মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতে কাঁদলেন তাঁর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। তিনি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের শ্বশুর।
আজ রোববার তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে মাহমুদা খানম (বাবুলের স্ত্রী) হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মোশাররফ হোসেনকে কাঁদতে দেখা যায়। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বাবুল এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তাঁর মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন।
গত ১৩ মার্চ বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। বাবুলের সঙ্গে অভিযোগপত্রভুক্ত অপর ছয় আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া।
এই আসামিদের মধ্যে বাবুল, ওয়াসিম, শাহজাহান ও আনোয়ার কারাগারে আছেন। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল ও খাইরুল শুরু থেকে পলাতক। আজ আদালতে কামরুল, খাইরুল ছাড়া অপর পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল যে পরিকল্পনা করেছেন, অন্য আসামিদের যে প্রস্তুত করেছেন, সেটাই আজকের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। সাক্ষ্যে প্রতীয়মান হয়েছে, মাহমুদা মিতু হত্যায় বাবুল যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা–ই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করে আগামী ২ মে পরবর্তী দিন ধার্য রেখেছেন বলে জানান এই সরকারি কৌঁসুলি।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, ‘মাহমুদার বাবা একেক সময় একেক বক্তব্য দেন। শুরুতে বলেছিলেন, তাঁর মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের (বাবুল) সুসম্পর্ক ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য কথা বলে তিনি এজাহার করেছিলেন; যা কোর্ট গ্রহণ করেননি। তাঁর ভিন্ন ভিন্ন কথা প্রমাণ করে এটা পরিকল্পিত বক্তব্য।’
আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে রিভিশন করেছেন। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটা বিষয়ে এ মুহূর্তে সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই।
তখন সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, উচ্চ আদালতে আসামিরা একটা আবেদন করেছেন। সেটার ভিত্তিতে আজ একটা ল’য়ার সার্টিফিকেট দিয়েছে। এর ভিত্তিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করেছে। কিন্তু এর কোনো আইনগত সুযোগ নেই। হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এ রকম কোনো আদেশ দেননি।
উভয় পক্ষে প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। পরে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মোশাররফ হোসেন সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। সাক্ষ্যে বাবুলের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে, বাবুল কক্সবাজারে কর্মরত থাকাকালে ‘এক নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক’ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষ্যের একপর্যায়ে তাঁর মেয়েকে বাবুল পরিকল্পিতভাবে খুন করেন বলার পর মোশাররফ হোসেন কেঁদে ওঠেন। সাক্ষ্য প্রদানের শেষের দিকে তাঁকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখা যায়।