খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় স্থানীয় হাট-বাজারের বছরের নতুন তরমুজ বেঁচা-কেনা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতার নাগালের বাইলে। স্থানীয় চাষিরা অধিক লাভে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এখানে চলতি বছর তরমুজের ফলন নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় বিক্রেতারা অন্য জেলা থেকে তরমুজ কিনে বিক্রি করায় দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
জানা গেছে, এবছর উপজেলায় স্থানীয়ভাবে তরমুজ চাষ হয়নি বললেই চলে। আগে যেসব জমিতে তরমুজের চাষ হতো সেখানে এখন শুধু তামাক আর তামাক চাষ হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও মাইনী নদীর দুই পাড়ে আলু, পিঁয়াজ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের শাক-সবজি চাষ করত কৃষকরা। এখন সেখানে শাক-সবজির চাষ নাই বললেও চলে। সবাই তামাক চাষে ব্যস্ত। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অতি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছে স্থানীয় কৃষকরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখন কুমিল্লা নিমশা বাজার ও ময়মনসিংহের গৌরিপুর থেকে শাক-সবজি এনে বিক্রয় করছে।
একসময় দীঘিনালার শাক-সবজি সমতলের পাইকারী ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য কিনে নিয়ে যেত। এখন ঘটছে তার উল্টোটাই। উপজেলার কোথাও খুঁজে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ করছে না কৃষকরা। স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীরা রাঙ্গামাটির লংগদু ও সমতলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পাইকারী কিনে এনে এখানে বিক্রি করছে।
সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবছর তরমুজের দাম অনেক বেশি। বড় আকারের একেকটি তরমুজ ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা আর ছোট আকারেরটা ২শ থেকে আড়াইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর বড় আকারের তরমুজ দাম ছিল সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা আর ছোট আকারের গুলো ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
বোয়ালখালী নতুন বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী মো. মিরাজ হোসেন বলেন, দীঘিনালা উপজেলায় কোথাও তরমুজ চাষ করেন না চাষিরা। এখানের এখন বেশি হয় তামাক চাষ। সেজন্য আমাদেরকে পাশ্ববর্তী রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু থেকে তরমুজ কিনে এনে বিক্রয় করতে হচ্ছে। তবে লংগদু উপজেলায়ও এখন কৃষকরা তরমুজ চাষ কমিয়ে তামাক চাষ শুরু করেছে। তাছাড়া এবছর তরমুজের চারা রোপন করার সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রথম ধারে চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ২য় ধারে আবার চারা রোপন করায় ফলন কম হয়েছে।
তরমুজ কিনতে আসা সমীর চাকমা বলেন, বছরের প্রথম তরমুজ কিনেতে এসেছি, গত বছরের চেয়ে এবছর তরমুজের অনেক দাম। বড় সাইজের তরমুজ দাম চাচ্ছে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা। গরিব মানুষের পক্ষে তরমুজ কিনে খাওয়া সম্ভব হবে না।
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দীঘিনালা উপজেলা প্রায় দুই হেক্টর তরমুজ চাষ করা হয়েছিল তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন আসেনি।
তিনি আরো বলেন, দীঘিনালার মাটি বর্তমান জাতের জন্য উপযোগী নয়। তবে আগামী বছর নতুন নতুন জাতের তরমুজের বীজ চাষীদেরকে দেয়া হবে। তামাক চাষে অধিক লাভের লোভে পড়েও চাষীরা তরমুজ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবছর তামাক চাষ কিছুটা কমেছে। শাক-সবজিও চাষ হচ্ছে।