চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেছেন, এই শিক্ষার আলো বিকিরিত হবে শত বছর থেকে হাজার বছর। সূচিত হলো নতুন ইতিহাস। এটি নিছক একটি স্কুল উদ্বোধন নয়, এটা এলাকার সত্যিকার মানিকের প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান। এটি এই জনপদে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ আন্দারমানিকে স্থাপিত আন্দারমানিক উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আন্দারমানিক এলাকার জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিদ্যালয়টি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এই এলাকায় নতুন করে একটা ইতিহাস রচিত হল। আমি মনে করি এটি নিছক একটি স্কুল উদ্বোধন নয়, আন্দার মানিক এলাকার সত্যিকার মানিকের প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান। স্কুলবিহীন ৭/৮ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে এই উচ্চ বিদ্যালয়ের শুভ সূচনার মাধ্যমে সূচিত হলো নতুন ইতিহাস। স্কুলটি এই জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে এই এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, এই শিক্ষার আলো বিকিরিত হবে শত বছর থেকে হাজার বছর ধরে এই প্রত্যাশা করি। আজকের এই গৌরব উজ্জ্বল মুহূর্তের অংশীদার হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন হারুয়ালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভুজপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী শিপন। বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক এমএ আব্দুল মান্নান, খায়রুল বশর, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল দে, এমএ মোমেন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম সিকদার, আতাউল করিম, মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ও মোহাম্মদ ইলিয়াস সানি মুন্না।
অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় দৈনিক আজাদীর ফটিকছড়ি প্রতিনিধি মোহাম্মদ জিপন উদ্দিনসহ পাঁচজনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, পাহাড় টিলা বেষ্টিত প্রত্যন্ত একটি এলাকা। এলাকার জনগোষ্ঠীর শতকরা ৮০ জনের পেশা কৃষি। এ এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগই উপজাতি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রায় ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে গিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে হয়। এতদূর গিয়ে অনেকই লেখাপড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে এলাকার সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। অবশেষে সেই স্বপ্নের স্কুল গড়ে উঠেছে।স্কুল গড়ে উঠা অঞ্চলটি হল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চল হারুয়ালছড়ির আন্দার মানিক ও বড়বিল এলাকা।
স্থানীয় ও বিত্তবানদের দেয়া জমি, অনুদান এবং নানাজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো আন্দারমানিক উচ্চ বিদ্যালয়। এরই মধ্যে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। অতীতে উচ্চ বিদ্যালয় না থাকার কারণে ১০/১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়তে হতো এসব শিক্ষার্থীকে। অতদূরে গিয়ে পড়ালেখা করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হত না বলে শিক্ষার আলো থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কারণে নাতিংগা পাড়া, ফটিকছড়ি ত্রিপুরা পাড়া, উজান পাড়া, খামার পাড়া, মাজার পাড়া, টিলা পাড়া, বৈদ্দের খামার, পিনপিনিয়া, ডেবিলি খুল, আনন্দ পুর, আছরের ডেবা, সন্ধিপনগর, আদর্শ গ্রাম, আন্দারমানিক, বেতুয়ার খিলের ছেলে-মেয়েরাসহ আশপাশের প্রায় ১৫ কিলোমিটারের ভিতরের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।