ক্রিকেটের কষ্ট, জীবনের উত্থান-পতন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে কাঁদাতে পারে না। জাতীয় দল এশিয়া কাপে। বিশ্বকাপেরও দেরি আছে। তাই রিয়াদের এখন একটু বিশ্রামের সময়। কিন্তু তিনি পড়ে আছেন ব্যাট-বল নিয়েই। সেখানে আর যাই হোক, চোখের পানির কোনো জায়গা থাকার কথা নয়। তাহলে রিয়াদের চোখে পানি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে যেতে হবে রিয়াদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের একটি সস্তা বাসায়। যেখানে একটি মানুষের জীবনসংগ্রাম আর তার নিয়তি কাঁদালো রিয়াদসহ সবাইকে। ঘটনাটা ঘটে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদের একটি উপহার বিতরণ করতে গিয়ে।
নগদ সম্প্রতি শুরু করেছে সপ্তাহে সপ্তাহে গাড়ি জেতার ক্যাম্পেইন। মোবাইল রিচার্জ করে সেই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে গাড়ি জিতেছেন কেরানীগঞ্জের মো. বোরহানউদ্দিন। সেই গাড়ি বোরহান সাহেবের হাতে তুলে দিতে গিয়েই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুই চোখ ভাসল আবেগের কান্নায়। রাইড শেয়ার সার্ভিসে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুপর বেলায় বোরহান যখন একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই তাকে হতভম্ব করে দিয়ে বাসায় এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুকসহ আরও অনেকে।
বোরহান প্রথমে গাড়ি-ভাগ্যকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। যখন বুঝলেন, আসলেই তিনি গাড়ি জিতেছেন, নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। যে কান্নার পেছনে রয়েছে বোরহানের প্রায় দেড় দশকের জীবন সংগ্রাম, নিয়তির কাছে বারবার হেরে যাওয়ার গল্প।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা বোরহান ছোট্ট একটা চাকরি করতেন। ২০১৭ সালের দিকে একটি বহুতল ভবনের লিফট ছিঁড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি এখনও। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সবেধন নীলমণি চাকরিটাও হারান। সে বছরই মারা যান বোরহানের বাবা। দাফনের টাকাও ছিল না বোরহানের কাছে।
আর্থিক কষ্টে, অনাহারে দিন কাটতে থাকে তার। সবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে কেনেন পুরোনো একটি মোটরসাইকেল। বনে যান রাইড শেয়ারিংয়ের চালক।
দিনভর মোটরসাইকেল চালানো আয়েই কষ্টেসৃষ্টে চলে তিন সন্তানসহ বোরহানের পাঁচ সদস্যের সংসার। এমনও দিন যায়, বাচ্চাদের বাসার বাইরেও বের হতে দেন না, যদি তারা আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করে! টাকার অভাবে সন্তানদের একটা ভালো স্কুলেও দিতে পারেননি।
বোরহান ও তার স্ত্রীর মুখে এইসব গল্প শুনতে শুনতে ভিজে ওঠে রিয়াদের চোখ। চোখের পানি মোছেন তানভীর এ মিশুকও। কিন্তু দিনটা তো কান্নার নয়। তানভীর এ মিশুক ভেজা চোখ সামলে কথা দেন, কেবল সেডান গাড়ি নয়, বোরহানকে একটা চাকরিও জোগাড় করে দেবেন। খুশির আলো জ্বলে ওঠে যেন পরিবারটিতে।
সেই খুশির মাত্রা বাড়িয়ে রিয়াদ ছক্কা মারেন – বোরহানের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পরিবারটা। গাড়ির ভেতর বসে চলে বাচ্চাদের আইসক্রিমের উৎসব। চোখের লহমায় নিজের পরিবারের ভাগ্য বদলে যেতে দেখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে বোরহানের চোখ। পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জয়ের অনুভূতিমাখা চোখে পরিবারটার দিকে তাকিয়ে থাকেন ‘সাইলেন্ট কিলার’ রিয়াদ।