালো রাত্রে পাকিস্তানিরা হানা দেয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনারা স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্রোহ করে। তৎকালীন সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপপ্রধান কমান্ডার প্রয়াত মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। ইপিআর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সিনিয়র বাঙালি কর্মকর্তা ছিলেন এডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (বর্তমানে মেজর (অব.) সাংসদ বীর উত্তম)।
মেজর রফিক অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র জনতার সাথে বাঙালি নিধনযজ্ঞে অস্ত্রবহনকারী জাহাজ সোয়াত অবরোধে অংশগ্রহণ করেন এবং ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদারের সাথে সরাসরি আক্রমণের পর চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র সহ চট্টগ্রাম শহর ইপিআর বাহিনীকে নিয়ে দখল করেন।
সেই সময় সামরিক নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৎকালীন স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারীগণ তাঁকে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে পরিচালনার আহŸান জানালে তিনি বলেন-তার সিনিয়র অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান আছেন, এজন্য তিনি সেই সময়ে সর্বজ্যেষ্ঠ বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব অর্পণের জন্য সংগ্রাম পরিষদের কাছে অনুরোধ করেন।
উক্ত সময়ে জিয়াউর রহমান ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে কালুরঘাট অঞ্চলে অবস্থান করেন। রফিকুল ইসলামের অনুরোধে সংগ্রাম পরিষদ জিয়াউর রহমানকে চিঠির মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করার জন্য আহŸান করেন।
সংগ্রাম পরিষদের ঐ চিঠির বাহক হিসেবে কাজী মনিরুজ্জামান তার তিনজন সঙ্গী সহকারে বোয়ালখালী করলডাঙ্গায় অবস্থানরত জিয়াউর রহমানকে চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
উক্ত চিঠি পাওয়ার পর মেজর জিয়াউর রহমান তার বাহিনী নিয়ে চট্টগ্রাম শহর অভিমুখে যাত্রা করেন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্মিলিত বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। সেই সময় হতে জিয়াউর রহমান তাকে সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক বাহিনী নিয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবে পরবর্তীকালে নতুন ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনার জন্য ইনডেকশন ইনচার্জ এর দায়িত্ব দেন। এ দায়িত্ব ’৭১ এর জুন মাস পর্যন্ত সফলভাবে পালন করেন জনাব মন্টু।
ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ মুজিব নগর হতে আগরতলা এসে তাঁকে মুজিব নগর সরকারের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দানের নিমিত্তে কলকাতা নিয়ে যান। তিনি কিছুকাল কলকাতা অবস্থান করেন, কিন্তু উক্ত জায়গা হতে চট্টগ্রাম অঞ্চল অনেক দূরে এবং চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগের অভাব অনুভব হওয়াতে তিনি আগরতলায় ফিরে আসেন।
আগরতলায় ফিরে আসার পর তৎকালীন মুজিব বাহিনী (বিএলএফ) এর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মণি কাজী মনিরুজ্জামান মন্টুকে ত্রিপুরার উদয়পুর জেলার (বিএলএফ) তেপানিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার/প্রধান নিয়োগ করেন। জুলাই হতে নভেম্বর পর্যন্ত তিনি উক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
উক্ত সময়ে তিনি শ্রীধরভিলা ক্যাম্প, কলেজটিলা ক্যাম্প, গøাস ফ্যাক্টরি ক্যাম্প এবং এন পি সি সি রেস্ট হাউসে অবস্থিত নেতা ও কর্মীদের সাথে বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কাজে জড়িত ছিলেন। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, তোফায়েল আহমদ, ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী, ডাকসুর সহসভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুছ মাখন, তৎকালীন সাংসদ ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল, তৎকালীন দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী, তৎকালীন সাংসদ ও সাব জোনাল চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের (বিএলএফ) উপপ্রধান ও পরবর্তীকালে শ্রমমন্ত্রী এম.এ মান্নান, সাংসদ মরহুম ক্যাপ্টেন সুজাত আলী, নুরুল হক এমপি (নোয়াখালী), তৎকালীন সাংসদ মির্জা আবু মনসুর, তৎকালীন এম.পি শরণার্থী বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল হারুন, মুজিব নগর সরকারের তথ্য ও প্রচার বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক খালেদ-এদের সান্নিধ্যে কাজ করার সুযোগ পান। সাংসদ তালেব আলী, জয়নাল হাজারী, মুজিব বাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার থাকাকালে নোয়াখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ল²ীপুর জেলার মোশারফ, একরামুল হক, সিলেটের চঞ্চল ভাই, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সাবেক মন্ত্রী হুমায়ুন, বোরহান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এমরান, আওয়ামী লীগের নেতা কুমিল্লার বাহার উদ্দিন, চাঁদপুরের নেভাল শমসের সহ অনেক ব্যক্তিত্বের সাথে চট্টগ্রামের সাবেক চাকসু ভিপি ফজলুল হক, প্রবীণ নেতা এস.এম ইউসুফ, ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহীম, তৎকালীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা প্রধান ও বাস্তুশিল্পী গ্রæপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমদ, তৎকালীন ছাত্রনেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তিনি কাজ করেন।
২৬ মার্চ চট্টগ্রামে প্রতিরোধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই সময় কাজী মনিরুজ্জামান মন্টুর অগ্রগামী ভূমিকার কথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে উল্লেখিত থাকবে। ৭১ এর ২৫ মার্চ রাত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপর মাইক রিকশায় বেঁধে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করতে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
১১ এপ্রিল কালুরঘাট সেতুর যুদ্ধ অবসানের পর এতদঞ্চলের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয় রামগড়ে। মেজর জিয়াউর রহমান উক্ত অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা আওয়াী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ হান্নান মুজিব নগর সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ও উপদেষ্টা ছিলেন।
উক্ত সময়ে জিয়াউর রহমান এবং এম.এ হান্নান, কাজী মনিরুজ্জামানকে ফেনী ও বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার নেতৃবৃন্দের নিকট মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য বিশেষ বাণী দিয়ে প্রেরণ করেন । তিনি উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য প্রথমবারের মতো তৎকালীন বাংলাদেশে সঙ্গীসাথী সহ ভারতের বিলুনিয়া বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে আগরতলায় যান। তৎকালীন সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম এম আর সিদ্দিকী দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মুজিব নগর সরকারের প্রধান নির্বাহী ছিলেন এবং তাঁর কাছে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও সেক্টরের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি অবহিত করেন। উক্ত সময়ে আগরতলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃন্দের ও তৎকালীন ২ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশারফের সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের সাবরুম অঞ্চল হয়ে রামগড়ে সেক্টর হেডকোয়ার্টারে বিশেষ তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করেন।
২ মার্চ রামগড়ের পতনের পরে ভারতের হরিনা অঞ্চলে সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থানান্তরিত হয়। এ সময় তিনি যেসব সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা হলেন-২ নং সেক্টরের তৎকালীন অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর মরহুম হুদা, মেজর জাফর ইমাম, তৎকালীন লে: কর্ণেল (অব.), তৎকালীন ৩ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক বর্তমানে (অব.) মেজর জেনারেল সি আর দত্ত সহ অন্যান্য ৩, ৪ সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর স্বল্প সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে ১১ বিএসএফ বগাফা ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়।
প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে ২ মে রামগড়ে হেডকোয়ার্টার পতন হওয়ার পর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ভারতের হরিণায় স্থানান্তরিত হয়। হরিনা যাওয়ার পর তাঁকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ইনডেকশন ইনচার্জের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
উক্ত সময়ে যে সকল সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তারা হলেন-
১) সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন মেজর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান (বিউ)
২) তৎকালীন মেজর লে: জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী।
৩) তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেন্টেট সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ (বিউ)
৪) তৎকালীন ক্যাপ্টেন সাংসদ কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর উত্তম)
৫) তৎকালীন পাইলট অফিসার (অব.) উইং কমান্ডার সাখাওয়াত হোসেন।
৬) তৎকালীন ক্যাপ্টেন মেজর (অব.) এনামুল হক (টাইগার এনাম)
৭) তৎকালীন ক্যাপ্টেন লে. কর্নেল মাহফুজুর রহমান
৮) তৎকালীন ক্যাপ্টেন (অব.) ব্রিগেডিয়ার খালেকুজ্জামান।
৯) তৎকালীন ক্যাপ্টেন (অব.) মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়া।
১০) তৎকালীন লে. বর্তমান সামরিক বাহিনী প্রধান লে. জেনারেল হারুনুর রশীদ।
১১) তৎকালীন লে. কর্নেল (অব.) রকিব উদ্দিন।
১২) লে. মেজর (অব.) মনসুর উল আমিন চৌধুরী।
১৩) তৎকালীন লে: মেজর (অব.) লতিফুল আলম চৌধুরী
১৪) তৎকালীন লে. মেজর (অব.) শওকত।
১৫) তৎকালীন রাঙামাটি জেলার ডেপুটি কমিশনার ও সাবেক সচিব এইচ টি ইমাম।
১৬) তৎকালীন রাঙামাটি জেলার এডিসি সাবেক মুখ্যসচিব ড. এস.এ. সামাদ।
১৭) তৎকালীন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীকালে সচিব ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আবু সোলায়মান চৌধুরী।
১৮) তৎকালীন রাঙ্গুনিয়া থানা বিএলএফ কমান্ডার এডিশনাল আইজি নুরুল আলম।
২০) তৎকালীন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা পরবর্তীকালে সচিবালয়ের মহাপরিচালক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক প্রমুখ।
নভেম্বরের মধ্যম সপ্তাহে যুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার পর দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র বিএলএফ নেতৃবৃন্দ স্ব স্ব অঞ্চলে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং দায়িত্বে নিয়োজিত হন। এ সময় দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনি তার দায়িত্ব এম.এ মান্নানকে (সাবেক মন্ত্রী) প্রদান করে মুজিব বাহিনীর একটা বিশেষ স্কোয়াড ও মিত্র বাহিনীর বিশাল এক বাহিনী সঙ্গে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন দিক হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
ইতিমধ্যে জনাব মন্টু বিএলএফ, এফএফ ও মুক্তিবাহিনী ও যৌথ কমান্ডের পক্ষ হয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স নিয়ে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম ১ নং সেক্টরের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সহকারী কমান্ডার হিসেবে অগ্রবর্তী বাহিনী হিসেবে প্রবেশ করেন। এতদঞ্চলের সার্বিক তথ্যাদি ও বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত গ্রæপ কমান্ডারদেরকে হেডকোয়ার্টারের সর্বশেষ নির্দেশাবলী সম্বন্ধে অবহিত করেন এবং অগ্রগতি বাহিনীর সাথে সীতাকুন্ডে যেয়ে ডিসেম্বরের ৮, ৯ তারিখের দিকে মিলিত হন। উক্ত সময় সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামকে প্রধান রাজনৈতিক সমন্বয়কারী এম.এ হান্নান যৌথ বাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম শহরে সেক্টরের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব প্রদান করেন এবং ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সাথে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনাব মন্টু চট্টগ্রামে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজেও তিনি জড়িত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সদালাপী ও দিলখোলা মনের মানুষ ছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ষাটের দশকের এই তুখোড় ছাত্রনেতা ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন ইন্তেকাল করেন
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদ : পটিয়ার আওয়ামী রাজনীতির বটবৃক্ষ

শামসুদ্দিন আহমদ ষাটের দশকের বিশিষ্ট ছাত্রনেতা। তিনি পটিয়ায় রাজনীতি করলেও চট্টগ্রামের সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। পটিয়া ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের

বিস্তারিত »

রায় সাহেব কামিনী কুমার ঘোষ হত্যাকাণ্ড

আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজহিতৈষী, শহীদ বুদ্ধিজীবী রায় সাহেব কামিনী কুমার ঘোষকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১-এর ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে। কামিনী কুমার ঘোষ ১ জানুয়ারি ১৮৮৮

বিস্তারিত »

‘কেয়ামতের ফজরেও আ.লীগ রাজনীতি করতে পারবে না’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (স.) যেমন মসজিদের ঈমাম, যুদ্ধের ময়দানেও সেরকম সেনাপতি।

বিস্তারিত »

আন্দরকিল্লায় দুটি সড়কে ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য

ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্যে নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার দুইটি সড়কে যানবাহন তো দূরের কথা পথচারীর চলাচলও কঠিন হয়ে উঠে। ভয়াবহ রকমের বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকা ব্যাটারি রিকশাগুলো পথচারীদের

বিস্তারিত »

আজ সৈয়দপুর আসবেন বেবী নাজনীন

সৈয়দপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া-মাহফিলে যোগ দেবেন তিনি। সৈয়দপুর

বিস্তারিত »

চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচ জনসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর)

বিস্তারিত »

সরকারের নানা উদ্যোগ: ভাঙেনি সিন্ডিকেট, বাজারে অস্বস্তি

নিত্যপণ্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড়, নিত্যপণ্যের বাজার

বিস্তারিত »

চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ডিবিতে সনাতন মঞ্চের নেতারা

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ডিবি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন

বিস্তারিত »

নবম বিসিএস ফোরামের সভাপতি আবুল কালাম, মহাসচিব শীষ হায়দার চৌধুরী নবম বিসিএস ফোরামের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম

বিস্তারিত »