সাংবাদিকদের সমস্যা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকে যে সংগঠনটি জন্ম লাভ করেছিলো ষাটের দশকে, তার নাম সিইউজে বা চিটাগাং ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস; বাংলায় বলি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন বা চসাই। কলকারখানায় শ্রমিকদের যেমন মালিক পক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করার জন্য শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠে, বিভিন্ন অফিসে কর্মচারীরাও তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য গঠন করেন কর্মচারী ইউনিয়ন। ক্রমে শ্রমিক সংগঠনগুলি জঙ্গিরূপ পরিগ্রহ করে এবং হরতাল ধর্মঘট ইত্যাদি কর্মসূচি চলতে থাকে। সুতরাং শ্রমিকদের দেখাদেখি সাংবাদিক সংগঠনও সাংবাদিকদের দাবি দাওয়া মিটানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন-ধর্মঘট, কলম বিরতি, অনশন, অবস্থান ধর্মঘট ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে মালিকদের কাছ থেকে দাবি দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করেন। সাংবাদিকদের ইউনিয়নকে বলা হয় হোয়াইট কলার ট্রেড ইউনিয়ন। মিল কারখানার শ্রমিক যারা কায়িক শ্রম দেন তাদের মত সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নয়। সাংবাদিকেরা কায়িক শ্রম দেন না, তাদের কাজ মস্তিষ্কের কাজ অর্থাৎ তারা মানসিক শ্রম দেন।
সিইউজে’র জন্ম গত শতাব্দীর ষাট দশকে হলেও সিইউজে প্রকৃত পক্ষে একটি ট্রেড ইউনিয়নের রূপ লাভ করে স্বাধীনতার পরে। তখন তিনটি পত্রিকা চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ু দৈনিক মিছিল, দৈনিক দেশ বাংলা ও দৈনিক স্বাধীনতা। এই তিন পত্রিকার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার হাট জমে ওঠে, অনেক নতুন মুখ সাংবাদিকতা করতে এগিয়ে আসেন। মৃণাল চক্রবর্তী, শামসুল হক হায়দরী, ওসমান গণি মনসুর, আ জ ম ওমর, খ ম বশির, স্বপন মহাজন, এটিএম মোদাব্বের, সুখময় চক্রবর্তী, অঞ্জন কুমার সেন এই সময়ের সাংবাদিক। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে নয়াবাংলা প্রকাশিত হলে এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন, যাঁরা শুধুমাত্র সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নব প্রকাশিত এই পত্রিকায় যোগদান করেছিলো। নয়াবাংলার চাকরিই ছিলো তাঁদের জীবন ও জীবিকার নির্বিকল্প অবলম্বন। তাঁদের নির্বাহী সম্পাদক হাবিবর রহমান খান ও বার্তা সম্পাদক নোমান সাহেবও ছিলেন খেটে খাওয়া পেশাজীবী সাংবাদিক। হাবিবুর রহমান খান সাহেব সিইউজে প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকেই সিইউজের অন্যতম মুখ্য কর্মকর্তা ছিলেন। আর নোমান সাহেব ছিলেন বন্দরের ট্রেড ইউনিয়ন লিডার। এ কারণে পত্রিকাটিকে আশ্রয় করে ট্রেড ইউনিয়ন গ্রো করে। নয়াবাংলার মাধ্যমে যাঁদের সাংবাদিকতায় আগমনের ফলে সিইজে’র কর্মকাণ্ডে গতিবেগ সঞ্চারিত হয় এবং পূর্বে ঢিলেঢালা সংগঠনটি ছিলো, সেটি এখন সংহত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম আমার মনে পড়ছে তারা হলেনু অঞ্জন কুমার সেন (অঞ্জন তখনও দৈনিক স্বাধীনতায় ছিলেন, পরে তিনি নয়াবাংলায় আসেন, সেখান থেকে আমি তাঁকে দৈনিক পূর্বকোণে নিয়ে যাই), শহীদ উল আলম, জামাল উদ্দিন ইউসুফ, মোয়াজ্জেমুল হক, জসিম চৌধুরী সবুজ, নির্মল চন্দ্র দাশ, সাইফুদ্দিন খালেদ, মিলন দেব প্রমুখ। আজাদী থেকে হেলাল উদ্দিন চৌধুরীও সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজকর্মে গভীরভাবে নিজেকে নিবেদিত করেন।
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেনের সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটে, যে ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা সিইউজের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হলে আন্দোলন আরম্ভ করেন। এটাই প্রথম চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন; বিএফইউজেও এই আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়ে। বিএফইউজে নেতৃবৃন্দ প্রতিদিনের আন্দোলনের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন। তখন বিএফইউজের সভাপতি ছিলেন রিয়াজউদ্দিন আহমদ, সিইউজে’র সভাপতি ছিলেন মাহবুব উল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর।
যে ঘটনায় সাংবাদিকরা জ্বলে উঠেছিলেন, তা হলো দৈনিক স্বাধীনতায় কর্মরত অবস্থায় অঞ্জন কুমার সেনের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ দুর্ব্যবহার করেন। অঞ্জন কুমার সেন যেন তখন স্বাধীনতার স্টাফ রিপোর্টার। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিএফইউজের অনুরোধে জেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সংশ্লিষ্ট পক্ষাদ্বয়কে উক্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বৈঠকে সাংবাদিক অঞ্জন সেন, সিইউজের নেতৃবৃন্দ, স্বাধীনতা কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনাটি সিইউজের ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন হয়ে আছে। অতঃপর সাংবাদিক ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে সিইউজের আপসহীন সংগ্রামী চরিত্র ক্রমশ প্রকটিত হতে থাকে। আর কখনও সিইউজে আপসের চোরাগলি পথে প্রবিষ্ট হয়ে সংগ্রামের ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি।
নয়াবাংলার মাধ্যমে এক ঝাঁক সাংবাদিকের আগমনে সিইউজে শক্তিশালী হয়ে ওঠার কথা আমরা বলেছি। এছাড়া আরও যাদের কারণে সিইউজে শক্তিশালী ইউনিয়নে পরিণত হয়, তাঁরা হলেন ু প্রবীণ ওবায়দুল হক (ওবায়েদ ভাইও সম্ভবত সিইউজের প্রথমদিকের অফিস বেয়ারার; নজির আহমদ, পূর্বদেশের নুরুল ইসলাম, কাজী জাফরুল ইসলাম, মাহবুব উল আলমও; হয়তো মঈনুল আলম, সায়ফুল আলম, বি এ আজাদ ইসলামাাবাদী ও মঈনুল আহসান সিদ্দিকীও তাই), মাহবুব-উল-আলম, অরুণ দাশগুপ্ত, মোহাম্মদ ইউসুফ, নাসিরুল হক, স্বপন মহাজন, আতাউল হাকিম, মুহাম্মদ ইদ্রিস, নিজাম উদ্দিন আহমদ, নূর মোহাম্মদ রফিক, স্বপন দত্ত, মোস্তাক আহমদ, নওশের আলী খান, মোস্তাক আহমদ, নুরুল আমিন, ফারুক ইকবাল, আবু তাহের মুহাম্মদ, রাশেদ রউফ, জহিরুল হক, খোরশেদ আহমদ, ওমর কায়সার, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কলিম সরওয়ার, শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, অনুপ খাস্তগীর, নাজিম উদ্দিন শ্যামল, আবদুল আজিজ, জালাল উদ্দিন চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। পরে ডেইলি লাইফ প্রকাশিত হলে সেখান থেকেও যে সাংবাদিকরা সিইউজেকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখেন, তারা হলেন ু মুকুল শর্মা, জেমস, ইস্কান্দর আলী চৌধুরী, মঈনুদ্দিন নাসের, বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, নুরুল আলম, জিয়াউল হক প্রমুখ। পূর্বতারা থেকে ছৈয়দ মোস্তফা জামাল, আবু সুফিয়ান, আবুল কাশেম চৌধুরী (বর্তমানে আইনজীবী) এবং মিহির করও এসে সিইউজের দল ভারি করেন।
তবে স্বাধীনতার পর সিইউজের কর্মকাণ্ডে যে প্রাণচাঞ্চল্য আসে, সেটার জন্য ঢাকা থেকে আগত আখতার-উন-নবী ও আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়াকে কিছুটা কৃতিত্ব দিতে হয়। আখতার-উন-নবী দৈনিক বাংলার বাণীর চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্ব নিয়ে আসেন, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া বাসস অফিসে আসেন। তারা চট্টগ্রামের সিইউজের নেতৃবৃন্দকে সাহস ও শক্তি যোগান। ষাটের দশকের বিশিষ্ট সাংবাদিক, যাদের নাম আমি ইতিমধ্যে উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছি, যেমন নজির আহমদ, নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী—তাঁরাও তাঁদের মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সিইউজে নেতৃবৃন্দকে নৈতিক সমর্থন, সাহস ও শক্তি জোগান। ইমামুল ইসলাম লতিফি, ইসকান্দর আলী চৌধুরী, ওসমান গণি মনসুর, জাহিদুল করিম কচি, আ জ ম ওমর, শামসুল হক হায়দরী, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম (সন্দ্বীপ)-এঁদেরও অবদান স্বীকার করতে হবে সিইউজের বিকাশে।
সাংবাদিকদের রুটি রুজির আন্দোলন ছাড়াও সিইউজে জাতীয় সমস্যা নিয়েও সিইউজের ভাবনা-চিন্তা ও উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় বিভিন্ন সময়ে এবং জাতিকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে পথ নির্দেশের চেষ্টা করে। জাতির ক্রান্তি লগ্নে সিইউজে তার সীমিত সম্পদ ও শক্তি নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠে; প্রয়োজনে রাজপথে নেমে আন্দোলন গড়ে তোলে। এভাবে জাতির ক্রান্তিকাল উত্তরণের পথ নির্দেশ করে সিইউজে জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সিইউজে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে এবং গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর মুসলিম ইনস্টিটিউটে একটি সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় সংকট উত্তরণে সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করে।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩ ও ৪ ডিসেম্বর মুসলিম ইনষ্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনার সরকারী ও বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছিল যেন এক বিকল্প পালামেন্ট। দু’দিনব্যাপী এই সেমিনার উদ্বোধন করেন নব্বুইয়ের গণ অভ্যুত্থানের শহীদ ডাঃ শামসুল আলম খান মিলনের সহধর্মিনী মিসেস মাহমুদা আলম কবিতা। উভয় দিনের অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে সাড়া জাগিয়েছে ব্যাপকভাবে।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। এই অভিমতটিই বেরিয়ে এসেছিল চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়োজিত “গণ অভ্যুত্থানের এক বছরঃ সাফল্য ও ব্যর্থতা” শীর্ষক সেমিনারে আলোচকদের কাছ থেকে।
দু’দিনের সেমিনারে প্রাণবন্ত আলোচনায় যাঁরা অংশ নেন তাঁরা হচ্ছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা আবদুস সামাদ আজাদ, পূর্তমন্ত্রী ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সাইফুদ্দীন আহমেদ মানিক, রাশেদ খান মেনন এম, পি, এডভোকেট শামসুল হক চৌধুরী, ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন, বি এফ, ইউ, জে সভাপতি রিয়াজউদ্দীন আহমদ, হাসানুল হক ইনু, বিমল বিশ্বাস, আতাউর রহমান খান কায়সার, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ডাঃ এ, এফ, এম, ইউসুফ, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুদ্দীন জাহেদ মঞ্জু, অধ্যাপক আবুল মোমেন, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এডভোকেট বদরুল আনোয়ার, ডাঃ এ, কিউ, এম, সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আতাউল হাকিম, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। সেমিনারের উভয়দিনে সভাপতিত্ব করেন সি ইউ জে সভাপতি আখতার উন-নবী, প্রবন্ধ পাঠ করেন কাজী জাফরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ইদ্রিস ও হেলাল উদ্দীন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেমিনার প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এম, নাসিরুল হক এবং সেমিনার পরিচালনা করেন সি ইউ, জে সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন কুমার সেন ।
সেমিনারে মৌলিক অধিকার বিরোধী আইনের উপর আলোচনাকালে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ফৌজদারী দণ্ডবিধি সংশোধনী আইন, অষ্টম সংশোধনী আইন, ইনডেমনিটি এ্যাক্ট, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচকগণ রেডিও, টিভির স্বায়ত্বশাসন সহ তিন জোটের রূপরেখার সকল শর্তাবলী বাস্তবায়নে ঐকমত্যের ধারা গড়ে তোলার জন্যে আহবান রাখেন। সেমিনারে অধিকাংশ আলোচক ক্ষমতাসীন বি, এন, পি সরকারের একলা চলো নীতি ও ‘অগণতান্ত্রিক’ কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীগণ তাঁদের আলোচনায় এরশাদীয় নীতিমালা অনুসরণ করার জন্যে সরকারের সমালোচনা করেন। তারা অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ বাতিলেরও সমালোচনা করেন ।
পক্ষান্তরে সরকারী দলের বক্তারা সে অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, অধ্যাদেশ বলে উপজেলা পরিষদের সৃষ্টি এবং অধ্যাদেশ বলেই তা বাতিল করা হয়েছে। এই সরকার জনগণের প্রত্যাশার বাইরে কোন কাজ করছে না। সেমিনার ছাড়াও গণ আন্দোলনের উপর দু’দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীতে চট্টগ্রামের আলোকচিত্র সাংবাদিকদের ছবি স্থান পায়।
আজকে দেশে আরেকটি ক্রান্তিকাল চলছে। এখনও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার কথা বলা হচ্ছে। তবে এই ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা যারা চালাচ্ছেন তারা বলছেন বটে জাতীয় ঐকমত্যের কথা, কিন্তু জাতির সকল অংশের প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে নেই এবং সকল অংশের মতামতও তারা গ্রহণ করছেন না। তারা পতিত স্বৈরাচার বলে আওয়ামী লীগকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। শুধু দূরে সরিয়ে রাখা নয়, তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা প্রতিদিন আওয়ামী লীগ ও এই দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করছেন এবং তাদের নামে বিভিন্ন মামলা দিচ্ছেন, হুলিয়া জারি করছেন।
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে দেশ পরিচালনার জন্য যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে সরকারি প্রচেষ্টায় জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটার আশা দুরাশা ছাড়া আর কিছু নয়। আওয়ামী লীগের নামে ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার যে অপবাদই তারা দিন না কেন, আওয়ামী লীগ যে দেশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না এবং অস্বীকার সম্ভব না হলে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোন জাতীয় ঐকমত্যও সৃষ্টি হবে না।
এই পরিস্থিতিতে সিইউজে কী ৯১-এর মত কোন সেমিনারের আয়োজন করতে পারে ? যদিও এখন আমাদের মধ্যে দুটি ইউনিয়ন, তথাপি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সিইউজে এবং সিএমইউজে কী যৌথভাবে উক্ত সেমিনার আয়োজনের জন্য উদ্যোগী হতে পারে ? প্রশ্ন উঠতে পারে ঢাকায়ও তো ইউনিয়ন আছে এবং আমাদের ফেডারেল ইউনিয়নও সেখানে; তারা যখন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না; তখন আমরা চট্টগ্রাম থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া কতটুকু সমীচীন হবে ? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, ঢাকা দেশের রাজধানী এবং আমাদের রাজনীতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হলেও ঢাকা সব সময় জাতীয় সংকটে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। আমি একটি উদাহরণ দেব-৪৭-এ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ হলে চট্টগ্রাম থেকেই মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও সুচরিত চৌধুরী ‘সীমান্ত’ নামে একটি সাময়িকী বের করেছিলেন, যার উদ্বোধনী সংখ্যায় পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষের বাণী প্রকাশ করা হয়েছিলো এবং সাময়িকীর প্রচ্ছদে প্রফুল্ল ঘোষের উক্ত বাণী ছাপা হয়েছিলো। দেশভাগ এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রতিবাদ করতেই চট্টগ্রাম থেকে দু’জন বুদ্ধিজীবী একটি সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন। দেশের আর কোথাও এমনিভাবে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম থেকেই একটি সংস্কৃতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। বয়োবৃদ্ধ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ উক্ত সম্মিলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। মার্চ মাসে সম্মেলন হয়েছিলো এবং পশ্চিম বঙ্গ থেকে সাহিত্যিক গোপাল হালদার, আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক সত্যনাথ মজুমদার সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
ইস্কান্দর ভাই, মনসুর ভাই, কচি ভাই, হায়দরী ভাই, শাহনেওয়াজ, শফিউল আলম, মুস্তফা নঈম, কাশেম মাহমুদ খোকন-সিএমইউজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নাসির ভাই (নাসিরুল হক), রিয়াজ হায়দার, মোস্তাক আহমদ, নুরুল আমিন, শহীদ উল আলম, অঞ্জন কুমার সেন, ফারুক ইকবাল, নাজিম উদ্দিন শ্যামল, ওমর কায়সার কথা বলতে পারেন।








