আগে ব্যাট করে আফগানিস্তানকে ৩৩৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখতে বড় জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। আগে ব্যাট করে ৩৩৪ রান করার পর আফগানিস্তানকে ২৪৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৮৯ রানের বিশাল জয়ে সুপার ফোরের আশা জোরালো করল টাইগাররা।
বড় লক্ষ্যে খেলতে নামা আফগানিস্তানকে ভালো শুরু পেতে দেননি শরিফুল ইসলাম। এই টাইগার পেসার নিজের প্রথম ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে এলবিডব্লিউ করে আউট করেছেন। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ ও ইব্রাহীম জাদরান ৭৮ রানের জুটি গড়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন। তাসকিন আহমেদ ব্যাক অব দ্য লেন্থ ডেলিভারিতে সুইংয়ে পরাস্ত করে ৩৩ রান করা রহমতকে বোল্ড করেন। এরপর হাসমতউল্লাহ শহীদিকে নিয়ে আফগানদের রান বাড়িয়েছেন ইব্রাহীম জাদরান। তিনি ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন।
ইব্রাহিমকে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ। এই টাইগার পেসারের করা অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে আউট সাইড এজ হয়ে মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছেন ইব্রাহীম। আর তাতেই ইব্রাহীম ও হাসমতউল্লাহর ৫২ রানের জুটি ভাঙে। ইব্রাহীম ফিরে গেলেও একপ্রান্ত ধরে খেলছিলেন আফগান অধিনায়ক শহীদি। ৫৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন তিনি। শহীদির সঙ্গে নাজিবউল্লাহ জাদরান চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬২ রান।
নাজিবউল্লাহকে এক্রস দ্য লাইন ডেলিভারিতে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ছন্দ এনে দেন মিরাজ। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা শহীদিকে অফ স্টাম্পের বাইরের সুইং ডেলিভারিতে থার্ড ম্যান অঞ্চলে হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। আর তাতেই ম্যাচ বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় চলে আসে। এরপর ১৩ রান করা গুলবাদিন নাইবকেও বোল্ড করেন শরিফুল। এরপর রশিদ খান ২০ রান করলেও আর কেউ দাঁড়াতে না পারলে আফগানিস্তানের ইনিংস থামে ২৪৫ রানে।
এর আগে তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশকে এদিন দারুণ শুরু এনে দেন মিরাজ ও নাইম শেখ। নাইম এদিন শুরু থেকেই আফগানিস্তানের বোলারদের তুলোধোনা করেন। তার ব্যাটে ভর করেই ৭.৫ ওভারেই ৫০ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। যদিও পাওয়ার প্লের শেষ বলে নাইমকে ব্যক্তিগত ২৮ রানে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন মুজিব উর রহমান।
এরপর থিতু হতে পারেননি ওয়ান ডাউনে প্রমোশন পাওয়া তাওহীদ হৃদয়। তিনি আউট হয়েছেন কোনো রান করার আগেই। গুলবাদিন নাইবের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তিনি ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে। নাইবের বলে অফ সাইডে ড্রাইভ খেলতে চেয়েছিলেন হৃদয়। তবে তা ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় ফার্স্ট স্লিপে। সেখানে এক হাতে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ইব্রাহীম জাদরান।
দ্রুত দুই উইকেট হারালেও তৃতীয় উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়েন মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাদের ব্যাটে ভর করেই দলীয় ১০০ পার হয় বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে জুটিরও হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তারা। শান্তকে সঙ্গে নিয়ে ৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ।
১১৭ বলে মিরাজ-শান্ত জুটির সেঞ্চুরি পূরণ হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় দেড়শ রানের গণ্ডিও। খানিক বাদে শান্ত হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ৫৭ বলে। ফজলহক ফারুকির লেংথ বলে স্কয়ার দিয়ে পুল করে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌছেছেন শান্ত।
ব্যক্তিগত ৮৪ রানে গুলবাদিন নাইবের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। তবে সেই ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি সেখানে দাঁড়ানো মুজিব উর রহমান। সেই ওভারেই মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে অল্পের জন্য রান আউটের ধাক্কা থেকেও বেঁচে যান শান্ত।
করিম জানাতের বলে আম্পায়ার্স কলের কারণে একবার নিশ্চিত এলবিডব্লিউ থেকেও বেঁচে গেছেন শান্ত। এর খানিক বাদেই ১১৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। অবশ্য সেঞ্চুরির পর ক্র্যাম্পের কারণে ১১২ রানে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মিরাজ। এর ফলে শান্ত-মিরাজের জুটি থামে ১৯২ রানে। এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন শান্ত। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে শান্তর খেলতে হয়েছে ১০১ বল। ১০৪ রানে রান আউট হয়ে শান্তর ইনিংসের সমাপ্তি হয়েছে।
মুজিবের বলে রিভার্স সুইপ করে পয়েন্টে বল পাঠিয়েই দৌড় দিয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু খানিক বাদেই তিনি বুঝরে পারেন বল চলে গেছে পয়েন্টে থাকা ফিল্ডারের হাতে। এরপর ভুল সুধরে নিয়ে ক্রিজে ফিরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান শান্ত। এরই মধ্যে বল হাতে পেয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ফলে ফিরতে হয় শান্তকে। তাঁর ইনিংস জুড়ে ছিল ২টি ছক্কা ও ৯টি চারের মার। ২৫ রান করে রান আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিমও।
এরপর উইকেটে এসে ওয়ানডেতে খেলা নিজের প্রথম বলেই নাইবকে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারেন শামীম পাটোয়ারি। তিনিও রান আউট হয়েছেন ৬ বলে ১১ রান করে। সাকিব শেষ পর্যন্ত ৩২ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত করেছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ৩৩৪/৫ (৫০ ওভার) (নাইম ২৮, শান্ত ১০৪, মিরাজ ১১২, মুশফিক ২৫, সাকিব ৩২*)
আফগানিস্তান- ২৪৫/১০ (৪৪.৩ ওভার) (ইব্রাহীম ৭৫, রহমত ৩৩, শহীদি ৫১; তাসকিন ৪/৪৪, শরিফুল ৩/৩৬) বাংলাদেশ জাতীয় দল। যেখানে ক্রিকেটের মতো প্রতিপক্ষ সেই আফগানিস্তানই। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ১৫৭ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা শক্তিশালী আফগানিস্তানকে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে দুই দলের কেউই গোল করতে পারেনি, ফলে গোলশূন্য ড্র’তেই শেষ হয় প্রথম প্রীতি ম্যাচ।
প্রথমার্ধে স্বাগতিক বাংলাদেশ বল পজেশন ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল। গোলের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছিল কয়েকটি। বিশেষ করে মোরসালিন ও রাকিবের বোঝাপড়ায় সুন্দর একটি আক্রমণ হয়েছিল। ২৪ মিনিটে মোরসালিনের বাড়ানোর বলে রাকিব বক্সে দারুণ জায়গায় বল পেয়েছিলেন। একটু বল নিয়ে প্রবেশ করে শটও নেন। ততক্ষণে আফগান ডিফেন্ডার ব্লক করেন।
মিনিট তিনেক পরেই আফগানরা কাউন্টার অ্যাটাক করে। কাউন্টার অ্যাটাকটি গোল হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। আফগাদের শট তারিক কাজীর পায়ে লেগে বলের দিক পরিবর্তন হয়ে পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গোলরক্ষক জিকো ছিলেন নিরুপায়।
২৯ মিনিটে বাংলাদেশ দ্রুত গতির কাউন্টার অ্যাটাক করে। আফগান গোলরক্ষক ফয়সাল আহমেদ বক্সের অনেক সামনে এগিয়ে আসেন কয়েক বারই। এই যাত্রায় তিনি অনেক সামনে ছিলেন। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন বল নিয়ন্ত্রণও নেন। এরপরও গোল পায়নি শেষ পর্যন্ত। ফলে গোলশূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলের ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় কেউই গোলের দেখা পায়নি। ফলে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে। বাংলাদেশের ফুটবলে এই প্রথম কোনো ক্লাব তাদের মাঠে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করে ইতিহাস গড়েছে। ঐতিহাসিক এই দিনে শক্তিশালী আফগানিস্তানকে রুখে দিয়ে নিজের জাত চেনাল জামাল ভুঁইয়ার দল। ও