স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ আকস্মিৃকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের অন্যতম কৃতী সন্তান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও পরবর্তীকালে খ্যাতিমান শিক্ষক ছিলেন।
তিনি গত বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) হাটহাজারী থানার ফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফনের কথা রয়েছে।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি যথাক্রমে ফতেহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৭৬ এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি ও প্রশাসনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক খাত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে উন্নয়ন অধ্যয়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি নলেজ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ডওয়াইড (নলেজ ট্রাস্ট) এর চেয়ারপারসন ছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে কর্মরত ছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে অনুষদ সদস্য হিসেবে যোগদান করেন; যেখানে তিনি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিরির গভর্নেন্স উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য ছিলেন। আহমেদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির স্থানীয় শাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
২০১৪ থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গভর্নেন্স ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে ২০১৮ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০২০ সালে, তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলো পত্রিকার একটি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সমালোচনা করেছিলেন। ২০২২ খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার পদের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ অক্টোবরে, তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সংঘাত এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৪ সালের অক্টোবরে তোফায়েল আহমেদকে নবনির্মিত নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য করে। তাকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
গত ২০ এপ্রিল তারা দুই খণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন।