খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় কাঁচা মাছ থেকে শুঁটকি তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন সজিব চাকমা নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা। এলাকায় গড়ে তুলেছেন শুটকি তৈরির কারখানা। বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় ভাবে ও অনলাইনে। এতে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
জানা গেছে, জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নে শুটকি তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন সজিব চাকমা। প্রায় এক একর জমি লিজ নিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে কাঁচা মাছ নিয়ে এসে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে তৈরি করছেন শুঁটকি ।তার শুঁটকি তৈরি করা প্রক্রিয়া দেখতে ও কিনতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা। এসব শুঁটকির মধ্যে রয়েছে বেশ জনপ্রিয় ছুরি মাছ, শাপলা পাতা ও হাঙ্গর মাছসহ আরও নানা ধরনের মাছ। ছুরি শুঁটকি ৬শ থেকে ১৪শ টাকা কেজি, শাপলা পাতা ৮শ থেকে ১৪শ ও হাঙ্গর ৪শ থেকে ১৮শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সজিব চাকমা বলেন, আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর অর্থের অভাবে আর পড়ালেখা করতে পারিনি। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতাম। আমি প্রথমে স্থানীয়ভাবে বিষ ও কেমিক্যাল মুক্ত সিদল(নাপ্পি) তৈরি করে বিক্রি করি। এতে দারুণ সাড়া পাই। সিদল(নাপ্পি) শুধু স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা খায়। পাহাড়ি ও বাঙালিদের মাঝে শুঁটকি একটি জনপ্রিয় খাবার। তাই আমি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সামুদ্রিক কাঁচা মাছ কিনে এনে ভালোভাবে পরিষ্কার করে প্রাকৃতিকভাবে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার এ শুঁটকি স্থানীয় লোকজন এসে কিনে নিয়ে যায় এবং অনলাইনেও অর্ডার আসে। এখন পাইকারিভাবে শুঁটকি বিক্রি করিনি। গতমাসে প্রথম বিক্রি করে প্রায় ৭০/৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে পারব।
বাবুছড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমা বলেন, আমার ইউনিয়ন প্রত্যন্ত এলাকায়। সজিব চাকমার মত উদ্যোক্তা নিজের প্রচেষ্টায় সিদল(নাপ্পি) ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অর্গানিক শুঁটকি তৈরি করছে। সজিব চাকমা শুঁটকি তৈরিতে এলাকার বেকার ৮/১০ জন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সজিরেব শুঁটকির চাহিদা বেশি থাকায় তার বাড়ি থেকে অনেকে এসে শুঁটকি নিয়ে যায়। আমি আশা করি তাকে দেখে এলাকার শিক্ষিত বেকার ছেলেরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবে।
দীঘিনালা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর(নিরাপদ খাদ্য) তুজিম চাকমা বলেন, সজিব চাকমা সম্পর্ন অর্গানিকভাবে শুঁটকি তৈরি করছে। স্বাস্থ্যহানী হয় এমন কোন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না তিনি। তারপরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তিন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। কারণ সজিব চাকমা কাঁচা মাছগুলো কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসে সেখানে কোন ধরনের কেমিক্যাল মিশানো হয় কিনা পরীক্ষা করার জন্য।
দীঘিনালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অবর্না চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সম্প্রদায়ের মাঝে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি খুব জনপ্রিয় খাবার। সজিব চাকমা সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রকার কাঁচা মাছ এনে প্রকৃতিকভাবে রৌদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছে। সকল ধরনের পুষ্টির গুনগতমান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের অনুরোধ করা হয়েছে। তবে তিনি যদি কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আড়তদার অথবা জেলেদের কাছে থেকে মাছ আনতে পারত তবে শুটকির স্বাদ গুণ অনেক বৃদ্ধি পেত।