এক হৃদয়ের লড়াইয়ের পর জিতলো না বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় এশিয়া কাপ সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিলো টাইগাররা। সুপার ফোরে টানা দুই ম্যাচ হেরে ফাইনালে খেলার আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। গ্রুপ পর্বের মত বাংলাদেশকে হারিয়ে জয় দিয়ে সুপার ফোর শুরু করলো শ্রীলংকা। সেই সাথে ওয়ানডেতে টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের স্বাদ নিলো লংকানরা।
সাদিরা সামারাবিক্রমা ও কুশল মেন্ডিসের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে এশিয়া কাপ সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান করেছে শ্রীলংকা। সামারাবিক্রমা ৯৩ ও কুশল ৫০ রান করেন। বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমেদ ৩টি করে এবং শরিফুল ইসলাম ২টি উইকেট নেন। জবাবে তাওহিদ হৃদয়ের লড়াকু হাফ-সেঞ্চুরি সত্বেও ১১ বল বাকী থাকতে ২৩৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিপক্ষে টস ভাগ্যে জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের চার ম্যাচের সবকটিতেই টস জিতলেন সাকিব।
তাসকিনের করা ম্যাচের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংস শুরু করেন শ্রীলংকার ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। ওভারের চতুর্থ বলে নিশাঙ্কাকে আম্পয়ার লেগ বিফোর আউট দিলেও ‘রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে যান নিশাঙ্কা।
ষষ্ঠ ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শ্রীলংকার আরেক ওপেনার দিমুথ করুনারতœকে (১৮) শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন হাসান।
দলীয় ৩৪ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে শ্রীলংকার রান ১শতে নিয়ে যান নিশাঙ্কা ও তিন নম্বরে নামা কুশল মেন্ডিস। অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ভুলে দলের রান তিন অংকে নিতে সক্ষম হন নিশাঙ্কা-কুশল। ব্যক্তিগত ২৯ রানে শরিফুলের বলে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান কুশল।
শেষ পর্যন্ত ২৪তম ওভারে শরিফুলের হাত ধরে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু পায় বাংলাদেশ। ৫টি চারে ৬০ বলে ৪০ রান করা নিশাঙ্কাকে লেগ বিফোর আউট করেন শরিফুল। কুশলের সাথে ১০৭ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন নিশাঙ্কা।
ব্রেক-থ্রুর এক ওভার পর শ্রীলংকা শিবিরে আবারও আঘাত হানেন শরিফুল। ২৬তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডেতে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করা কুশলকে শিকার করেন তিনি। ডিপ থার্ডম্যানে তাসকিনকে ক্যাচ দেন ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৫০ রান করা কুশল।
পরপর দুই ওভারে শরিফুলের জোড়া আঘাতে দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। এ অবস্থায় লংকানদের উপর চাপ বাড়িয়ে দেন তাসকিন ও হাসান। লংকান মিডল অর্ডারের দুই ভরসা চারিথ আসালঙ্কাকে ১০ রানে তাসকিন এবং ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ৬ রানে আউট করেন হাসান।
৩৮তম ওভারে ১৬৪ রানে পঞ্চম উইকেট পতনে শ্রীলংকাকে চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে চাপমুক্ত করতে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ষষ্ঠ উইকেটে হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে শ্রীলংকাকে রান ২শ পার করেন তারা। এই জুটিতে ৪৪ বল খেলে ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সামারাবিক্রমা।
৪৭তম ওভারে শানাকাকে বোল্ড করে জুটি ভাঙ্গেন হাসান। সামারাবিক্রমার সাথে ৫৭ বলে ৬০ রান যোগ করেন শানাকা। এর মধ্যে ৩২ বলে ২৪ রান করেন শানাকা।
দলীয় ২২৪ রানে শানাকা ফেরার পর শ্রীলংকাকে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৫৭ রানের সংগ্রহ এনে দেন সামারাবিক্রমা। ঝড়ো গতিতে ব্যৗাট চালিয়ে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭২ বলে ৯৩ রান করেন ইনিংসে শেষ বলে আউট হওয়া সামারাবিক্রমা। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৪ রান করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের হাসান ৫৭ রানে ও তাসকিন ৬২ রানে ৩টি করে এবং শরিফুল ৪৮ রানে ২টি উইকেট নেন। ১০ ওভার করে বোলিং করে সাকিব ৪৪ ও নাসুম ৩১ রানে উইকেটশূণ্য থাকেন।
রান তাড়া করতে নেমে দলকে দারুণ সূচনা করে ১১ ওভারে ৫৫ রান এনে দেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। শানাকার করা ১২তম ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪টি চারে ২৯ বলে ২৮ রান করা মিরাজ।
এক ওভার পর মিরাজের সঙ্গী নাইমকেও শিকার করেন শানাকা। শর্ট বল বুঝতে না পেরে সময়মত ব্যাট সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন টেস্ট মেজাজে থাকা নাইম। ১টি চারে ৪৬ বলে ২১ রান করেন নাইম।
নাইমের বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক সাকিব। পেসার পাথিরানার বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ৭ বলে ৩ রান করা সাকিব।
সাকিবের পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটনও। স্পিনার ওয়েলালাগের শিকার হওয়া আগে ২৪ বলে ১৫ রান করেন লিটন। ৫৫ রানের দারুণ শুরুর পর ৮৩ রানে চতুর্থ ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
উইকেট পতন ঠেকাতে জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও তাওহিদ হৃদয়। শ্রীলংকার বোলারদের সাবধানে সামলিয়ে উইকেটে টিকে থাকার লড়াই করেন তারা। ৩৩তম ওভারে জুটিতে ৫০ পূর্ণ হয় তাদের।
মুশফিক-হৃদয় জুটি ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠে শ্রীলংকা। অবশেষে ৩৮তম ওভারে অষ্টমবারের মত আক্রমনে এসে মুশফিককে থামান শানাকা। বাউন্ডারিহীন ইনিংসে ৪৮ বলে ২৯ রান করেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে ১১২ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন হৃদয়-মুশফিক।
মুশফিক ফেরার পরই ওয়ানডেতে চতুর্থ অর্ধশতক করেন ৭৩ বল খেলা হৃদয়। ষষ্ঠ উইকেটে শামীম হোসেনকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন হৃদয়। ঐ জুটিতে ২৫ বলে আসা ২৬ রানে মাত্র ৫ অবদান রেখে থিকশানার শিকার হয়ে শামীম আউট হলে ১৮১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শামীমের আউটে বাংলাদেশের শেষ ভরসা ছিলেন হৃদয়। ৪৪তম ওভারে থিকশানার বলে আম্পায়ারস কলে লেগ বিফোর আউট হন ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৭ বলে ৮২ রান করা হৃদয়।
দলীয় ১৯৭ রানে হৃদয় ফেরার পরও লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশের হার এড়ানোর চেষ্টা করেন নাসুম ও হাসানরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১১ বল থাকতে ২৩৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাাদেশ। নাসুম ১৫ ও হাসান অপরাজিত ১০ রান করেন। শ্রীলংকার থিকশানা-শানাকা ও পাথিরানা ৩টি করে উইকেট নেন।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।