সংবাদপত্র প্রকাশনা যখন শোচনীয় অবস্থায় ছিল আনোয়ারুল আলম সংবাদপত্র প্রকাশনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যেসময় সংবাদপত্র প্রকাশ কঠিন ও অলাভজনক ছিল তখন তিনি সাহসিকতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আলম পরিবারের সন্তান এবং একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এ উপমহাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় তখন এ পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল।
সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরাম এর আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক নেতা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকতের সভাপতিত্বে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস. রহমান হলে দৈনিক জমানা’র নির্বাহী সম্পাদক সম্প্রতি প্রয়াত আনোয়ারুল আলমের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন একথাগুলো বলেন।
স্মরণ সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, প্রয়াত আনোয়ারুল আলম বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
স্মরণসভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। মরহুম সাংবাদিক আনোয়ারুল আলমের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন মরহুমের পুত্র মুনতাসির আলম। স্মরণসভায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরামের সদস্য সচিব দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সম্পাদক স.ম. ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মোহিত-উল-আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস, বিএফইউজে সহ সভাপতি শহীদ উল আলম, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক ওমর ফারুক, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অঞ্জন কুমার সেন ও এম. নাসিরুল হক।
মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মুজাহিদুল ইসলাম, ইতিহাসের খসড়া সম্পাদক শামসুল হক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মঈনুদ্দিন কাদেরী দুঃখ করে বলেন, সাংবাদিক আনোয়ারুল আলম ছিলেন নিবেদিত প্রাণ সংবাদপত্র সংগঠক। সাংবাদিকদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। সাংবাদিক দরদী ও বান্ধব ছিলেন তিনি। যে সকল সাংবাদিক আজ দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত তাঁদের অনেককেই তিনি হাত ধরে এ পেশায় এনেছিলেন। তিনি একজন ভাল সাচ্চা ভদ্রলোক ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত আলম পরিবারের সন্তান ছিলেন। উপমহাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতায় যে পরিবারের অবদান উজ্জ্বল হয়ে আছে।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, আনোয়ারুল আলম জীবন যুদ্ধে লড়াই করে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের সেবা করেছিলেন। তখন সাংবাদিকতা ছিল দেশ সেবার ব্রত, সংবাদপত্র ছিল মিশন। ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করা ছাড়া সাংবাদিকতা লাভজনক বা জীবন চলার মত আয়-রোজগারের কোন পেশা ছিল না। যাঁরা সাংবাদিকতা করেছেন বা সংবাদপত্র প্রকাশ করেছেন প্রায় সকলেই কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন। চেতনার দিক থেকে মাহবুব উল আলম, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের অনুসারী ছিলেন আনোয়ারুল আলম। তৎসময়ে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট থাকা সত্বেও আনোয়ারুল আলম তা ত্যাগ করে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত হয়ে দেশ ও গণমানুষের কল্যাণের কাজে সংবাদপত্রের সেবা করে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সেই সময়ে চট্টগ্রামের সংবাদপত্রকে এগিয়ে নিতে যাঁরা স্তম্ভ হিসেবে ছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন আনোয়ারুল আলম।