উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মরক্কোর হাই এটলাস পর্বতমালায় রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের হালনাগাদ তথ্যে বলেছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৮২০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৭২ জন।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভূমিকম্পে পার্বত্য অঞ্চলে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এসব এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর মারাখেসের আতঙ্কিত বাসিন্দারা বাড়িতে না গিয়ে খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছেন।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনার অন্তর্ভুক্ত দেশটির পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী মারাখেস শহরের ভবনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারাখেসের প্রাণকেন্দ্র জেমা আল-ফনা স্কয়ারের একটি মসজিদের মিনার ধসে গেছে। দেশটির উদ্ধারকারী কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছেন।
শহরটির বাসিন্দা মিলোদ স্ক্রউত বলেছেন, সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পে আহতদের শতাধিক স্বজন মারাখেসের স্থানীয় একটি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন। মারাখেসের হাসপাতালে ভর্তি আহতদের বেশিরভাগই শহরের বাইরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে এসেছেন। স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় তাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে।
দেশটির ঐতহ্যবাহী মারাখেস শহরের বাসিন্দা জাওহারি মোহাম্মদ লোকজন ভূমিকম্পের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কীভাবে মরিয়া হলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেই দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে আমি এখনও বাড়িতে ঘুমাতে পারি নাই। পুরোনো শহরটির বাড়িঘরগুলো অনেক পুরোনো।
তিনি বলেন, এখানে যদি একটি ঘর পড়ে যায়, তাহলে সেটির কারণে আরেকটিও পড়ে যাবে।
মরক্কোর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তারৌদন্তের কাছের একটি এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক হামিদ আফকার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েকবার আফটারশকও অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। হামিদ বলেন, প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে ভূমিকম্পটি স্থায়ী ছিল। আমি দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নেমে আসার সাথে সাথেই দরজা নিজেই খুলে গেল এবং বন্ধ হয়ে গেল।
ভেবেছিলাম সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে
ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কাটি যখন অনুভূত হয়, মারাকেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া বৃটিশ নাগরিক আযা লেমার তখন শহরের রাস্তায় হাঁটছিলেন। বিবিসি’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন যে প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে শহরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।
“আমি অনুভব করছিলাম যে মাটি কাঁপছিল। দেখতে পাচ্ছিলাম যে রাস্তার পাথর সরে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড আগে পার করে আসা একটি বাড়িকে দেখছিলাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে।”
ভূমিকম্পের সময় মারাকেশ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরের বন্দর নগর কাসাব্লাঙ্কাতেও কম্পন অনুভূত হয়।
কাসাব্লাঙ্কা শহরের একজন বাসিন্দা লা মাতিন পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ঐ সময় আমি ঘুমাচ্ছিলাম। আমার অ্যাপার্টমেন্টের দরজা কেঁপে ওঠে। আমি ভেবেছিলাম চোর এসেছে।”
“পর মুহুর্তেই শুনি প্রতিবেশীরা চিৎকার করছে। এরপর আমরা বের হয়ে আসি বাড়ি থেকে।”
“এখন অনেক মানুষই মানুষ খোলা জায়ঘায় থাকছে। সবাই ভয় পাচ্ছে আরো একটি কম্পনের। পাশাপাশি চোর-ডাকাতের আতঙ্কও রয়েছে।”
মরক্কো এর আগেও বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে। ২০০৪ সালে দেশটির উত্তর-পূর্বের আল হোসেইমা অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৬২৮ জন মারা গিয়েছিল। আর ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এর থেকে ধারণা করা যায় যে এবারের ভূমিকম্পেও হতাহতের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়তে পারে।
মরক্কোর গতকালের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল অ্যাটলাস পর্বতমালার মধ্যে। ঐ অঞ্চলে এমন অনেক দুর্গম গ্রাম রয়েছে যেখানে পৌঁছানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
কাজেই এই ভূমিকম্পের আসল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী, তা নিশ্চিতভাবে জানতে বেশ কয়েকদিন লেগে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।