শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩২, ১ মহর্‌রম, ১৪৪৭

দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমান পুরুষোত্তম

বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি শিল্পপতি মিজানুর রহমান ।

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি শিল্পপতি মিজানুর রহমান ।

বহুল আলোচিত ও বহু প্রশংসিত শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মহামান্য জনাব সুফি মিজানুর রহমানকে শিল্পপতি হিসেবে স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রদান করতেই হয়। কেননা দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করার ফলে তিনি তো শিল্পপতি ছিলেনই, তদুপরি সুফিবাদে দীক্ষিত হওয়ার পর ‘সুফি’ অভিধাও অর্জন করেন। শিল্পপতি অনেক কিন্তু ‘সুফি শিল্পপতি’ মাত্র একজনই, তিনি মহামান্য সুফি মিজানুর রহমান। শিল্প যদি বস্তুগত সম্পদ হয়, সুফিবাদ ভাবসম্পদ। জনাব সুফি মিজানুর রহমান শিল্পসৌধের ওপর ভাবসম্পদের প্রাসাদ নির্মাণ করে ‘সুফি শিল্পপতি’ আখ্যা পেয়েছেন। তিনি স্বয়ং এই খেতাব ধারণ করেননি, ২০০১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের আল্লামা রুমী সোসাইটি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সুফি’ উপাধিতে ভ‚ষিত করে এবং দস্তারবন্দি করে।
তিনি ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জের মানুষ; কর্মব্যাপদেশে এসে পড়েছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বন্দর শহর চট্টগ্রামে। সেই চট্টগ্রাম যেখানে আকাশ পাহাড়ে এসে মিশে এক স্বপ্নময় অপার্থিব জগতের দুয়ার খুলে দেয়; সেই ভাবালুতার প্রশ্রয়ে ভাবুক সুফি মিজানের অন্তর উতলা, উন্মনা হয়ে যায় অধ্যাত্ম সাধনার অবারিত সুযোগ ও সুমহান ঐতিহ্যে অবগাহন করে। সুফি তত্তে¡র মরমীবাদ তাঁকে আকর্ষণ করে।
চট্টগ্রামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে গেলেন। চট্টগ্রামের আছে একটি সাগর-বঙ্গোপসাগর, একটি নদী-কিংবদন্তীর কর্ণফুলী, একটি বন্দর-সমুদ্র বন্দর; এছাড়া বাংলাদেশের ওয়াল স্ট্রীট খ্যাত পাইকারি বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ; চট্টগ্রামের আছে বার আউলিয়া; দেশের অন্য কোন জেলায় প্রকৃতি, সম্পদ ও আধ্যাতিœকতার এমন অপূর্ব মেলবন্ধন কোথাও মেলে না। এই চট্টগ্রাম থেকেই জনাব সুফি মিজান ব্যবসায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠার প্রেরণা এবং পারলৌকিক মুক্তির পথনির্দেশ লাভ করেন।
শিল্প-কারখানা গড়ে বৈষয়িক সমৃদ্ধির চ‚ড়ায় আরোহনের পরও জনাব সুফি মিজানের মনে শান্তি ছিলো না। কিসের যেন অভাব, শূন্যতায় তার অন্তর হাহাকার করতে থাকে। ভাবে বিভোর হয়ে শিল্পপতি মিজানুর রহমান আধ্যাত্মিক সম্পদের খোঁজে চট্টগ্রামের সুফি দরবেশদের মাজারে ছুটে বেড়ান। অবশেষে চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক তীর্থ ঈছাপুর তথা ফটিকছড়ির মাইজভাÐারে গিয়ে পারলৌকিক সম্পদের খনি খুঁজে পান। সেখানে হজরত গাউসুল আজম মাইজভাÐারীর খলিফা ও প্রথম জীবনীকার হজরত মওলানা সৈয়দ আবদুছ ছালাম ঈছাপুরীর পদতলে নিজেকে সঁপে দেন। তাঁর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করলে আধ্যাত্মিক জগতের সিংহ দুয়ার খুলে যায় তাঁর সামনে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্পগোষ্ঠীর নমকরণের সময়ও পিরের কথা মনে রেখেছেন জনাব সুফি মিজান। অন্যান্য ব্যবসায়ীরা নিজের নামে অথবা তাদের পিতামাতা, পিতামহ কিংবা ছেলেমেয়ের নামে তাদের ব্যবসায় বা শিল্পের নামকরণ করেন। জনাব সুফি মিজান তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্পগোষ্ঠীর নামকরণ করতে গিয়ে পির আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরী (রহ.) এর নামের সাথে মিল রেখে তিন শব্দের একটি নাম উদ্ভাবন করলেন। সালাম শব্দের অর্থ শান্তি আর শান্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ পিস আর তিনি সারাজীবন মানবের উন্নতি আর সুখের জন্য কাজ করেছেন। তাই শান্তি, সুখ আর অগ্রগতি-এই তিনটির ইংরেজি প্রতিশব্দ পিস, হ্যাপিনেস এবং প্রসপারিটি নিয়ে গড়ে তোলেন পিএইচপি ফ্যামিলি।
স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় রুমী, হাফিজ, সাদী, গালিবের কাব্যালোচনার মাধ্যমে সুফি তত্তে¡র চর্চা শুরু হয়। সুফি মিজান তার আগে থেকে চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং চট্টগ্রামে সুফি তত্ত¡ চর্চার পথ উন্মুক্ত হওয়ায় তিনি উৎসাহিত হয়ে উঠেন। একই সময়ে সুফিতত্ত¡ সন্ধানী গবেষক সৈয়দ আহমদুল হক এবং প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রেজাউল করিম চৌধুরী রুমীর মসনবী চর্চার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সৈয়দ আহমদুল হকের লালখানবাজার বাঘঘোনাস্থ বাসভবন ‘রুহ আফজা’ কুটিরে সাপ্তাহিক মসনবী আলোচনার আসর বসতে থাকে। সুফি মিজানও আল্লামা রুমী সোসাইটির সদস্য পদ গ্রহণ করে মসনবী আলোচনায় নিয়মিত অংশ নিতে থাকেন। তিনি বর্তমানে রুমী সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও ভাইস-চেয়ারম্যান।
সুফিরা একটি বিশেষ জীবনধারা অনুসরণ করেন, সুফিবাদ একটি দার্শনিক প্রত্যয়। এই অর্থে সুফি মিজানুর রহমানের মুকুটে আরো একটি পালক যুক্ত হতে পারে, সেটি হলো দার্শনিক শিল্পপতি। ব্যবসায়, শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দাতব্য কর্ম ইত্যাদি নানারূপে যিনি নিজেকে প্রকাশ করেন, তিনি মিজানুর রহমানের বহিরঙ্গ তথা তাঁর বাহ্যিক সত্তা। তাঁর আরো এক সত্তা আছে, যেখানে তিনি ভাবের ভেলায় চড়ে কুল কিনারাহীন ভবসাগর পাড়ি দেয়ার দুঃসাহসে ভর করে বৈঠা বেয়ে চলেছেন। রাশি রাশি ভারা ভারা ফসলে ভরা তাঁর সোনার তরী। কিন্তু শেষ পারানির কড়ি তো নেই, তা সংগ্রহের জন্য তিনি নিত্য অধ্যাত্ম সাধনায় ডুবে থাকেন।
পিরের মুরিদ হওয়ার পর তাঁর মধ্যে বিরাট পরিবর্তন আসে। তখন তিনি গৃহী হয়েও যেন অন্য কোনো জগতের বাসিন্দা। সন্ন্যাস জীবন, সংসার ভোলা পীর-ফকির, সাধু-সন্ত-র জীবন অবলম্বন না করলেও তিনি যে সে গোত্রেরই মানুষ তাতে সংশয় রাখা চলে না। তিনি বিয়ে থা করে সংসার জীবনে থিতু হয়েছেন, স্ত্রী তাহমিনা রহমান এবং সাত পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে ভরপুর সফল জীবনের সুনিপুণ নির্মাতা। প্রথম জীবনে চাকরি, অতঃপর ব্যবসায় প্রবৃত্ত হয়ে ঈর্ষণীয় সিদ্ধি ও সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছেন, যে শিল্প সা¤্রাজ্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাহ্যত এখনো তিনিই তার আনুষ্ঠানিক প্রধান। তথাপি তাঁর মনে শান্তি নেই; ¯্রষ্টার জন্য, পরম পুরুষের জন্য, পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে তাঁর জীবাত্মা।
লালন সাঁই’র গানের মতই তাঁর দেহরূপ খাঁচার ভিতর মনরূপ এক অচিন পাখির নিত্য আসা-যাওয়া চলে। এই অদৃশ্য পাখির সঙ্গে দেহের যে লীলা, তাকে যিনি অনুভব করতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন, তিনিই তো সুফি সাধক।
সুফি মিজানের জীবন সত্যিই সুফি সাধনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ব্যবসা-বাণিজ্যে যখন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন, কথা বলার এবং নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসৎ পান না, তখনো তাঁর সৃষ্টিকর্তার কাছেই পড়ে থাকে তাঁর মন। তিনি মনে মনে তাঁর প্রভুর নাম জপ করেন। রসুলের জন্য, তাঁর মোর্শেদের জন্য কাঁদে তাঁর অন্তরাত্মা। দিনে মাত্র তিনচার ঘণ্টা ঘুমান তিনি। সারা বছর রোজা রাখেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখনো কাজা করেন না। রাত ভোর হবার অনেক আগেই তিনি শয্যা ত্যাগ করেন। ওজু করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন। তারপর জিকিরে মগ্ন হয়ে যান একালের সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
একজন মানুষের জীবনে যত সদগুণ, যত সদ্ভাবের বিকাশ ঘটা সম্ভব, সুফি মিজানুর রহমানের জীবনে তার ভরপুর সমাবেশ ঘটেছে। এক মানব জীবনে সম্ভব সমস্ত মানবিক গুণাবলীর অপূর্ব সমন্বিত প্রকাশ ঘটেছে তাঁর জীবনে।
মানবতার ধ্বজাধারী হিসেবে, সত্য ও সুন্দরের উপাসক হিসেবে, মঙ্গলময় ব্যক্তিত্ব হিসেবে, সমাজ উন্নয়নকর্মী ইত্যাদি নানারূপে বিকশিত হয়েছে সুফি মিজানুর রহমানের মানবসত্তা। একই মিজানুর রহমান তিনি কিন্তু কত রূপ, কত বিচিত্র প্রকাশ তার। এই যে নানা রূপের, নানা রঙের মিজানুর রহমান, যাঁকে বিনি সুতোর মালায় গেঁথে তোলা হলে আবার একজন অখÐ ও অবিভাজ্য মিজানুর রহমানকে পাওয়া যাবে।
এই বহুধা-বিদীর্ণ সুফি সাহেব এক অখÐ মানবসত্তারই ভিন্ন ভিন্ন রূপ। গভীরে তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে দেশ, সমাজ ও অর্থনীতির প্রায় সর্বক্ষেত্রকে ছুঁয়ে গেছে সুফি সাহেবের প্রতিভা। জীবনের এমন কোন দিক নেই যা তাঁকে স্পর্শ করেনি। তাঁর কর্মকৃতি শুধু বিচিত্রগামী নয়, সর্বত্রগামী হয়েছে বললেই বোধ করি তাঁর প্রতি সুবিচার করা হয়। জীবনের সর্বপ্রান্তদেশে নিজেকে বিস্তৃত ও বিকশিত করতে যেয়ে তাঁর নিজেরও রূপান্তর ঘটেছে। এভাবে তিনি পূর্ণরূপে বিকশিত এক সম্পূর্ণ মানবজীবনের অধিকারী হয়ে ওঠেন। তিনি তখন একজন পূর্ণ মানবের রূপ পরিগ্রহ করেন। যিনি সাধারণের মধ্যে থেকেও অসাধারণ; যিনি এক জ্যোতির্ময় পুরুষ, হয়তো পুরুষোত্তমই তাঁর যথার্থ অভিধা।
শুধু শিল্পপতি বা দার্শনিক নন, তাঁর আরো বহুতর পরিচয় রয়েছে। যেমন- তিনি একজন শিক্ষাব্রতী, সমাজহিতেষী, মানবতাবাদী, মঙ্গলময়, সর্বোপরি মানবকল্যাণে নিবেদিত একজন মানুষ – এক জীবনের আধারে যখন এতসব গুণের সমাবেশ ঘটে, তখন তিনি আর সাধারণ মানুষ থাকেন না; তিনি হয়ে ওঠেন অনন্যসাধারণ এক জীবনের উপমা। তখন সে জীবনে মহামানবের ছায়াপাত ঘটে। আরো মহিমান্বিত হয়ে মানবসত্তাকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে যান পুরুষোত্তম সুফি মিজানুর রহমান।
জনাব সুফি মিজান বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই জীবন ধারণের জন্য যে ব্যবসায় বৃত্তি অবলম্বন করেছিলেন, আজো তাতেই থেকে গেলেও ইতিমধ্যে সুফিবাদে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর মনোজগতে বিপুল পরিবর্তন ঘটে যায়। সেই মিজানুর রহমান আর বতর্মান মিজানুর রহমান এক নামে এবং দেহে এক হলেও অন্তরে এক নন, দুয়ের মধ্যে মৌলিক রূপান্তর ঘটে গেছে। তাঁকে যতক্ষণ ব্যবসায়িক কাজকর্ম করতে হয় ততক্ষণ করেন, তারপর অফিসেই কোরান পাঠ, তসবিহ জপতে জপতে এমন এক আধ্যাত্মিক ভুবনে ডুব দেন, যে তখন তিনি বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিযুক্ত। অফিসে ধ্যানের পর খোঁজ নেন বাইরে কোথায় জালালউদ্দিন রুমীর মসনবী পাঠের আসর, লালন শাহ, হাছন রাজা, শাহ আবদুল করিম, রাধারমণের গানের জলসা বসেছে, কোথায় ছেমা মাহফিল হচ্ছে, সেখানে গিয়ে সামিল হয়ে যান।
নারায়ণগঞ্জের ভ‚মিপুত্র : সুফি মিজান নারায়ণগঞ্জের ভ‚মিপুত্র। তেতাল্লিশের বার মার্চ তাঁর জন্মসন, সাকিন চরপাড়া গ্রাম, কাঞ্চন পৌরসভা, রূপগঞ্জ থানা, ঢাকা বিভাগ। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ Ñ যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের জন্য বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় একটি বছর। এই যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই, পিতা সুফি মোহাম্মদ দায়েম উদ্দিন প্রধানের ঘরে মাতা রাহাতন ভূঁইয়ার কোল আলো করে যে শিশুটি জন্ম নিয়েছিলো, উত্তরকালে সেই শিশুটিই শান্তির বার্তা বহন করে হয়ে উঠবে যুদ্ধের যথার্থ এন্টি-থিসিস। তিনি পিএইচপি নামে যে শিল্পগোষ্ঠীর পত্তন করবেন, তার আদি কথাটাই হচ্ছে পিস বা শান্তি। এ কেমন কূটাভাস যে, যুদ্ধকে সঙ্গী করে যার জন্ম, উত্তরকালে তিনি যুদ্ধবিরোধী হয়ে গেলেন!
গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনান্তে ভর্তি হন গ্রামেরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারত চন্দ্র স্কুলে; অতঃপর সেখান থেকে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে একই কলেজে বি.কম ক্লাসে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। বি.কম পাস করেই ঢুকে পড়লেন গোলামির চাকরিতে। প্রথমে ১০০ টাকা মাইনেতে নারায়ণগঞ্জের একটি জুট মিলে; তারপরে ১৯৬৫-তে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান-এর (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) চাকরি পেলেন ইন্টারভিউ দিয়ে। কর্মস্থল চট্টগ্রাম। ১৯৬৭-তে ব্যাংক বদল করে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় যোগদান করলেন ৮০০ টাকা বেতনে। সেখানে বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।
চট্টগ্রামের একটি সদাগরি ঐতিহ্য আছে। বঙ্গোপসাগর, কর্ণফুলী নদী এবং খাতুনগঞ্জ এই তিনের সমন্বয়ে চট্টগ্রামের সদাগরি ঐতিহ্য ধাপে ধাপে সৃষ্টি হয়েছে। সাগর ও নদী চট্টগ্রামকে সুপ্রাচীনকাল থেকে নৌ বাণিজ্যের সুবিধা দিয়েছে। সর বা পালের জাহাজের সাহায্যে যারা সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নানা দ্বীপ ও দেশে দেশে বাণিজ্যের পসরা নিয়ে ঘুরে বেড়াত, তাদের একজন কিংবদন্তীর চাঁদ সওদাগর। জাহাজি ব্যবসা, দোভাষী ব্যবসা, স্টিভিডোরিং ইত্যাদি নানা পর্যায় অতিক্রম করে খাতুনগঞ্জের গদিভিত্তিক সদাগরি বাণিজ্যের রূপ পরিগ্রহ করে। সদাগরি বাণিজ্যের পোশাকী নাম ট্রেডিং। সুফি মিজানও ট্রেডিং দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের জগতে পা রেখেছিলেন।
ওদিকে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চাকরি করতে করতেই এসে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করলো। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব এবং নব্য বাংলাদেশের নতুন করে শুরু হওয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে একজন নবীন ব্যবসায়ী সুফি মিজানের সাবধানী পথচলা সমসময়ে আরম্ভ হয়। এই সমাপতন কী নিছক কাকতলীয় ঘটনা? না, এর মাঝে গভীরতর কোনো তাৎপর্য নিহিত রয়েছে? সেটা ভেবে দেখার বিষয়।
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এই সাক্ষ্য দেয় যে, বাংলাদেশ যতই এগিয়েছে, সুফি মিজানুর রহমান নামে একজন ব্যবসায়ীর উত্থান ঘটেছে। বস্তুত সুফি মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ একই সময়ের সৃষ্টি। ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ফসল এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ও সুফি মিজান হাত ধরাধরি করে চলেছে।
ব্যাংক চালু হলে জনাব সুফি মিজান চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতার প্রথম অরুণোদয়ের রাঙা প্রভাতে তখন ঝলমলে অবনী, সোনা রোদে মাখামাখি হতে হতে মানুষের চোখে স্বপ্নের ওড়াওড়ি; সুফি সাহেবের চোখেও স্বপ্নের অঞ্জন, তিনি হয়ে গেলেন ড্রিম মার্চেন্ট। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর চোখে তখন সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের হাতছানি। দেশ গঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ অনুভব করলেন অন্তর থেকে। তাঁর ভিশন ছিল। তিনি লক্ষ করলেন স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক কমে গেল। কেননা, বেশির ভাগ ব্যাবসায়ীই ছিলেন অবাঙালি। যারা ভারত ও পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন, তারাই ব্যবসা জানতেন। তৎকালীন আদমজী, বাওয়ানী, দাউদের মতো বড় বড় সব শিল্প কারখানাই ছিল তাদের। স্বাধীনতার পর যখন তারা নিজেদের দেশে ফিরে গেলেন, তখন ব্যবসা ক্ষেত্রে বিশাল একটি শূন্যতা তৈরি হলো। ঠিক এই সময়টাকে কাজে লাগালেন মিজানুর রহমান।
ব্যাংকে চাকরির সুযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি-রফতানির ব্যাবসাটা ভালো করে রপ্ত করেছিলেন, এখন নিজে যখন ব্যবসায় আরম্ভ করছেন, তখন সেই বাস্তব অভিজ্ঞতাটা কাজে লেগে গেল। প্রথম দিকে জাপান থেকে টায়ার-টিউব, মিল্ক পাউডার, সুতা, পুরোনো কাপড়, স্পেয়ার পার্টস প্রভৃতি আমদানি করতেন। সেখানে সফলতার পরপরই ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে যান। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এসেছে একের পর এক সফলতা।
পায়ের তলায় যখন শক্ত জমি খুঁজে পেলেন তখন তিনি চলে গেলেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিকে। শিল্পেও সবাই ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের কারখানা, যেমন-চিনি, সয়াবিন বড়জোর রড, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি করে তৃপ্ত হন, সুফি মিজান কিন্তু মৌলিক ও ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোনিবেশ করেন।
সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দেশের মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিস্তৃত করেছেন। তিনি বেশ চিন্তাভাবনা করে, প্রস্তুতি নিয়ে শিল্পের জগতে পদার্পণ করেন। খেয়ালে নয়, হুজুগে নয়, নিছক অর্থোপার্জন বা শিল্পপতি হওয়ার জন্য তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠা করেননি, দেশের শিল্পায়ন নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে যে চিন্তাভাবনা করেছেন তারই ফলশ্রæতিতে তিনি এক একটি শিল্পের গোড়াপত্তন করেন। এক কথায় বিস্তর মাথা ঘাটিয়ে, গবেষণা করে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পরই যখন সমীচীন মনে হয়েছে, তখনই শিল্পাঙ্গনে তাঁর ভীরু পদসঞ্চার ঘটে। তবে জাদু আছে তাঁর হাতে। যখনই যে প্রকল্পে তিনি হাত দিয়েছেন, সেখানে মুঠো মুঠো সোনা ফলেছে। সময়ের ব্যবধানে তাঁর শিল্পভাবনায় অনূদিত হয়ে গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক শিল্প-কারখানা এবং এক সময় কুড়িটি শিল্প সমবায়ে এক বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য পিএইচপি ফ্যামিলি আত্মপ্রকাশ করে। জনাব সুফি মিজানুর রহমান পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, শুধু তাই নয়, তিনিই পিএইচপি ফ্যামিলির প্রাণপুরুষ, থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং চিরন্তন প্রেরণার উৎস।
পিএইচপি ফ্যামিলির অধীনস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে –
১. পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিল্স লি., ২. পিএইচপি কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিল্স লি., ৩. পিএইচপি স্টিল্স লি., ৪. পিএইচপি এনওএফ কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিল্স লি., ৫. পিএইচপি ফ্লোট গøাস ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ৬. পিএইচপি পাওয়ার জেনারেশন প্ল্যান্ট লি., ৭, পিএইচপি পাওয়ার কোম্পানি লি., ৮. পিএইচপি শিপ- ব্রেকিং অ্যান্ড, রি-সাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ৯. পিএইচপি ওভারসিজ লি., ১০. পিএইচপি ল্যাটেক্স এন্ড রাবার প্রোডাক্টস লি., ১১. পিএইচপি ফিশারিজ লি., ১২. বে-টারমিনাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., ১৩. পিএইচপি স্পিনিং মিল্স লি., ১৪. পিএইচপি রোটর স্পিনিং মিল্স লি., ১৫. পিএইচপি স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লি., ১৬. পিএইচপি এগ্রো প্রোডাক্টস লি., ১৭. পিএইচপি কটন মিল্স লি., ১৮. পিএইচপি অটো মোবাইল্স লি., ১৯. পিএইচপি মোটরস লি., ২০. পেলিকন প্রোপার্টিজ লি.।
বর্তমানে পিএইচপি গ্রæপের বার্ষিক লেনদেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গ্রæপের অধীনস্থ ২০টি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে পিএইচপি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও আয়করসহ ৬০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সরকারী কোষাগারে।
তিনি একজন ব্যতিক্রমী শিল্পপতি। কোন শিল্পপতি শুক্রবার জুমাবারের টিভির পদায় দর্শন দিয়ে ধর্মদেশনা দেননা। এক্ষেত্রে সুফি মিজান তা করেন এবং সেজন্য তিনি অনন্য।
একাধিকজন শিল্পপতি মিলে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার নজির আছে। ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমদ একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন সত্য, তবে সেটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সুফি মিজান ইউআইটিএস নামে আইটি-বেজড্ দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, সেটি সাধারণ নয়, সাধারণ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম ক্যাম্পাস, ইউএসটিসি’র সঙ্গেও সুফি মিজান যুক্ত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সাইডার ইন্টারন্যাশনাল, আই হসপিটালে তাঁর অংশগ্রহণ এবং ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জামেয়া মহিলা মাদ্রাসা স্থাপন করেছেন।
ভারতে রতন টাটার চেয়ে বড় ফিলানথ্রপিক পারসোনালিটি বোধ হয় ভারতে আর কেউ ছিল না। আজিম প্রেমজির কথাও আসতে পারে। রতন টাটা তাঁর আয়ের ৬৬ শতাংশ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ও জনসেবামূলক কাজে দান করেছেন। আজিম প্রেমজি জনকল্যাণমূলক কাজে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেন। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ রুপি।
রতন টাটা শিল্প-সংস্কৃতিরও উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। একবার চিত্রশিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্যের একটি ছবির নিলাম হচ্ছিলো। নিলামের দর কোটি রুপির অঙ্কে পৌছলে যারা নিলামে ডাকে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা আর কেউ ডাক দিতে সাহস করলেন না। এ সময় একমাত্র রতন টাটাই কোটি রুপিতে ছবিটি কিনে নেন।
সুফি মিজানও শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। একটি উদাহরণ দিচ্ছি, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ও মরমী গানের খ্যাতিমান শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার আবদুল গফুর হালী সুফি মিজানের বদান্যতায় শেষ জীবন স্বচ্ছন্দে অতিবাহিত করেন।
পিএইচপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমানের ওপর আমি একটি নিবন্ধ তৈরি করতে গিয়ে সেটি খুব বড় হয়ে যায় এবং পত্রিকায় দিতে যেয়ে ধাক্কা খেলাম তাঁকে নাকি শেখ হাসিনাসহ ২০১ জনের সঙ্গে কোন মামলায় জড়ো হয়েছে সে কারণে সাংবাদিকরা লেখাটি প্রকাশে সম্মত হলেন না। যে কারণে আমি নিবন্ধটি ফেসবুকে দিয়েছি, কিন্তু সেখানেও সমস্যায় পড়লাম, বৃহদায়তনের কারণে পুরো লেখাটি এক সঙ্গে দিতে পারলাম না। লেখাটি দু’ভাগ করে গতকাল অর্ধেক দিয়েছি, আজ বাকি অংশটা দিলাম।
আমাদের দেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তন্মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রধান। এই দুটি ক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যা রাষ্ট্র সমাধান করতে পারছে না। এক্ষেত্রে ধনীদেরও কিছু করণীয় আছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চনে তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিকে ৩০ শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক চিকিৎিসার সমস্ত উপকরণ ও সরঞ্জাম দিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই হাসপাতালে পিএইচপি ফ্যামিলি ও রোটারি ক্লাব অব আগ্রাবাদের যৌথ উদ্যোগে দু’দিনের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প করে ঠোঁট ও তালুকাটা রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশনের সুযোগ দেয়া হয়। কাঞ্চন এলাকায় প্রথম বারের মত মানবতার সেবায় কল্যাণমূলক কার্যক্রমে সফল স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। ঢাকায় ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের জন্য প্রথম পিএইচপি’র আর্থিক সহযোগিতায় পেডিয়ট্রিক আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এর আগে চমেক হাসপাতালের নিউনেটাল ইউনিটে নবজাতকদের জন্য ও অপারেশন থিয়েটারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের (এসি) ব্যবস্থা করেছিলেন সুফি মিজানুর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৮টি উন্নতমানের এগজস্ট ফ্যানেরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি। মহিলাদের একলামশিয়া ওয়ার্ডেও সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তিনি।
পিএইচপি ফ্যামিলি চট্টগ্রামে দু’টি এতিমখানার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করছে। এ ছাড়া লায়ন্স ও রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে জনাব সুফি মিজান বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সাহায্য প্রদান করেন।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিদিন কত মানুষকে কত টাকা যে তিনি দান করেন সে হিসেব তিনি ছাড়া আর কেউ জানেনা। সেই প্রচলিত কথাটা তিনি মানেন যেখানে বলা হয়, ডান হাতে দান করলে নিজের বাম হাতটিও যেন জানতে না পারে। সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতেও অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করেন তিনি। তাঁর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়ে কেউ ফিরে এসেছে খালি হাতে এমন কোন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না।
সুফি মিজান জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য পিএইচপি ফ্যামিলির লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে তাঁর নামে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন। যেমন ভারতে আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন, টাটা ফাউন্ডেশন বা আমাদের দেশে এ কে খান ফাউন্ডেশন। সুফি মিজান ফাউন্ডেশন থেকে গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।
ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের জন্য জনাব সুফি মিজান পিএইচপির পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোরান শরিফ ও স্ট্যান্ড বিতরণ কর্মসূচি চালু করেছে। সুফি মিজান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪০টি হাদিস সংকলিত করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে।
ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে পিএইচপি প্রবর্তন করেছে কোরানের আলো প্রতিযোগিতা। মানবকল্যাণে আত্মনিবেদিত এই ভালো মানুষটি মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি।
পিএইচপি’র চেয়ারম্যান জনাব সুফি মিজানুর রহমানের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করে ধন সম্পত্তি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সেই ধনসম্পত্তির একটি অংশ তিনি দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করছেন।
তিনি অনেক দুঃস্থ ও গরিব মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যয়ভার তিনি বহন করেছেন এবং শিক্ষার বিস্তারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রামে বহু মাদ্রাসা নিয়মিত পরিচালিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের মুলতান, হাজারা ও করাচির বিভিন্ন স্থানের এবং পাকিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, আরব ও তুরস্কের অনেক পির-দরবেশ তাঁর আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকেন। যাঁরা অসহায় এবং নিজ সামর্থে হজ্বে যেতে অক্ষম, এমন শতাধিক লোককে তিনি সম্পূর্ণ নিজ খরচে হজ্বব্রত সমাপন করার ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানেও এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
জনাব সুফি মিজান বিদ্বান মানুষ। তাঁর জ্ঞানী সংসর্গ ও জ্ঞানচর্চার কথা বলা হয়নি। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হলেও সুফি সাহেব বইপড়ায় কখনো বিরতি দেননি। বই পড়তে পড়তেই ধর্ম, দর্শন, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানা হয়ে গেছে তাঁর। বইপড়ার পাশাপাশি জ্ঞানীগুণীদের সাহচর্য লাভের জন্য অব্যাহত প্রয়াসে তিনি সুফিতত্ত¡জ্ঞানী ছৈয়দ আহমদুল হক, বহুমুখী প্রতিভার এক আশ্চর্য উদাহরণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ এ এ রেজাউল করিম চৌধুরী, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম, গাউসুল আজম মাইজভাÐারীর প্রথম খলিফা হযরত আবদুস সালাম ইছাপুরীরও সঙ্গ লাভ করে নিজের জ্ঞান জগতকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হন। আবদুল গফুর হালীসহ চট্টগ্রামে যাঁরা মরমী সঙ্গীত, লোকগানের চর্চা করেন, তাঁদের অনেকেরই তিনি পরম সখা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস’-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমকালীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ও চিন্তাবিদ ড. মাহাথির মোহাম্মদ, বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী ও চিন্তানায়ক ড. এ পি জে আবদুল কালামকে ভাষণ দানের জন্য আমন্ত্রণ করে আনার মধ্যে জনাব সুফি মিজানের জ্ঞানস্পৃহা এবং জ্ঞানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে স্থাপিত আছে। জনাব সুফি মিজান একজন বহুভাষাবিদ পÐিত ব্যক্তি। তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি, হিন্দি, ফার্সি ইত্যাদি ছয়/সাতটি ভাষায় কথা বলতে পারেন, অনর্গল বক্তৃতা করতে পারেন এবং লিখতে পারেন।
জনাব সুফি মিজানুর রহমান তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে অনেক কীর্তিই স্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে কোন্টা বড় কোন্টা ছোট সে হিসাব বের করা সত্যিই কঠিন। তিনি একজন কর্মবীর। শিল্পপতি সুফি মিজান, শিক্ষাব্রতী মিজান, দানবীর সুফি মিজান, সমাজসেবী মিজান, মানবপ্রেমী জনদরদী মিজান, শিল্পরসিক – সাহিত্যপ্রেমী-সুফিবাদী মিজান – কে যে কার চেয়ে বড় সেটা বলা মুস্কিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি বিশিষ্ট অবদান রেখেছেন ।
দেশের শিল্প-বাণিজ্যে জনাব সুফি মিজানের অবদান এবং শিক্ষা বিস্তার, মানবসেবা, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর ফিলানথ্রপিক কর্মকাÐের স্বীকৃতি এসেছে সরকারি ও বেসরকারি নানা পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তির মাধ্যমে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভ‚ষিত হন।
২০১৬ সালের ১৬ মার্চ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায় অসাধারণ নিষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যাওয়ার্ড পান।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য দৈনিক পূর্বকোণ ও গ্রামীণফোন তাঁকে ‘চট্টগ্রামের গর্ব’ হিসেবে সম্মানিত করে।
ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণের অসাধারণ স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর হাত থেকে ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার’ উপাধি লাভ করেন আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি চট্টগ্রাম আল্লামা রুমি সোসাইটি এবং সুফি মিজান ফাউন্ডেশন-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম টেলিভিশনে ‘ইসলাম: একটি ধর্ম ও তার দার্শনিক ব্যাখ্যা’ এবং এটিএন বাংলায় ‘তাসাউফ’ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আলোকিত করেছেন।
তিনি একসময় রোটারি ক্লাব অব আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম-এর সভাপতি ছিলেন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল-এর আজীবন সদস্য এবং পল হ্যারি’স ফাউন্ডেশন-এর (রোটারি ইন্টারন্যাশনাল) একজন ফেলো।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর (আইইউবি) একজন প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষক, যা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর নিষ্ঠার প্রতিফলন। এসব সম্মান ও পদকে তিনি তাঁর জীবনব্যাপী নিষ্ঠা, নেতৃত্বগুণ এবং মানবিক মূল্যবোধের জন্য স্বীকৃত হয়েছেন।
তবুও যদি জনাব সুফি মিজানের কোন একটি কর্মকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দান করতে হয়, তাহলে আমি বলবো, জনাব সুফি মিজানের পরিবারই জাতির প্রতি তাঁর শ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁর হীরের টুুকরো সাত পুত্র যেন সপ্তরথী। প্রত্যেকেই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে পৈতৃক ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন।
বাংলাদেশে এমন একটি পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা জানি না, যে পরিবারে প্রত্যেকে সদস্যই একাত্মা, একাট্টা। তাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই, বিরোধ নেই; প্রত্যেক বিষয়ে তারা একে অপরের মত ও পথের অনুসারী। পিতামাতার সঙ্গে একই ছাদের নীচে একটি বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের মতোই মিলেমিশে থাকেন তাঁরা।
তাঁর প্রথম ছেলে মোহাম্মদ মুহসিন, দ্বিতীয় ছেলে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, তৃতীয় ছেলে আনোয়ারুল হক চৌধুরী, চতুর্থ ছেলে মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, পঞ্চম ছেলে আমীর হোসেন সোহেল, ষষ্ঠ ছেলে জহিরুল ইসলাম রিংকু, সপ্তম ছেলে আকতার পারভেজ হিরু। তাদের মা তাহমিনা রহমান। তাঁর সাতটি ছেলে প্রত্যেকেই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সবাই দেশে ফিরে পিএইচপি ফ্যামিলির একেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন। কিন্তু কেউই বিদেশে থেকে যান নি। তিনি নিজে একজন গ্র্যাজুয়েট।

পিএইচপির নবীন মাঝি মোহাম্মদ আলী হোসেনে রুশি মোদির ছায়া


ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা একটা বড় সমস্যা। ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ উপার্জন বড় কথা নয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনাই আসল কথা। টাকা-পয়সা ব্যাপ্তি যত বৃদ্ধি পায়, ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনও তত তীব্রভাবে অনুভ‚ত হতে থাকে। রতন টাটার পাশাপাশি রুশি সেদিকেও কিছু কৃতিত্ব দিতে হয়। পিএইচপির সূফি সাহেবের এসব কথা অজানা নয়। সে কারণে বহু কষ্টে গড়া তাঁর শিল্প সা¤্রাজ্য যাতে ব্যবস্থাপনার অভাবে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে না পারে, সেজন্য তিনি আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতিও কড়া নজর রেখেছেন। তাঁর চতুর্থ পুত্র আলী হোসেন সোহাগকে গ্রæপের হিসাব-কিতাব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ছে ভারতের বিখ্যাত টাটা গ্রæপের একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য এবং টাকা স্টিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনার পরিচালক রুশি মোদীর কথা। তিনি টাটা স্টিল লিমিটেডের সবচেয়ে উদার প্রকৃতির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর কার্যকালে ভাল কাজের জন্য তিনি অনেক কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছেন। এমনকি তিনি টাটা স্টিলের সমস্ত ডিভিশনাল ম্যানেজারকে বাতানুক‚ল মারুতি সুজুকি গাড়ি দেওয়ার মতো অনেক পুরস্কার শুরু করেছিলেন। টাটা ইস্পাত কারখানায় তিনি কখনও ধর্মঘটের মুখোমুখি হননি। কলকাতার বহুলপ্রচারিত দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকায় একবার রুশি মোদীকে নিয়ে পত্রিকার পৃষ্ঠা জুড়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই নিবন্ধ তাঁকে ব্যবস্থাপনার গুরু বা গুণিন বা ওঝা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেকালে মানুষের রোগ ব্যাধি হলে যেমন ওঝা বৈদ্যরা এসে ঝাড়ফুক করে গাছের লতা পাতা শিকড় বাকড় থেকে ওষুধ তৈরি করে রোগীকে সুস্থ করে তুলতেন, তেমনি রুশি মোদীও শিল্প কারখানার রোগবালাইয়ের ওঝা ছিলেন। টাটা স্টিলের যে এত নাম, তা রুশি মোদির কারণেই হয়েছে। তিনিই প্রকৃত স্টিল জায়ান্ট।
১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রুশি মোদী টাটা ইস্পাত কারখানা থেকে অবসর নেন। অবসর নেওয়ার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী পিভি নরসিমা রাও তাঁকে ভারতীয় এয়ারলাইন্স এবং এয়ার ইন্ডিয়ার যুগ্ম চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করেন।
পিএইচপি’র নব নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগের মধ্যেও আমি রুশি মোদীর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। তিনি শেষ পর্যন্ত নিজেকে মোদীর পর্যায়ে উন্নতি করতে পারবেন কি না সেটার দেখার জন্য আমরা তাকিয়ে আছি। তবে ওই যে মর্নিং শোজ দ্য ডেজ বলে যে কথা চালু আছে, জনাব মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ ভবিষ্যতে যে মধ্য গগনে নবীন মার্তন্ডের দীপ্তি ছড়িয়ে দিগবলয় উদ্ভাসিত করে তুলবেন, শুরুতেই তার প্রমাণ দিয়েছেন।
মোহাম্মদ আলী হোসেন ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁকে পিএইচপি পরিবারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা এবং বিস্তৃত অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ব্যবসার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন। তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জনশেষে তিনি পিএইচপির আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন, যাতে সিস্টেমের ক্ষতি এবং আর্থিক ফাঁকি রোধ করা যায়। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য, ক্রয়, বিমা, ট্রেড ফাইন্যান্স, আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর শৃঙ্খলা এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তার সরাসরি দিকনির্দেশনা এবং তত্ত¡াবধানে এসব বিষয় দক্ষভাবে পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া তিনি কাব্য, সঙ্গীত ও সামাজিক কর্মকাÐে আগ্রহী।
তিনি পিএইচপি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন ‘দৈনিক আমাদের সময়’ এবং ‘দ্য বিজনেস পোস্ট’-এ, তিনি পল হ্যারি’স ফাউন্ডেশন -এর ফেলো, যা রোটারি ইন্টারন্যাশনাল-এর সাথে যুক্ত, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন: মুসলিম ছাত্র সমিতির সভাপতি (২০০১ ও ২০০২), বিদেশী ছাত্র সংগঠনের সহসভাপতি (২০০১ ও ২০০২), বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনের সদস্য (২০০২), ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-এ (ইউআইটিএস) ট্রাস্টি সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের দাতা সদস্য, আল্লামা রুমি সোসাইটির সাধারণ সদস্য, শাহীন গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম খুলশি ক্লাব লিমিটেডের সদস্য।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং বিনোদনমূলক ক্লাবগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন।

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

মুক্তিযুদ্ধ যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁরা চলে গেছেন, হারিছই আছেন একা

চট্টগ্রাম শহরে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। সাতজন ছিলেন তাঁরা, পাঁচজন ইতিমধ্যে তাঁদের প্রভুর ডাক পেয়ে এ গ্রহ ছেড়ে চলে গেছেন প্রভুর সন্নিধানে।

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ, বাঙালি জাতিসত্তার নির্মাণ ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাথা

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৩ বছরের অবিরাম সংগ্রাম এবং অবশেষে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেই

বিস্তারিত »

সুলতান কুসুমপুরী ও তাঁর কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার আবু’র মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ১৩জন এমপি সম্মুখ যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা সেনা কর্মকর্তাদের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধে তাদের গ্রæপকে কমান্ড করেন। এই ১৩ জন এমপি

বিস্তারিত »
প্রদ্যোৎ কুমার পাল

৭১-এর দুরন্ত গেরিলা প্রদ্যোৎ কুমার পাল

প্রদ্যোৎ কুমার একজন অসম সাহসী বীরের নাম। মুক্তিযুদ্ধে এই দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা দক্ষিণ চট্টগ্রামের রণাঙ্গণ মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁর অসীম সাহস ও পরাক্রম দিয়ে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারটি

বিস্তারিত »

দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ক্যান্টনমেন্ট বরকল, শাহজাহান ইসলামাবাদী জিওসি

মুক্তিযুদ্ধের এক কিংবদন্তী শাহজাহান ইসলামাবাদী। দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের তিনিই ছিলেন প্রধান নায়ক। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তাঁকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল। তাঁর

বিস্তারিত »

স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অগ্রসৈনিক মিরসরাইর অহিদুল হক

অহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে যে অসাধারণ বীরত্ব, অসীম সাহস ও শৌর্যবীর্যের পরিচয় দেন, তা মিরসরাই থানার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জাতীয় মুক্তির

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে দোহাজারীর বীর চতুষ্টয় : খসরু-জাফর-রতন-কামাল

চট্টগ্রামের সভ্যতা মানুষ ও নদীর যুগ্ম-সৃষ্টি। ঐতিহাসিক কাল থেকে চট্টগ্রামে তিনটি বড় নদী পরিদৃষ্ট হয়। সর্ববৃহৎ কর্ণফুলী, অনতিবৃহৎ হালদা ও শঙ্খ নদী। কর্ণফুলী সদর ও

বিস্তারিত »

ষাটের_দশকের_ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সিরাজুল আলম

কাজী সিরাজুল আলম ষাটের দশকের শেষদিকে চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ছিলেন। ৬৯-৭০-এ তিনি ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তাঁর বাড়ি সীতাকুÐে; তিনি সীতাকুÐে ৬৯-এর

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে_চিকিৎসকদের অবদান ও ডা.শৈবাল কান্তি দাশ

মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসকদের ভ‚মিকা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়নি। তবে তাঁরা না হলে মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে গেরিলা যোদ্ধাদের পক্ষে যুদ্ধে সফল হওয়া মুস্কিল ছিল। ইনফ্যান্ট্রি, আর্টিলারি, ক্যাভালরি

বিস্তারিত »