চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা ও নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রোববার (১ অক্টোবর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যটি জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম।
গ্রেফতাররা হলেন— উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাইঅং মারমা।
র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, ভিকটিম শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯) পড়াশোনার পাশাপাশি একটি মুরগির খামারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। খামারে কর্মরত অন্য শ্রমিকরা (৫/৭ জন) মুরগিকে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে বিক্রি করে দিতো। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে খামারের ম্যানেজার হৃদয়।
তিনি বলেন, এ কারণে খামারের কাজ নিয়ে কর্মচারীদের সাথে বিভিন্ন সময় হৃদয়ের বাক-বিতণ্ডা হতো। তখন থেকে তারা হৃদয়কে উচিৎ শিক্ষা দেবে সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট খামারের কর্মচারীরা তাকে ডেকে এনে অপহরণ করে। পরবর্তীতে হৃদয়ের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
গ্রেফতার উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মনোমালিন্য হলে খামারের মালিক তা মীমাংসা করে দেন। কিন্তু উমংচিং মারমা ও অংথুইমং মারমা হৃদয়কে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনায় অংশ নেয় আরও কয়েকজন সদস্য। সেই অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে কদলপুর এলাকার মাজার গেটে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে এসে হৃদয়কে ফোন করে রাস্তায় আসতে বলে উমংচিং মারমা। হৃদয় রাস্তায় আসামাত্রই উমংচিং মারমাসহ অন্যরা তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে আগে থেকে ঠিক করে রাখা পূর্ব নির্ধারিত রাউজানের একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগান এলাকায় নিয়ে যায়।
উচিংথোয়াই মারমা আর জানায়, অপহরণের একদিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় হৃদয়কে। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরে। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধুমাত্র যারা খামারে কাজ করতো-তারাই। এদের মধ্যে উমংচিং মারমা ও অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদেরকে দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।
উচিংথোয়াই জানায়, হত্যার পর ফিরে এসে উমংচিং মারমা তার বন্ধু উচিংথোয়াই মারমার মোবাইলে সিমকার্ড ঢুকিয়ে মুক্তিপণের টাকা চেয়ে হৃদয়ের বাবাকে ফোন দেয়। এরপর ১ সেপ্টেম্বর অপহরণকারী কথা অনুসারে বান্দরবানে গিয়ে উচিংথোয়াই মারমাকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেন। টাকা হাতে নিয়ে (সেই টাকার দেড় লাখ একাই নেয় উচিংথোয়াই মারমা এবং বাকি ৫০ হাজার টাকা অন্যদের ভাগ করে দেয়া হয়) আসামি উচিংথোয়াই মারমা হৃদয়ের বাবাকে জানায়, হৃদয় সময় মত বাড়ি চলে যাবে।
এই আসামি আরো জানায়, হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়। পরবর্তীতে আসামি উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্য খুনিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে বাঁচতে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছিটিয়ে রেখে চলে আসে।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের মা ৬ জনের নাম উল্লেখ করে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।