মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১৯ কার্তিক, ১৪৩২, ১২ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

চট্টগ্রামে একজন মাত্র নারী মনোনয়ন পেলেন, আরও তিনজন অন্তত পেতে পারতেন

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারী জাতির অহংকার, মাতৃশক্তির প্রতীক। চারবার দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হয়ে তিনি নারী জাতির ক্ষমতায়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন। যেমন একবার তিনি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, তখন সংসদের উপনেতা করেছিলেন তিনি সাজেদা চৌধুরীকে। সংসদের স্পিকারও তিনি করেছেন একজন নারীকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এবং বৃহত্তর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা মেহের আফরোজ চুমকিকে সংসদ সদস্য করেছেন। অভিনেত্রী তারানা হালিমকে মন্ত্রী করেছেন। এমনিভাবে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন স্তরে নারীদের পদায়ন করে নারীশক্তির জাগরণ ঘটাতে চেয়েছেন।

একসময় জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত রাখা হতো। কিন্তু নারীও যে পুরুষের মতো সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন সেটা বহুদিন আমাদের উপলব্ধিতে ছিলো না। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বিপ্লবী কল্পনা দত্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দেশপ্রিয় জেএম সেনগুপ্তের পত্নী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী নেলী সেনগুপ্তা। সেটাও সাধারণ আসনের নির্বাচন ছিল না। নির্বাচনে কল্পনা দত্ত হেরে গিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে আনোয়ারা খাতুনও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সালেও এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এর পর ১৯৫৪ সালে ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তোহফাতুন্নেছা আজিম নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাও সংরক্ষিত আসনে। তিনি ব্যারিস্টার আনোয়ারুল আজিমের পত্নী এবং সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিনের মাতা। তার এক পুত্রের সঙ্গে চট্টল শার্দুল এমএ আজিজের কন্যার বিয়ে হয়েছে।

অধ্যাপক নুরজাহান মোরশেদ ও অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯৫৪ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নুরজাহান মোর্শেদ ১৯৭০ সালেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বদরুন্নেসা আহমেদ ১৯৭০ এবং ৭৩ সালেও নির্বাচিত হন। রাফিয়া আখতার ডলি এবং খালেদা খানম ১৯৭৩ সালে মহিলা আসনে নির্বাচিত হন।

ষাটের দশকে সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ শামসুন্নাহার মাহমুদ জাতীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী সুলতান আহমদের কন্যা নুরজাহান বেগম সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে নয়।

নারীর এখন সাধারণ আসনে নির্বাচন করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু যারা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেন, তারা নারীকে প্রার্থী মনোনীত করার বিষয়টি ঠিক তাদের বিবেচনায় আসে না।

এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ব্যতিক্রম। তিনি নিজে নারী হওয়ায় বিভিন্নক্ষেত্রে নারীদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি সবসময় চেষ্টিত থাকেন। আগামী নির্বাচনের জন্য আজ (রোববার ২৬ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হল তাতে, চট্টগ্রামে শুধুমাত্র একজন নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি ফটিকছড়ির সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। কিন্তু আরও বেশ ক’জন নারী রাজনীতিতে সক্রিয় ও আলোচিত ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য ফরম কিনেছিলেন কিনা আমি জানি না। তা সত্ত্বেও নির্বাচনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন, এমন নারীনেত্রী চট্টগ্রামে দুর্লভ ছিলো না। উদাহরণস্বরূপ আমি এখানে তিন জনের নাম উল্লেখ করতে চাই। একজন কক্সবাজারের, দুজন চট্টগ্রামের।

এরা হচ্ছেন ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, শামীমা হারুণ লুবনা এবং কক্সবাজারের রামু এলাকার সাবেক এমপি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যক্ষ ওসমান সরওয়ার আলমের কন্যা নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। ওয়াসিকা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন। সেটি হলো অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক। তাঁর পিতা সাবেক রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান খান কায়সারও দীর্ঘদিন উক্ত পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় দলের পক্ষ থেকে বিকল্প বাজেটও উপস্থাপন করেছিলেন। ওয়াসিকা উচ্চ শিক্ষিত বিদূষী নারী, নানা গুণে গুণান্বিত। লুবনা বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ভাষা সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল হারুণের কন্যা। লুবনাও উচ্চ শিক্ষিত এবং ভাল লেখাপড়া জানা একজন নারী। তারা কেউ মনোনয়ন পেলে সম্ভবত সংসদ সুন্দর ও মর্যাদাবান হতো।

কাবেরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবছার কামাল চৌধুরীর পুত্রবধূ। এটি নিছক তথ্য হিসেবে পেশ করা হলো, কাবেরীর যোগ্যতা প্রমাণের জন্য নয়। কাবেরীর যোগ্যতা অন্যখানে। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতি করতেন এবং ছাত্রনেতা ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে উচ্ছেদ করার জন্য একসময় ছাত্রলীগ যে আন্দোলন করেছিল, কাবেরী সে আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন। তার স্বামী অকালপ্রয়াত আসিফ কামাল লাবু চট্টগ্রাম মহানগরের একজন শীর্ষস্থানীয় সংগ্রামী ছাত্রনেতা ছিলেন। কাবেরী অপশন দিয়ে কক্সবাজারে গিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে তিনি ইতিমধ্যে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তাব দেবে ভারত? যা জানা গেল

৫ আগস্ট পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের স্থান নেই। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের অনেক নেতাই গেল বছর থেকেই পলাতক অবস্থানে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে

বিস্তারিত »

শান্তিপূর্ণ জীবন চাই: আঁখি আলমগীর

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর। সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে মানুষের ভণ্ডামি থেকে মুক্তি চান বলে জানান তিনি। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে পোস্ট দিয়ে

বিস্তারিত »

পরীক্ষা দিতে গিয়ে পিটুনি খেলেন ছাত্রলীগ নেতা

চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেন এলাকায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ক্যাম্পাসে আশিফুল হক (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের পর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি

বিস্তারিত »

বিএনপি ক্ষুব্ধ ঐকমত্য কমিশন সুপারিশে

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি এ পদক্ষেপকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচন

বিস্তারিত »

ব্যবসায়ী পরিষদের চেম্বারকে পরিবারমুক্ত করার আহবান

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কথিত পরিবারমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। পাশাপাশি এ চেম্বারকে একটি বিশ্বমানের চেম্বার হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

বিস্তারিত »

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে

মাজার-দরবারে যে হামলা হয়েছে তা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ

বিস্তারিত »

বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে

একতরফা সিদ্ধান্ত ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বিশ্বে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের ৮০তম

বিস্তারিত »

সৌদি ওমরাহতে যাওয়ার আগে রিটার্ন টিকিট বাধ্যতামূলক করলো

এখন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গেলে রিটার্ন টিকিট কাটতে হবে ও যাত্রার সময় চেক-ইন কাউন্টারে ফিরতি টিকিট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যথায় যাত্রীকে বোর্ডিং

বিস্তারিত »

বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে শীতের সবজি, কমছে ডিমের দামও

পুরোদমে শীতের আবহ এখনো তৈরি না হলেও এরইমধ্যে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে শীতকালীন শাক-সবজির। যে কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামে স্বস্তি ফিরেছে। গত সপ্তাহের তুলনায়

বিস্তারিত »