রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র, ১৪৩১, ১৫ রমজান, ১৪৪৬

বিটিভি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্র কি চট্টগ্রামের কথা বলছে ? নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

একুশের প্রথম কবিতার জনক, ৫২ সালে চট্টগ্রাম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক এবং পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোহিত কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে একটা অনুষ্ঠান করার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম জেনারেল ম্যানেজার মহোদয়ের কাছে। কিন্তু তিনি সেটা গ্রাহ্য করার গরজ অনুভব করেননি। আমি একা নই, আমার সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুুল আলম চৌধুরী, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা কিরণলাল আচার্য, প্রবীণ রাজনীতি আবদুল হকের যৌথ স্বাক্ষরিত আবেদন ছিলো সেটা।
মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে বাংলাদেশের কে না চেনেন। তবুও জিএম সাহেব চট্টগ্রামের লোক নন বলে শুনেছি, সেজন্য তাঁর জ্ঞাতার্থে মাহবুব ভাইয়ের সামান্য পরিচিতি দিয়ে চিঠিটা পাঠিয়েছিলাম। যাতে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। তারপরেও কেন যে জিএম সাহেব সাড়া দিলেন না তা ভেবে কুল পাচ্ছি না।
সময়ের হিসেবে একুশের ওপর আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা কবিতার স্থান দ্বিতীয়। মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা কবিতাই প্রথম এবং প্রথম কবিতা হিসেবে তার একটা আলাদা মূল্য থাকতে বাধ্য। চট্টগ্রামে কোন আলতাফ মাহমুদ ছিলেন না, যিনি গাফফার চৌধুরীর কবিতায় সুরারোপ করে তা থেকে একটি কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। থাকলে তিনিও হয়তো ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসি দাবি নিয়ে এসেছি’Ñ মাহবুব ভাইয়ের এই কবিতায় সুরারোপ করে আরেকটি অমর গান সৃষ্টি করতেন।
মাহবুব উল আলম চৌধুরী মধ্য চল্লিশ থেকে গোটা পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামে যত সাংস্কৃতিক আন্দোলন হয়েছে, তার ভগীরথ, তিনিই মূল প্রেরণা, মুখ্য ব্যক্তিত্ব। সাম্প্রদায়িক ভাটোয়ারায় মাধ্যমে পাকিস্তান সৃষ্টিকে তিনি সুনজরে দেখেন নি। সে কারণেই তিনি ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ‘সীমান্ত’ নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন, যা অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উভয় বাংলার প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কাছে সমাদৃত হয়েছিলো।
১৯৫১ সালের ১৬-১৯ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। সভাপতি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ও সাধারণ সম্পাদক সাহিত্যিক আবুল ফজল। এই সংস্কৃতি সম্মেলন পূর্ববঙ্গে অসাম্প্রাদায়িক রাজনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার পথ খুলে দিয়েছিলো।
এসব কথা জিএম সাহেবের না জানার কথা নয়। আজকে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছি, সেটিও ৫১’র চট্টগ্রাম সংস্কৃতি সম্মেলনে ফলশ্রুতি।
চট্টগ্রামের মনীষীদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র যদি অনুষ্ঠান প্রচার করতে না চায়, তাহলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের প্রয়োজন কি? বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র যদি চট্টগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের উচিত হবে এই কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া। নামে চট্টগ্রামÑ কাজে চট্টগ্রাম নয়, তেমন চট্টগ্রাম কেন্দ্র চট্টগ্রামের প্রয়োজন নেই। আমি এবিষয়ে চট্টগ্রামের সুসন্তান মাননীয় তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিটিভির মহাপরিচালক এবং চট্টগ্রামের সুসন্তান বিটিভির উপ মহাপরিচালক শ্রী অনুপ খাস্তগীরের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সময় বলা হয়েছিলো, চট্টগ্রামের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ, চট্টগ্রামের সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পর্যটন-প্রকৃতি এককথায় চট্টগ্রামের আত্মার স্পন্দন ধ্বনিত হবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্র চট্টগ্রামের কথা বলছে না। গৎবাঁধা দু’একটা খবর, দু’চারটি অনুষ্ঠান এবং নাচগানের অনুষ্ঠানÑএসবের জন্য যদি বিটিভিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্র নামক একটি শ্বেতহস্তীকে পোষণ করতে হয়, সেটা হবে রাষ্ট্রের মূল্যবান অর্থের অপচয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কাছে আমরা নিশ্চয়ই চট্টগ্রামের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা আশা করতে পারি। বিটিভি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বিটিভি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার একটাই তো উদ্দেশ্যে থাকতে পারে যে, চট্টগ্রামের নানা বিষয় নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিটিভিতে হয়তো জাতীয় সংবাদের মধ্যে চট্টগ্রামের সংবাদকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া যায় না। চট্টগ্রাম কেন্দ্র হওয়ার ফলে চট্টগ্রামের ঘটনার নিয়ে আলাদা সংবাদ প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে। অনুষ্ঠানের বেলায়ও তাই। রাজনীতি, সমাজ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংস্কৃতি নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তৈরি করে তা’ সম্প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিটিভি’র চট্টগ্রাম কেন্দ্র কি সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে? চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ধরাবাঁধা কিছু অনুষ্ঠান হচ্ছে, কিন্তু তাতে কোনো সৃজনশীল চিন্তাভাবনার প্রতিফলন নেই বললেই চলে।
চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের নিয়ে চট্টগ্রামে কেন্দ্রে তেমন কোনো অনুষ্ঠান আছে বলে মনে হয় না। আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। সাহিত্য একটাই বাংলা সাহিত্য। চট্টগ্রামের সাহিত্য, রাজশাহীর সাহিত্য, ঢাকার সাহিত্য-সাহিত্যে এমন ভাগ বাটোয়ারা হয় না। তবে আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সাহিত্য হতে পারে। তখন তা’ হবে আঞ্চলিক সাহিত্য। চট্টগ্রামের সাহিত্য বলতে আমরা বুঝবো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত পালা ও পুঁথি। পুঁথির অধিকাংশ চট্টগ্রামেই পাওয়া গেছে। তবে অন্যান্য অঞ্চলেও পুঁথি পাওয়া গেছে। সেজন্য অধ্যাপক শাহেদ আলী পুঁথি সাহিত্য নিয়ে রচিত তাঁর গ্রন্থের নামকরণ করেছেন “বাংলা সাহিত্য চট্টগ্রামের অবদান।” “চট্টগ্রামের সাহিত্য” বলেন নি। তবে পুঁথির একটা আঞ্চলিক রূপ আছে। যা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।
সাহিত্যের অনুষ্ঠন বলতে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিদের ধারণা কি আমরা জানি না, কিন্তু মহাকবি আলাওল, কবি সৈয়দ সুলতান ও দৌলত কাজী, মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন, যাঁকে পলাশীতে স্বাধীনতা-রবির অস্তগমনের পর স্বাদেশিকতার উদগাতা বলা হয়ে থাকেÑ তিনি; ভারততত্ত্ববিদ, তিব্বত বিশেষজ্ঞ, বহু ভাষাবিদ শরচ্চন্দ্র দাশ, বাংলা সাহিত্যে তুলনামূলক সমালোচনা সাহিত্যের প্রবর্তক কবিভাস্কর শশাঙ্ক মোহন সেন, পুঁথি সাহিত্যের আবিষ্কর্তা, গবেষক, সাহিত্যিক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ , আস্কর আলী প-িত, কানু শাহ, সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী মওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী ও শাহ বদিউল আলমÑএসব দিকপাল সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রকে সাহিত্যে অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হবে। এরপর ধরা যেতে পারে চট্টগ্রামের নবজাগরণের পথিকৃৎ ডা. অন্নদাচরণ খাস্তগীর, শিক্ষাব্রতী ও দেশপ্রাণ শেখ-এ-চাটগাম কাজেম আলী মাস্টার, সমাজ সংস্কারক যাত্রা মোহন সেন, প্রবাদপ্রতিম স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশপ্রিয় জেএম সেনগুপ্ত, এশিয়ার প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ড. বেণীমাধব বড়–য়া, কর্মবীর কৃপাশরণ মহাস্থবির ও নূর আহমদ চেয়ারম্যান, বৌদ্ধ সমাজ সংস্কারক ও রেনেসাঁ পুরুষ নাজির কৃষ্ণচন্দ্র চৌধুরী, সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম, আবুল ফজল, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, ড. আহমদ শরীফ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যিনি বাংলা কথাসাহিত্যে জগদীশ গুপ্তের পর চেতনা প্রবাহ রীতির সার্থক প্রয়োগ করেন, সুচরিত চৌধুরী, আহমদ ছফা; সাংবাদিক মহিম চন্দ্র দাশ, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম ও চট্টগ্রামের সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে মৌলিক তত্ত্বজিজ্ঞাসু আবদুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ও ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনীতিক এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, শহীদ শেখ মোজাফফর আহমদ, রাজনীতিক-সাহিত্যিক পূর্ণেন্দু দস্তিদার ও অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ, এমআর সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল হারুন, এমএ হান্নান, এমএ মান্নান, এমএ ওহাব, আতাউর রহমান কায়সার, আখতারুজ্জামান চৌধুরী, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সমাজহিতৈষী চান্দ মিয়া সওদাগর, খান সাহেব আবদুল হক দোভাষ ও খান সাহেব আবদুল হাকিম মিঞা, বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জাত যাবে না।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য স্মরণীয় বিভিন্ন দিবসের মধ্যে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ছাড়াও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস, ২৮ মার্চ চেরাগী পাহাড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ চার ছাত্রনেতা হত্যাকা- দিবস, ১৩ এপ্রিল শহীদ অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা দিবস এবং সিটি কলেজের এজিএস ও জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী ও চাকসু’র প্রথম জিএস শহীদ আবদুর রব হত্যাকা- দিবস, ৬ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে কূটনৈতিক ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া একটি ফরজ কাজ হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন। ৬ এপ্রিল দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব চট্টগ্রামের অবিভক্ত পটিয়া থানার মোহাম্মদপুর নিবাসী কূটনীতিক কেএম শিহাবউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামকে বলা হয় বার আউলিয়ার স্মৃতিধন্য পুণ্যস্থান। বার আউলিয়ারা ছিলেন সুফি মতাবলম্বী এবং তাঁরা সুফি মতাদর্শই প্রচার করেন। সুফি দর্শনের মূল কথা হলো মানবমৈত্রী। বারআউলিয়ার আদি বদর শাহ, গরীবউল্লাহ শাহ, আমানত শাহ, সুন্দর শাহ, মোহছেন আউলিয়া, শাহজাহান শাহ প্রসিদ্ধ আউলিয়া; ফটিকছড়ির মাইজভা-ারের সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী ও বাবা ভা-ারী, আনোয়ারার ওষখাইনের কানু শাহ প্রভৃতির দরবারকে মহামানবের মিলনমেলা বলা যেতে পারে। মাইজভা-ারী দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিয়াল স¤্রাট রমেশ শীল, বজলুল করিম মন্দাকিনি, ঈছাপুরী শাহ প্রভৃতি অবিস্মরণীয় সব গান রচনা করেছেন। এসব আধ্যাত্মিক দরবার শরীফকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করলে বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র ধন্য হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক জগৎ আলোকিত করে আছেন আর্য সঙ্গীত-খ্যাত ঠাকুর্দা বা সুরেন্দ্র লাল দাশ, যাঁকে ভারতের সঙ্গীত গুণীরা সম্মান করেছেন, শিল্পী মোহাম্মদ নাসির-প্রথম চট্টগ্রামী শিল্পী এইচএমবি থেকে যাঁর গানের রেকর্ড বের হয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রচয়িতা সৈয়দ মহিউদ্দিন, কিংবদন্তী শিল্পী মলয় ঘোষ দস্তিদার, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত ও আবদুল গফুর হালি, ম্যান্ডোলিনের আবু নঈম। গিটারের মানবেন্দ্র বড়–য়া, বেহালার অধর বাবু, বাঁশির সুচরিত চৌধুরী, অধুনা উস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের স¤্রাট ও স¤্রাজ্ঞী যথাক্রমে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষÑ এঁদের সঙ্গীত সাধনার ওপর বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কোন অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ আছে কি না আমি জানি না, না থাকলে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। কারণ এঁরাই চট্টগ্রামের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
বলীখেলা, মেলা, শাকপুরা, হাবিলাসদ্বীপ ও মহিরার রাস উৎসব, সীতাকু-ের চন্দ্রনাথ তীর্থ, মহেশখালীর আদিনাথ ও মন্দাকিনি শিষ চতুদর্শীর মেলা, সূর্যব্রত উৎসব, বান্দরবান ও কক্সবাজারের রাখাইনদের পানিখেলা, তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসীদের বৈসাবি উৎসব, রাউজানের মহামুনি, পটিয়ার ফরাতরা ও ঠেগরপুনির মেলা, বাঁশখালীর ঋষিকুম্ভ মেলা চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে কোন অনুষ্ঠান হলে তো ভালো হয়, না হলে অবিলম্বে এদিকে নজর দেয়া উচিত। বোয়ালখালীর মেধস মুনির আশ্রম থেকে দুর্গাপূজার উৎপত্তি বলে মনে করা হয়ে থাকে। জগতপুর আশ্রম একটি প্রসিদ্ধ আশ্রম। তেমনি রাম ঠাকুরের কৈবল্যধাম, চট্টেশ্বরী মন্দির, তারানাথ সাধুর পীঠস্থান; নানা লোক কাহিনী ও লোক উৎসব, যা’ নিয়ে চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।
দু’একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমি বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গিয়েছি। দোতলায় যে ম্যুরাল দেখলাম, তাতে চট্টগ্রামের সংস্কৃতির পরিচয়জ্ঞাপক কিছু দেখলাম না। শুধু তবলা শিল্পী প-িত বিজন চৌধুরী, শ্যাম-শেফালীর ম্যুরাল সম্ভবত আছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা এবং নূর ভাই’র আছে। সেগুলি ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের নৃত্যকলার আদিগুরু বুলবুল চৌধুরী, নভেরা আহমদÑহামিদুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে শহীদ মিনারের নকশা যিনি আঁকেন, তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত ভাস্কর, আরেকজন ভাস্কর আছেন চট্টগ্রামের, তিনি হচ্ছেন সোমনাথ হোর, মলয় ঘোষ দস্তিদার, রমেশ শীল, সাহিত্যবিশারদ ও নবীন সেনের ম্যুরাল বাঞ্ছনীয়। জব্বারের বলীখেলা, সীতাকু-ের মেলা, মাইজভা-ারের ওরশ, মহামুনির মেলা, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পানিখেলা, ঢেঁকিতে ধানভানা, রাতে বাড়ির দাওয়ায় গোল হয়ে বসে পুঁথি পাঠ শোনার দৃশ্য, ধান ঝাড়াউ-মাড়াই, খড়ের কুড়ে, পিঠা-পুলির দেয়াল চিত্র চট্টগ্রামের চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জীবন্ত করে চলবে।
বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সঙ্গে আমার দুটি যোগাযোগের কথা বলে এ প্রসঙ্গের ইতি টানবো। শেখ রিয়াজউদ্দিন বাদশা যখন জিএম হয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি উপযাচক হয়ে আমার সঙ্গে পরিচিত হন এবং আমাকে একদিন তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে যান। তাঁর চেম্বারে ভালো চেয়ার বা সোফাও ছিলো না, আমাকে সেটা দেখানোই ছিলো তাঁর উদ্দেশ্যে। আমি মেয়র মহিউদ্দিন ভাই ও মান্নান ভাইকে তাঁর অফিসে নিয়ে যাই এবং অফিসের দৈনদশা দেখাই। মহিউদ্দিন ভাই জিএম-এর অফিসে সুদৃশ্য চেয়ার, টেবিল, সোফা বসিয়ে সাজিয়ে দেন।
আর একবার শিল্পীদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছিলো। তখন প্রয়াত মৃণালদা আমাকে নিয়ে যান, আমি সমস্যাটা মিটিয়ে দিই। স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী সুজিত রায়ও এ বিষয়ে অবগত আছেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

আইনজীবী হত্যায় ছাত্রলীগের দুজনসহ অংশ নেয় ১৫ জন

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ধারালো অস্ত্র হাতে সরাসরি অংশ নেয় ১৫ জনের একটি দল। তাদের মধ্যে অন্তত দুইজন নিষিদ্ধ

বিস্তারিত »

চিন্ময়কাণ্ডে পুলিশের ৩ মামলা, আসামি ১৪৭৬

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায়

বিস্তারিত »

কালুরঘাট নতুন সেতু: ডিসেম্বরে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ

শত বছরের পুরোনো কর্ণফুলীর নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতু। কয়েক দফা সেতুটি মেরামত করে যান ও ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই

বিস্তারিত »

আনোয়ারায় চার শতাধিক রোগী পেল বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা

আনোয়ারায় চার শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে চাতরী ইউনিয়ন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এসময় চক্ষু

বিস্তারিত »

টেকনাফ সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের নাগরিক নিহত

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমার অংশে মাইন বিস্ফোরণে দেশটির এক নাগরিক মারা গেছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকাল পৌনে তিনটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে বিষয়টি

বিস্তারিত »

কালুরঘাটে নৌকার সঙ্গে ফেরির ধাক্কা, নিঁখোজ ১

চট্টগ্রামের কালুরঘাটের কর্ণফুলী নদীতে ফেরির সঙ্গে নৌকার ধাক্কা লেগে এক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। তার নাম আশরাফ উদ্দিন কাজল (৪৮)। একই ঘটনায় নদীতে পড়ে যাওয়া নুর

বিস্তারিত »

হজে গিয়ে মারা গেলেন চট্টগ্রামের ৩ বাসিন্দা

সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে চট্টগ্রামের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রাউজান ও কক্সবাজারের আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, সৌদি আরবের

বিস্তারিত »

বেতার-টেলিভিশন বৌদ্ধ শিল্পী সংস্থার আত্মপ্রকাশ

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন বৌদ্ধ শিল্পী সংস্থার আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে প্রথম সাধারণ সভা দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) জামালখানস্থ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন

বিস্তারিত »

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ স্বামী নিহত

কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের মাটিচাপায় গর্ভবতী স্ত্রীসহ স্বামীর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাত সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনা-খাজামনজিল এলাকায় এ

বিস্তারিত »