বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে হ্রদ কিংবা নদীর জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী পাহাড়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ‘বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়।
পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের সব দুঃখ-বেদনা,, গ্লানি, হিংসা, বিভেদ নদীর জলে ভেসে যাবে। আর নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীদের।
এদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলবিজু উপলক্ষে শহরের রাজবন বিহার ঘাট, গর্জনতলী মধ্যদ্বীপ, কেরানি পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান উদযাপন কমিটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো হয়। উৎসবপ্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায়ের এই উৎসব।
উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং কলাপাতায় করে পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। পানিতে ফুল ভাসিয়ে নিজ পরিবার এবং দেশ তথা সমগ্র জীবের মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।
বৃহত্তম এই সামাজিক উৎসব পালনে ব্যস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিটি পল্লী। ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু, এভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে উদযাপন করে। যা ‘বৈসাবি’ নামে সর্বাধিক পরিচিত।
ফুল ভাসাতে আসা পাপিয়া চাকমা বলেন, ‘ফুল বিজুর দিনে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদন আমাদের ঐতিহ্য। পাশাপাশি আজকে থেকেই বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগামীকাল মূল বিজু এবং পরশু পহেলা বৈশাখ পালন করবো। ফুল ভাসিয়ে আমরা গঙ্গাদেবীর কাছে সুখ ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা করি।’
রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘ফুল ভাসানোর মাধ্যমে সম্প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। সামনের বছর যাতে সবার ভালো কাটে, সুস্থভাবে কাটে এই প্রার্থনায় ফুল ভাসানো হয়।’ পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত।
প্রসঙ্গত, এই উৎসবকে চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু , ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ সাংগ্রাই, মারমারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু এবং কোনও কোনও জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকেন। বৈসুকের ‘বৈ’, সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ এবং বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে সংক্ষেপে উৎসবটিকে পালন করা হয় ‘বৈসাবি’ নামে।
এদিকে
পুরাতন বছরের দুঃখ, জরা, গ্লানি ও হতাশা মুছে নতুন বছরে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সানন্দের প্রত্যাশায় মাইনী নদীর জলে ফুল ভাসিয়ে খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলায়ও শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক ও প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) ভোর দীঘিনালা উপজেলার মাইনি সেতু এলাকায় নদীর ঘাটে চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী সহ সকল জাতি, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে তরুণ-তরুণীদের ফুল ভাসাতে দেখা যায়। এসময় পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।