জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) নতুন মৌসুম মাঠে গড়ানোর সম্ভাব্য তারিখ ২৫ অক্টোবর। কিন্তু এখনও নিশ্চিত নয় আট দলের লিগে অভিষেক হবে নতুন দল ময়মনসিংহের, নাকি রয়ে যাবে পুরনো দল ঢাকা মেট্রো।গত আগস্টে আগের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশের প্রধান চার দিনের ম্যাচের আসরে ঢাকা মেট্রো দলকে বিলুপ্ত করে যুক্ত করা হবে ময়মনসিংহ বিভাগকে। পরে সেটি অনুমোদনও পায়। কিন্তু এরপরই ঢাকা মেট্রোর ক্রিকেটারদের দাবি ওঠে, এই দলকে যেন বাদ না দেওয়া হয়। নিজেদের দাবি নিয়ে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে আলোচনাও করেন তার। সেই দাবি ঘিরেই তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।
ওই ক্রিকেটারদের দাবি ছিল, ঢাকা মেট্রোকে রেখেই প্রয়োজনে দল বাড়িয়ে ময়মনিসংহে সুযোগ দেওয়া হোক। বিসিবির নির্বাচনের পর টুর্নামেন্ট কমিটির কাছ থেকে পাওয়া খবর, বিষয়টি এখন পরবর্তী বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় লিগে দেখা যায়নি ময়মনসিংহ হল। প্রতিবারই কোনো না কোনো প্রক্রিয়াগত অজুহাতে তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এবার সেই অপেক্ষার অবসান হওয়ার ঘোষণার পর চলছে নতুন জটিলতা।
বিসিবি সূত্র থেকে জানা গেছে, টুর্নামেন্ট কমিটি ইতোমধ্যে লিগের খসড়া সূচি তৈরি করেছে, যেখানে ঢাকা মেট্রোর জায়গায় রাখা হয়েছে ময়মনসিংহকে। এবারের এনসিএলের সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে রাখা হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও আউটার মাঠ, খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম, রাজশাহীর বিভাগীয়, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই মাঠ, চট্ট্রগ্রাম বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং বিকেএসপির ৩ ও ৪ নম্বর মাঠ।
বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই বোর্ড সভা হবে, যদিও দিন-তারিখ এখনও চূড়ান্ত নয়। বিসিবি নির্বাচনের পর বোর্ড সভাপতি এখন আছেন মেলবোর্নে। তিনি হয়তো অনলাইনে যোগ দেবেন সভায়।
টুর্ণামেন্ট কমিটির ম্যানেজার আবু ইনাম মোহাম্মদ কায়সার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, জাতীয় ক্রিকেট লিগ এবার আট দল নিয়েই আয়োজনের সম্ভাবনা বেশি।
‘‘২৫ তারিখ থেকে জাতীয় লিগের খেলা মাঠে গড়াবে। আমরা সূচি তৈরি করেছি, সেখানে ময়মনসিংহকে ধরে নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরবর্তী বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হবে—লিগে ময়মনসিংহ থাকবে কি না। যদি ঢাকা মেট্রো ও ময়মনসিংহ দুটো দলই খেলে, তাহলে ম্যাচ বাড়বে, ব্যয় বাড়বে, সময়ও বাড়বে। আমাদের যে বিপিএল সূচি আছে, তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হবে। তাই বোর্ড এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সভায়।
তবে ২০২৬-২৭ মৌসুমে এনসিএলের টি-টোয়েন্টি ও চারদিনের লিগ ম্যাচ ময়মনসিংহ নামেই হবে—এটা প্রায় নিশ্চিত বলা যায়।
‘‘বিসিবি নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ময়মনসিংহ এনসিএলে থাকবে। তবে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে আবেদন এসেছিল—দুটি দলই যেন থাকে। সেই আবেদন গ্রহণ করলে দল হবে ৯টি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে নেই, সময়ও নেই। আট দল ধরেই লিগ শেষ করতে হবে। সামনে বিপিএল আছে। তাই লিগ ৮ দলের হবে না ৯ দলের, ময়মনসিংহ থাকবে কি না, বোর্ড সভাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’’
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর সভাপতি মোহাম্মদ মিঠুন আপাতত ব্যস্ত আছেন জাতীয় লিগ টি–টোয়েন্টি নিয়ে। সিলেটে তার দল খুলনা বিভাগ আগামীকাল ফাইনালে মুখোমুখি হবে রংপুর বিভাগের।
তিনি জানান, ঢাকায় ফিরে তারা ঢাকা মেট্রোর অফিসিয়ালদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। একটি বিভাগকে সুযোগ দিতে গিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে খেলে আসা একটি দলকে নামসহ বাদ দেওয়ার ব্যাপারটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
“আমরা বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রস্তাব ছিল—ময়মনসিংহ ও ঢাকা মেট্রো দুই দলই থাকুক। এখন যদি এক দলই রাখা হয়, তাহলে আমরা বিষয়টা টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বোর্ড সভাপতির সঙ্গে তুলব।”
“এটা আমাদের স্থানীয় লিগ। যদি জোড় দল সংখ্যা নিয়েই ভাবা হয়, তাহলে আরও একটি দল বাড়ানো যেতে পারে—দশটা দল করা হোক। লিগে বেশি দল মানে বেশি ক্রিকেটার সুযোগ পাবে, প্রতিযোগিতাও বাড়বে। এতে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আরও উন্নতি করবে, কারণ খেলোয়াড়রা বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।”
তবে মিঠুনের এই বক্তব্যের উল্টো ভাবনা আগেই জানিয়ে রেখেছে বিসিবি। গত আগস্টে বোর্ড সভা শেষে মেট্রোকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছিলেন, দল বাড়িয়ে খেলার মান কমাতে চান না তারা।
‘রংপুর বিভাগ হওয়ার পর দলের সংখ্যা জোড়া নাম্বার রাখতে এনসিএলে ঢাকা মেট্রো যোগ হয়। এখন ময়মনসিংহ যুক্ত হওয়ায় ৯ দল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের লিগ করতে জোড়া দল লাগে। সে কারণে এখন মহানগর বাদ পড়ছে।’
“কোয়ালিটির ব্যাপারটিও এখানে উল্লেখযোগ্য। আমরা চাইলেই ১০-১২টি দলও করতে পারি। কিন্তু মান ধরে রাখতে চাই। আমরা অনেক সময়ই শুনেছি, অনেকে প্রস্তাব দিয়েছে, আট দল না নিয়ে ছয় দল নিয়ে টুর্নামেন্ট হোক, তাহলে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কোনোদিন ছয় দলও হতে পারে, আপাতত আট দলই রাখছি আমরা।”