বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ২০ কার্তিক, ১৪৩২, ১৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

এম এ আজিজ পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা এবং ডা. মাহফুজুর রহমান

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

মঞ্জু ভাইয়ের (অধ্যাপক নুরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু) পরবর্তী ছোট ভাই বাবুল ভাইয়ের (সালাহউদ্দিন আহমদ) অসুস্থ স্ত্রী সাহেদা ইউনুছকে দেখার জন্য দেওয়ানবাজরস্থ এম এ আজিজের বাসায় গিয়েছিলেন মাহফুজ ভাই; দেখে এসে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সোলায়মান খান, মশিউর রহমান খান, সুজাউদ্দৌলা বাবুলও গিয়েছিলেন। মাহফুজ ভাই এখন এই কাজটি রুটিন ধরে করেন; স্বাধীনতা সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের কেউ অসুস্থ হয়ে বাসায় শয্যা গ্রহণ করলে কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংবাদ পেলে তাঁদেরকে দেখতে যেতে মাহফুজ ভাই’র কখনো ভুল হয় না। তিনি এটাকে একটি কর্তব্যকর্ম হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়ম করে ফেলেছেন। জাসদের জন্য মঞ্জু ভাই এবং তাঁর পরিবারের অবদানের কোন তুলনা হয় না।
চট্টগ্রামে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের একটি অস্থির গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের ভাঙন এবং জাসদের গঠনকালে মঞ্জু ভাই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। মঞ্জু ভাই না হলে চট্টগ্রামে জাসদ প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে যেত। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন, সেটা ছেড়ে জাসদ গঠন প্রক্রিয়য় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডবলমুরিং আসনে জাসদের প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন। দেশ এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর যে অবস্থান, চট্টগ্রামে এম এ আজিজেরও তেমনই অবস্থান। এম আজিজ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাধীনতা-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগকে এনডিএফ থেকে বের করে আনার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টা এম এ আজিজের সহযোগিতা ছাড়া সফল হওয়া দুঃসাধ্য ছিল। এম আজিজ ৬ দফা সমর্থন করে ৬৬ খ্রিস্টাব্দর ১৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রে বিবৃতি প্রদান না করলে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা জন্মেই অপমৃত্যু বরণের আশঙ্কা ছিল। বঙ্গবন্ধুই এম এ আজিজকে বলেছিলেন, তোমরা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ থেকে একটা বিবৃতি দাও, নইলে আইয়ুব খাঁ ৬ দফা নিষিদ্ধ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করে বিচার শুরু করতে পারে। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দিন হোসেনকেও বলে দিয়েছিলেন, তাঁর চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান মঈনুল আলমকে বলার জন্য, তিনি যেন এম এ আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবৃতি সংগ্রহ করে নিউজ করে ঢাকায় পাঠান। এম এ আজিজ নিজে এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, আবদুল্লাহ আল হারুন, এ কে এম আবদুল মন্নান এবং চট্টগ্রাম কপ তথা সম্মিলিত বিরোধী দলের আহ্বায়ক আবুল কাশেম সাবজজের স্বাক্ষর নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ’৬৬ ইত্তেফাকে ঐ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। এম এ আজিজ প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুবের গোলটেবিল বৈঠকের বিরোধিতা এবং যোগদান প্রতিহত করেছিলেন। এ ব্যাপারে বেগম মুজিবও তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। এম এ আজিজই প্রথম এক দফার কথা বলে প্রকারান্তরে স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।
সুতরাং চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ মহলে এম এ আজিজের ব্যাপক প্রভাবের কথা চিন্তা করেই চট্টগ্রামে জাসদের উদ্যোক্তারা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে মঞ্জু ভাইকে জাসদে নিয়ে এসেছিলেন। মঞ্জু ভাই বয়সে আমাদের বেশ বড়, যে কারণে তাঁর কাছে দেখাসাক্ষাতের জন্য তাদের বাসায় যেতে যেতে তাঁর ছোট ভাই বাবুলের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। মঞ্জু ভাই বাসায় থাকলে বা না থাকলে বাবুলই আমাদের টেক কেয়ার করতো। এ কারণে তাঁদের পরিবারের যে কোন সদস্যের বিপদ আপদ, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার খবরে আমরা চট্টগ্রামের জাসদ নেতা-কর্মীরা উদ্বিগ্ন হই, শঙ্কিত হই।
মাহফুজ ভাই সে কারণেই বাবুলের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গেছেন। তিনি আরোগ্যের পথে শুনে স্বস্তি বোধ করছি এবং পরম করুণাময়ের কাছে আশু নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করছি।
প্রসঙ্গক্রমে আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে নিবিড় অন্তরঙ্গতায় অঙ্গীভূত যেসব তথ্য আহরণের চেষ্টা করলাম, তা সম্ভবত বঙ্গবন্ধু’র প্রচলিত জীবনীগ্রন্থে পাওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধুর জীবনী গবেষক ও লেখকরা হয় এসব তথ্যের সন্ধান পাননি, পেলেও হয়তো গুরুত্ব দেননি। অথবা চট্টগ্রামের ঘটনাকে এত গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই মনে করে পাশে সরিয়ে রেখেছেন। তাতে যেটা ক্ষতি হয়েছে সেটা হলো তাঁদের বইয়ের পাঠকরা খণ্ডিত ইতিহাস পেলেন, পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারলেন না।
এম এ আজিজ প্রসঙ্গে যে তিনটি ঘটনার কথা আমি উল্লেখ করলাম, সেগুলি তো আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ৬ দফা সমর্থন করে বিবৃতি প্রদান, বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুবের গোলটেবিল বৈঠকে যেতে বাধা প্রদান এবং এক দফার বক্তব্য। আরো একটি ঘটনা আছে, যে ঘটনায় এম এ আজিজের সাহসী ভূমিকা আওয়ামী লীগ ও ৬ দফাকে রক্ষা করেছিল। সেটি হলো ৬ দফাকে বানচাল করার জন্য সরকারের সাথে যোগসাজশে আওয়ামী লীগের আপসকামী সুবিধাবাদী অংশ পিডিএম গঠন করে ৮ দফা দিয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে এম এ আজিজ চট্টগ্রাম থেকে কয়েকশ’ কর্মী এবং ঢাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে কাউন্সিল ঘেরাও করে পিডিএম-ওর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

পরীক্ষা দিতে গিয়ে পিটুনি খেলেন ছাত্রলীগ নেতা

চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেন এলাকায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ক্যাম্পাসে আশিফুল হক (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি

বিস্তারিত »

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ

বিস্তারিত »

বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে

একতরফা সিদ্ধান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের ৮০তম

বিস্তারিত »

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে দাবি না মানলে বুধবার পদযাত্রা ঘোষণা

  অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সরকারের ঘোষিত পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়নসহ মোট পাঁচটি দাবি জানিয়েছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী

বিস্তারিত »

মেতেছে চট্টগ্রাম ফানুস উৎসবে

কোনোটাতে আবার বৌদ্ধ যুব সংগঠনের নাম। এ রকম নানা থিমের, বৈচিত্র্যময় নকশার ফানুস উড়েছে নন্দনকানন ডিসি হিল সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দির থেকে। ফানুসের আলোতে রঙিন হয়ে

বিস্তারিত »

ইসির একার পক্ষে নির্বাচন সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না : সিইসি

জাতীয় নির্বাচন, জাতীয়ভাবেই করতে হবে। ইসির একার পক্ষে সবকিছু সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।

বিস্তারিত »

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন- মেরি ই. ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‌্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। ইমিউন সিস্টেমের মৌলিক প্রক্রিয়া ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ

বিস্তারিত »

ব্যানার-পোস্টার অপসারণে মাঠে মেয়র শাহাদাত

নগরের বিভিন্ন স্থানে অনুমতিবিহীন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ডের মাধ্যমে সৌন্দর্য নষ্টের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। রোববার (৫ অক্টোবর)

বিস্তারিত »

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে ঐকমত্য’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং তাদের সম্মতি যাচাইয়ের জন্য গণভোট আয়োজনের বিষয়ে

বিস্তারিত »