২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া লাইফ ইন এ মেট্রো ছবির আলবিদা শিরোনামের গানের লাইন এটি। (উল্লেখ্য বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী জেমসের গাওয়া)। সত্যিই তো আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের ব্যবধান শুধু। রাত বারোটায় বিভিন্ন আলোর রোশনায় আতশবাজিতে রাতের আকাশটা রঙিন হয়ে উঠবে। কিন্তু ১১:৫৫ মিনিটে ২৪ শেষবারের জন্য আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। আর মাত্র কিছুক্ষণ তারপরে এক নতুন বছর নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে ২৫ আমাদের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জীবন যুদ্ধের এক প্রান্তে আমি বা আপনি অন্যদিকে ২৪।
২৪ আমাদের আলবিদা জানাচ্ছে। বিদায় হে বন্ধু বিদায়। ২৪ হয়তো মুচকি হেসে আলবিদা গানের বুলি আওড়াবে ‘কেয়া সোচা অর কাহা আলবিদা’। ব্যস্ত এই দুনিয়ায় ২৪ কে বিদায় দেওয়ার সময়টুকু আমাদের নেই আমরা ব্যস্ত আরেকটি বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। ভেবে দেখুন আমার মত আপনিও কত আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এবছর পথ চলা শুরু করেছিলেন। চলতে চলতে পথে আমাদের কত সাফল্য এসেছে এবং সেই সাথে ব্যর্থতা ও এসেছে বটে। কিন্তু বছর শেষে অপ্রাপ্তিগুলো যেন মনটাকে বিষন্ন করে তোলে কি পেলাম আর কি হারালাম।
সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর রহমতে আমরা অনেকে অনেক কিছু পেয়েছি সেই সাথে চলার পথে অনেক আপনজন কাছের মানুষদেরও হারিয়েছি। এরাই সেই মানুষ যারা অন্তহীন যাত্রায় আমাদের সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। ২৪ যেন এক আহত সৈনিক সে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলছে আমি তোমাদের থেকে বিদায় নিতে এসেছি। ২৪ কে কেমন যেন রক্তাক্ত মনে হল। সে অভিমানের সুরে বলতে লাগলো থামাতে পারলে কি তোমরা ফিলিস্তিনের আর ইসরাইলের যুদ্ধ? পারলে কি স্বাধীনতা কামি মানুষদের মুক্তি দিতে।
লাঘব করতে পারলে কি মজলুমদের আর্তনাদ ।গাজায় ছোট্ট শিশুটির রক্তের দাগ আজও শুকায়নি, ভুলে কি যাও শহীদ হওয়া সেই সন্তানদের যারা আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছিল। তবে কিসের এত আয়োজন কেন আজ এই বিষাদের আকাশকে আজ তোমরা এত রঙিন করে তুলছো? নিজের অন্তরকে প্রশ্ন করে উপলব্ধি কর সত্যিই কি এই পৃথিবী শান্তিতে আছে? আমি নিশ্চুপ কিছুই বলে উঠতে পারিনি তাকে।
সত্যিই তো ২৪ তো এক ইতিহাস। অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তা বটেই। ২৪ যেন ইতিহাসের পাতায় এক মুকুট বিহীন ট্রাজেডি রাজকুমার। সত্যিই তো আমরা গাঁজায় সেই ছোট্ট শিশুটির কষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, যে বলছিল তার সাথে তার ছোট ভাইয়ের জান্নাতে দেখা হবে। পেরেছে কি? পারিনি।
নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ইলেকট্রন যেমন ঘুরছে তেমনি ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে আমরা এক সার্কেলে পড়ে গেছি কোথায় গিয়ে থামবো কেউ জানিনা। কিন্তু মানুষ আজও আশা দেখে কারণ ওটা নিয়েই তো বেঁচে থাকা।
জীবনটা যেন আসলে ক্রিকেট খেলার মত এখানে আমরা সকল সমস্যাকে ‘রাহুল দ্রাবিড়ের’ মতো ডিফেন্ড করে যাচ্ছি, কিন্তু পিচে টিকে থাকাটাই আসল। এ যেন এক টেস্ট ম্যাচ। খেলাই যেমন সেঞ্চুরি করে প্লেয়ার প্যাভিলিয়নে ফিরে যায় কিন্তু পরের ম্যাচে তাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হয় মানুষও তেমন শূন্য থেকে শুরু করবে এক নতুন লক্ষ্যে।
হ্যাঁ ঠিক কালকে এক নতুন সকালেই আবারো কোন এক চায়ের দোকানদার তার দোকান খুলবে, ফুলের দোকানে ফুল সাজানো হবে, ছোট বাচ্চাটির হাত ধরে বাবা তাকে স্কুলে নিয়ে যাবে, রিক্সাওয়ালার প্যাডেল ছুটবে, গাড়ির চাবিটা আলতো করে ঘুরাবে ট্যাক্সিওয়ালা, মুচি সাই করে জুতো পালিশ করবে, মক্তব থেকে শুনতে পাব কুরআনের তেলাওয়াত, আবার কোন এক ব্যর্থ প্রেমিককে অবসাদ ঘিরে ধরবে, বন্ধুদের আড্ডা হাসিতে মেতে উঠবে আড্ডার স্থান, গোলাপ হাতে প্রেমিক দাঁড়িয়ে থাকবে তার প্রেয়সী অপেক্ষায়।
সবই চলতে থাকবে। তবে যে রোশনাই এর আলোতে আমরা আকাশকে রঙিন করেছি তা ছড়িয়ে দিতে হবে মানুষের মনে। ছড়িয়ে দিতে হবে মানবিকতার আলো। জাত -পাত নির্বিশেষে আমরা সবাই এক কারণ সৃষ্টিকর্তার কাছে কারোর কোন ভিন্ন পরিচয় থাকে না। আমরা সবাইকে যে এক ।
ওই দূরে সূর্যটা অস্ত যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর আর দেখা যাবে না কালের পরিক্রমায় আমরাও হারিয়ে পরবো এই সূর্যের মতো। আজ ২৪ আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে একদিন আমরা হয়তো বিদায় নেব এই পৃথিবী থেকে।
ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খান সাহেবের কাওয়ালীর লাইনে যেমন বলা হয়েছে ‘আলবিদা হো গেয়ে দেখতে দেখতে’। সূর্যটা মেঘের আড়ালে ধীরে ধীরে ঢেকে পড়ছে ২৪ ও চলে যাচ্ছে মনে হল সে যেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইনের মত বলছে –
ফিরিবার পথ নাহি
দূর হতে দেখো চাহি
পারিবে না ছিনিতে আমায়
হে বন্ধু, বিদায়।
আলবিদা ২৪ তুমি থেকে যাবে ইতিহাসের এক অখন্ড অংশ হয়ে।
সকলকে শুভকামনা। সুন্দর, সুস্থ এবং শান্তির হোক আমাদের আগামী বছর ২০২৫।