বাঙালিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে মাদরাসার শিক্ষক মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উক্ত মত প্রকাশ করেন সুজন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্যতম কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন একের পর এক জেলাগুলো পাক হানাদার মুক্ত হতে শুরু করে, বাঙালি যখন বিজয় উৎসবের দ্বারপ্রান্তে ঠিক সেই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে দেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাঙালি শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিবর্গ এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। মূলত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে। বুদ্ধিজীবী দিবসে সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন সুজন।
তিনি আরো বলেন, মাদরাসা শিক্ষা এখন আর অবহেলার নয়। মাদরাসা শিক্ষা এখন অগ্রসর শিক্ষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আত্ন মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সারথি হিসেবে কাজ করবে বলে মত প্রকাশ করেন খোরশেদ আলম সুজন।
আলোচনা সভার প্রধান আলোচক রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বিনা উস্কানিতে পাখির মতো মানুষ হত্যা করতে শুরু করে ঠিক তখনই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে জাতিসংঘে অবস্থান নেন রাশিয়া। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রধান সহায়তাকারী দেশ ভারতের সাথে সামরিক চুক্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় রাশিয়া। আর বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়া ছিল বলেই পাকিস্তানের পক্ষে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠানোর সাহস পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিজয় অনিবার্য দেখে পাকিস্তানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুললে রাশিয়া সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয়। তাছাড়া যুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন ও ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ব্যাপক অবদান রাখেন রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
মাদরাসা অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ মুহসিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ। পরে দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর কল্যাণ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।