চট্টগ্রাম -২ (ফটিকছড়ি) আসনে লড়ছেন ৮ প্রার্থী। রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটাররা ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচনে লড়ছেন নৌকা নিয়ে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (তরমুজ), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ (একতারা),ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মীর মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম (চেয়ার),বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ্ (মোমবাতি),জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিউল আজম চৌধুরী (লাঙ্গল),স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান (ঈগল) ও মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (ফুলকপি)। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (বিটিএফ)চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ফুলের মালা প্রতীকে প্রচারণা চালালেও পরবর্তী তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এখন অপেক্ষার পালা ৮ প্রার্থীর মধ্যে কে পড়তে যাচ্ছেন জয়ের মালা।
এদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। ১৪২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। তারমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে ২২ টি কেন্দ্র। কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১০৮ টি এবং সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়েছে ১২টি।
ভোট গ্রহণের কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ঝুঁকি বিবেচনা করে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন থাকবে।
নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজন মনে হলে রিটার্নিং অফিসারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও র্যাব টহলে থাকবে।
এছাড়া নির্বাচনে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে ।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে ১০ ম্যাজিস্ট্রেট, ১০ প্লাটুন বিজিবি, ২ প্লাটুন র্যাব দায়িত্বে থাকবে। নির্বাচনের দিন প্রতি ৩ ইউনিয়নে ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তবে শুধুমাত্র বাগানবাজার ১ ইউনিয়নে ১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা, স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রতি ভোট কেন্দ্রে ২ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
ফটিকছড়ি (ওসি) অফিসার ইনচার্জ মীর মোহাম্মদ নরুল হুদা বলেন, পুলিশ নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত আছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা শক্ত হাতে দমন করব।
এদিকে উত্তর চট্টগ্রামের এই আসনে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সময়ে এসে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছে প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা। কোথাও হেঁটে হেঁটে, আবার কোথাও গাড়িতে করে গেছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন নেতাকর্মী, তাদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনরাও। ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দিয়েছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।
আওয়ামীলীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সানি নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁর প্রচারণার অন্যতম আকর্ষণ নৌকা আকৃতির গাড়ি করে নির্বাচনী প্রচারণার মাইকিং। প্রচারণার শেষে সময়ে তিনি ফটিকছড়ি পৌরসভা, নাজিরহাট পৌরসভা, নানুপুর, আজাদীবাজার সুন্দরপর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। এ সময় তিনি নিরাপদ ফটিকছড়ি গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট কামনা করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা এইচ এম আবু তৈয়বও তরমুজ মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় সরব ছিলেন। তিনি প্রচারণার শেষে সময়ে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তিনি নির্বাচিত হলে অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফটিকছড়ির উন্নয়নে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
গত ৪ জানুয়ারি ফটিছড়ির হেঁয়াকো বাজারে এক পথসভায় অঝোঁরে কেঁদে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আমাকে আপনারা যদি নির্বাচিত না করেন আমি আর আপনাদের কাছে আসব না। আমি জানি, আপনারা আমাকে ভালবাসেন। আমি কসম করে বলছি আমি নির্বাচিত হলে আপনাদের ছেড়ে যাব না। আমি তিন বছরের মধ্যে ফটিকছড়ির চেহারা পাল্টে দেব। আমাকে যদি যোগ্য মনে করেন ৭ তারিখ তরমুজ মার্কায় ভোট দিবেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ( বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীও একতারা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। শেষ সময়ে তিনি বাগানবাজার, নারায়নহাট, সমিতিরহাট, সুয়াবিল, খিরাম, আজাদীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এসময় তিনি ফটিকছড়ির উন্নয়নের রুপরেখা প্রকাশ করে স্মার্ট ফটিকছড়ি গড়ে তোলার জন্য একতারা মার্কায় ভোট কামনা করেছেন।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মো. শাহজাহান ঈগল, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ মোমবাতি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মীর মুহাম্মদ ফেরদৌস চেয়ার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ফুলকপি মার্কা প্রতীক নিয়ে শেষ সময়ে এসে প্রচার- প্রচারণা চালিয়েছেন। তারাও নির্বাচিত হলে ফটিকছড়ির ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
তবে প্রার্থীদের মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ফুলের মালা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে প্রচারণা চালালেও ৪ জানুয়ারি নৌকাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
ফটিকছড়ির আসনে এবারে ভোটার সংখ্যা ৪,৫৬,৪৯০ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৩৯,৯০৪ ও মহিলা ভোটার ২,১৬,৫৮৩ জন। হিজড়া ভোটার ৩ জন। ১৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২ কেন্দ্রকে অধিক ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়ন যাচাই বাছাই করা হয় ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানির তারিখ ছিল ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া ১৮ ডিসেম্বর।
৭ জানুয়ারি (রোববার) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রতিনিধি তার জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে ফলাফল না আসা পর্যন্ত।