কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম টানেল নির্মাণ করা হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীÑখ্যাত বন্দর নগর চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের অধিবাসী হিসেবে তো বটেই তাছাড়া এটা আবার নির্মিত হয়েছে আমার এলাকা কর্ণফুলী-আনোয়ারাতেই। তাও স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। সেই হিসেবে আমি আমার এলাকার পক্ষ থেকে, চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এই টানেল নির্মাণের ফলে আমরা ভৌগলিক দিক থেকে অনেক উন্নতির দিকে যাচ্ছি। বিশেষ করে আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কেন জানি আলাদা একটা দরদ আছে। এম এ আজিজ, জানে আলম দোভাষ, জহুর আহমেদ চৌধুরী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এম এ মান্নানসহ আরো অনেক নেতা আছেন। এসব নেতাদের কারণে হোক বা আমাদের আবদারের কারণে হোক উনার একটা নেক নজর চট্টগ্রামের প্রতি ছিল, আছে এবং থাকবে সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাছাড়া চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর এবং অর্থনীতির ভিত্তি। এটাকে সামনে রেখে তিনি চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম টানেল নির্মাণ করেছেন চট্টগ্রামে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারার মধ্য থেকে এই চ্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে যেটা ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন তিনি।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, কক্সবাজার মহেশখালীর মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, এই টানেল সেই সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। তাছাড়া টেকনাফের জিরো পয়েন্টে যে পর্যটন এলাকা করার ঘোষণা ছিল এটার সাথেও এই রাস্তা সংযুক্ত হবে। এই টানেল নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। এবং যেহেতু মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রাস্তাটি সাগরের পাড় ঘেঁষে তৈরি হবে সেহেতু রাস্তার দুপাশে পর্যটন নগর গড়ে উঠবে। তাছাড়া এই টানেল চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এই টানেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে এবং ব্যাপক সাড়া পড়বে। আপনারা হয়তো জানেন বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের মিরসরাইতে যে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছেন সেখানেও একটা লিংক রোড তৈরি করা হবে যেটা পতেঙ্গা লিঙ্ক রোডের সাথে সংযুক্ত হবে। এটা বিশেষ করে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মালামাল আনয়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে। সে সাথে রাস্তাটি যেহেতু সাগরের কোল ঘেঁষে হবে সেহেতু পর্যটকদের জন্যও অন্যতম আকর্ষণের হবে।
কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী আনোয়ারা বাঁশখালী তথা সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হবে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুচিন্তা চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন আনোয়ারা এলাকায় একটা অর্থনৈতিক জোন করার কথা ছিল। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারী প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সুযোগ্য সন্তান মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সেটা তত্ত্বাবধান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এখানে এই শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠলে এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে, লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তদুপরি গার্মেন্টস সেক্টরও অনেক প্রসারিত হবে। এমনিতেই কর্ণফুলী এলাকায় রড, সিমেন্ট, গ্যাস, কেমিক্যাল থেকে শুরু করে অনেকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। তারমধ্যে টানেল সংযোগ নির্মিত হওয়ায় এই অঞ্চলে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ ও কৃতঞ্জতা জানাই। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম টানেলটি নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামে। যেটার একদিক চট্টগ্রাম শহরে পতেঙ্গায় এবং আরেক দিক আনোয়ারায়। এটা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। আমাদের জানার আগ্রহ ছিল এটি কেন করা হয়েছে। আমরা এক সময় মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, আমেরিকা গেলে উপর দিকে তাকিয়ে থাকতাম মেট্্েরারেল দেখার জন্য। আমরা তখন ভাবতাম এটা কিভাবে সম্ভব। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেগুলো এখন আমাদের দেশে বাস্তব করে দেখিয়েছেন। টানেল দেখার জন্য আমরা দুবাইতে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কিন্তু এখন এটা প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন। তাও চট্টগ্রামে। এটা আমাদের অর্থনৈতিক অনন্য উন্নতির ধাপ। এটার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি।
লায়ন হাকিম আলী
পরিচালক
ডায়মন্ড সিমেন্ট লি.
চট্টগ্রাম।