১৮ জন প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর পর ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বাতিল করে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে এককাট্টা হয়েছে ঢাকার ৪৮টি ক্লাব।
প্রায় অর্ধশত ক্লাবের প্রতিনিধি একত্রিত হয়ে বিসিবি নির্বাচনকে বললেন ‘প্রহসনের নির্বাচন।’ তারা সরাসরি জানিয়ে দিলেন, তিন দফা দাবি মানা না হলে আসন্ন লিগসহ কোনো ধরনের ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা অংশ নেবেন না।
অন্তত ৪৮টি ক্লাব এ সিদ্ধান্তে একমত বলেই দাবি সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের।
বিসিবির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা নতুন মোড় নিল শনিবার। হাইকোর্টে করা এক রিট থেকে শুরু হয়ে ক্লাব সংগঠকদের সংবাদ সম্মেলন—সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হলো আরও।
বিসিবির সাবেক সভাপতি এবং এবারের ক্লাব ক্যাটেগরি থেকে পরিচালক পদে প্রার্থী ফারুক আহমেদ গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে এক রিট করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দুদকের তদন্তে থাকা ১৫টি ক্লাবকে বেআইনিভাবে কাউন্সিলর করা হয়েছে। আদালত সে বিষয়ে রুল জারি করেন এবং এ সংক্রান্ত শুনানি হবে রবিবার সকালে।
এর আগেই শনিবার বিকেলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবী তুলে ধরেন ঢাকার বিভিন্ন লিগের ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। লিখিত একটি বিজ্ঞপ্তি সংবাদকর্মীদের হাতে দেওয়া হয়। সেখানে তুলে ধরা হয় তিনটি দাবি- বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সময় বৃদ্ধি করে সুন্দর নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ও বর্তমান তফসিল বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা করে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করা।
‘কেন এই দাবি’ শিরোণামে লিখিত বক্তব্যের একটি অংশে নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তারা-
তাঁদের দাবি :
১. জেলা-বিভাগ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপ
২. ক্লাব ক্যাটেগরির মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের বেশির ভাগেরই নির্বাচন বর্জন করা।
৩. বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই কাউন্সিলরদের যোগ্যতার ক্যাটেগরি নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসকদের কাছে বিসিবি সভাপতির চিঠি প্রধান করা
৪. নির্ধারিত সময়ের পরও সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ করায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা
৫. ১৫ ক্লাবের ভোটাধিকার রদ করা, অথচ রিটকারী সভাপতির সময়েই ক্লাবগুলি সবশেষ লিগে অংশ নিয়েছিল
৫. দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলরদের আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ।
লিখিত সেই বক্তব্যের শেষে উল্লেখ করা হয়, বিতর্কিত নির্বাচনের নীলনকশা বাতিল না করলে কোনো ক্লাব আসন্ন মৌসুমে ক্রিকেট খেলবে না। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। কাউন্সিলর তালিকা নিরপেক্ষভাবে করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু (ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর), মাসুদউজ্জামানসহ একাধিক সংগঠক। সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাসুদউজ্জামান জানান তারা দুয়ার খোলা রেখেছেন, যাতে আলোচনার মাধ্যমে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বাড়িয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়।
“আমরা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছি সেগুলো ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক। এগুলো না মানা হলে স্পষ্টভাবে একটা বার্তা যাবে—দেশের ক্রীড়াঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার ও কর্মীদের রুটিরুজিতে আঘাত লাগবে। আমরা চাই খেলা চলুক। কিন্তু যদি সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে লিগে না খেলার পথই নিতে হবে।”
নির্বাচনে সরকারপক্ষের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে গত বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তামিম ইকবালসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী। শুক্রবার মধ্যরাতে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদলও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। শনিবার বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন তিনিও।
নাটকীয় এই সিদ্ধান্তের কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন সংক্ষিপ্তভাবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরে কোনো এক সময় কথা বলবেন বলে জানান এই ক্রীড়া সংগঠক।
‘‘আমি ইতোমধ্যে সব জায়গায় জানিয়ে দিয়েছে, যেখানে যেখানে জানানো দরকার। আমি নিজেও মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছি। আমার অফিসের এজিএম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছে, তারা প্রত্যাহার করতে দেয়নি। আমি আসলে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলাম। আমরা সবাই আসলে একই জায়গায়। আমি আসলে দেখতে চেয়েছিলাম ওরা কত পর্যন্ত যেতে পারে।”
“আমার মনে হয় সময় হলে বলব। কিছু আনটোল্ড স্টোরি আছে। আমি সবার সামনে বলতে চাই না। আমার মনে হয় আমি চেষ্টা করেছি একটা সুষ্ঠু ভোট দেখার জন্য। আমাকে হয়তো সবাই ভুল বুঝতে পারে যে, দুই দিন আগে কেন প্রত্যাহার করিনি। আমি শুধু দেখতে চাচ্ছিলাম, ওরা কতটুকু নিচে নামতে পারে।”
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল গত বুধবার দুপুরে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় কাগজে-কলমে তার নাম ভোটের ব্যালটেই থাকবে। কোনোভাবে যদি নির্বাচিতও হয়ে যান, তবু নতুন বোর্ডে যোগ দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।