বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১, ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬

ব্যবসায়ী শিল্পোদ্যোক্তারা আতঙ্কিত

ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগোষ্ঠীগুলি সরকারের হয়রানির ভয়ে কুঁকড়ে আছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদেরকে নিয়ে যে টানা হ্যাঁচড়া শুরু করেছে, তার কোনো থামাথামি নেই। তাদের অফিস, কারখানা, বাড়িঘরে খানা-তল্লাশি, হামলা-মামলা, ধরপাকড়, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি নানা উপায়ে হয়রানি, জোর জুলুম করে ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে বিভীষিকা, আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, তারা গা ঢাকা দিয়ে মান-সম্মান বাঁচিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। দুদক, র‌্যাব, গোয়েন্দা, পুলিশের ভয়ে তারা তটস্থ। যে কারণে তারা কল-কারখানায় উৎপাদনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ছন্দে ফিরতে পারছে না।
এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত থাকায় দেশে নতুন বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, আইনশৃঙ্খলায় অস্বস্তিসহ নানা কারণে উৎপাদন মন্থর হয়ে পড়েছে। তদুপরি আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কারখানায় হামলা, হয়রানিমূলক মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভিত্তিহীন নানা প্রচারণায় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা ভীতসন্ত্রস্ত। এসব কারণে কেউ নতুন বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অনেকে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করছেন। সব মিলিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে দেশে বিপুল শ্রমশক্তির চাহিদা অনুযায়ী নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তারা বলছেন, অনেক উদ্যোক্তাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছেন। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের চাপে আছেন। শেখ হাসিনার পতনের পর অনেক কারখানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলার ভয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও অনেক ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আমদানি-রপ্তানি বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত জরুরি কাজেও অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে যেতে পারছেন না। এসব কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যবসায়ীদের হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হচ্ছে। ৫০ বছর ব্যবসা করেও যিনি ঋণখেলাপি হননি, নানাভাবে চাপের মুখে ফেলায় তারও ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বর্তমান অস্থির সময়ে কারও পক্ষেই ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ কিংবা নতুন বিনিয়োগ একেবারেই সম্ভব নয়। বিনিয়োগকারীদের যদি ধরে নিয়ে যান, অন্যায়-অবিচার করেন, তাহলে এত সহজে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটবে না। দেশে যারা বিনিয়োগ করেন, সম্পদ সৃষ্টি করেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন সব দায়দায়িত্ব তাদের ওপর গিয়ে পড়ছে। যারা কোনো দিন বিনিয়োগ করেনি, সম্পদ করেনি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেনি তারা জোরজবরদস্তি করে একটা জিনিস চাপিয়ে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীদের ওপর।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সংকট চলছে তা দূর করতে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসবের অভাবে বিনিয়োগ টেকসই হবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থনীতির একটা উন্নয়ন দরকার। তা না হলে বর্তমান বিনিয়োগ টেকসই হবে না।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এই মুহূর্তে সত্যিকার অর্থে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। প্রথমত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখনো বড়ভাবে রয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। রপ্তানি বাজারেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। সেই সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ সীমিত ও উচ্চমূল্য। তার ওপর ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি ও অনিশ্চয়তাও আছে।’ তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুরনো যে বিনিয়োগগুলো আছে, সেগুলো যেন ধরে রাখা যায়। যেসব প্রতিষ্ঠান এখন উৎপাদনে আছে সেগুলো যেন টিকে থাকতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। রপ্তানির সুযোগও সীমিত। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা চাপে আছেন। সেটা কাটাতে না পারলে বর্তমানে যে কর্মসংস্থান আছে সেটাও বন্ধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই সরকারের নতুন বিনিয়োগের চেয়ে পুরনো যেসব বিনিয়োগ রয়েছে সেগুলো যাতে টিকে থাকতে পারে সেটা দেখা দরকার।’
(সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ব্যবসায়ীরা ভীতসন্ত্রস্ত, বিনিয়োগ স্থবির/নতুন কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা; রাজু আহমেদ-পৃষ্ঠা : ১৪, ১৩ নভেম্বর ২০২৪)

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

বাংলাদেশে আবার পাকিস্তানের জিগির

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী শেখ হাসিনার যুগপৎ পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা উঠতে না উঠতেই প্রধান

বিস্তারিত »

এস আলমের সমর্থনে চট্টগ্রামের মানুষ রাস্তায় নামতে পারে

সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছে, চট্টগ্রামের এস আলম শিল্পগোষ্ঠী। এস আলমের স্বত্ত¡াধিকারী সাইফুল আলম মাসুদ, তাঁর স্ত্রী এবং শিল্পগোষ্ঠীর পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত তাঁর ভাইদের ব্যাংক

বিস্তারিত »

কক্সবাজার রেললাইন, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতু অনেক প্রধানমন্ত্রীর কাজ এক প্রধানমন্ত্রী করে ফেলছেন :

কেউ কি ভেবেছিলো কক্সবাজারে ট্রেন যাবে ? কেউ কি ভেবেছিলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ হবে এবং সেই সুড়ঙ্গ পথই কর্ণফুলীর পানি পাড়ি দিয়ে এপার ওপার

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া প্রথম বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করেন

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »

বঙ্গবন্ধুর কবর প্রথম জেয়ারত করেন মুক্তিযোদ্ধা এজাহার মিয়া

পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং নিকট আত্মীয়স্বজনকে পৈশাচিক উপায়ে হত্যা করার পর দেশে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ

বিস্তারিত »

কক্সবাজার রেললাইন হলো, বাদলের স্বপ্নের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু হল না

সব সাংসদ সংসদ বেত্তা বা পার্লামেন্টারিয়ান হন না, কেউ কেউ হন। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান বাংলাদেশ আমলে যেসব সংসদ গঠিত হয়েছে, তা’ থেকে

বিস্তারিত »

জাতীয় রাজনীতি, সংসদ নির্বাচন ও চট্টগ্রামের ছাত্ররাজনীতির নায়করা

সাতচল্লিশের চৌদ্দই আগস্ট পাকিস্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর পূর্ববঙ্গে কোন বিরোধী দলের অস্তিত্ব ছিলো না। কমিউনিস্ট পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারতো, কিন্তু ভ্রান্ত নীতির কারণে

বিস্তারিত »

নোয়াজিশপুরে আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতিকেন্দ্র চট্টগ্রামবাসীর তীর্থস্থান

প্রখ্যাত গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণা ইতিহাস চর্চায় একটি নতুন ধারা সংযোজন করেছে। কিন্তু তিনি শুধু চট্টগ্রাম নয়, আরাকান এবং সিলেটকেও তাঁর গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করে

বিস্তারিত »

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী : একজন সৎ সাহসী ও দক্ষ সাংবাদিকের প্রস্থান

চট্টগ্রামের সাংবাদিক ভুবন থেকে একজন ভালো সাংবাদিক সম্প্রতি হারিয়ে গেলেন। আশির দশকে তিনি কক্সবাজার থেকে এসে দৈনিক আজাদীর রিপোর্টিং বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে চট্টগ্রামে তাঁর সাংবাদিক

বিস্তারিত »