‘বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা ঘিরে উত্তেজনা ও অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে ইসলামী ব্যাংকে। পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় কয়েক হাজার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে, তিন শতাধিক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরিচ্যুতি ও বৈষম্যের প্রতিবাদে ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মহাসড়ক অবরোধ ও অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, অনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া জনবলকে যাচাইয়ের আওতায় আনা ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—দ্রুত সম্প্রসারিত এ সংকটের সমাধান কোন পথে এগোবে ইসলামী ব্যাংক?
মহাসড়ক অবরোধ
শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মানববন্ধন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে নারী–পুরুষ মিলে সহস্রাধিক কর্মী মহাসড়কে বসে পড়েন এবং বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করলে বেলা পৌনে ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন তারা।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল মোমিন বলেন, “আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। আমরা তাদের দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।”
‘অবৈধ’ ব্যবস্থাপনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ‘বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষার তালিকাভুক্ত কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে এসএম এমদাদ হোছাইন অভিযোগ করেন, “চট্টগ্রামের কর্মকর্তা হওয়ায় আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। ইতোমধ্যে ৩০০ জনের বেশি কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন, ৫ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তাকে ওএসডি বা শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমাদের ইউজার আইডি, স্টাফ অ্যাকাউন্ট, এমনকি বেতন অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ তারিখের বেতন তুলতেও পারিনি।”
পাঁচ দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়—
১. চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল,
২. আন্দোলনে জড়িতদের শাস্তিমূলক বদলি বন্ধ,
৩. বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ তৈরি,
৪. চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের ওপর ‘নির্যাতনের’ তদন্ত,
৫. দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অবস্থান
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, “যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, তারা যেভাবেই নিয়োগপ্রাপ্ত হন না কেন, তাদের যোগ্যতা যাচাই জরুরি। আমরা বিষয়টি মানবিকভাবে দেখছি। যারা যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন, তাদের রাখা হবে; প্রয়োজনে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে ব্যবস্থাপনা বিভাগ।”
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়। ওই সময়ে অভিযোগ ওঠে—কোনো পরীক্ষা বা যাচাই ছাড়াই মৌখিক নির্দেশে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি নিয়োগ পান। এতে ব্যাংকের জনবল ২০১৬ সালের ১৩ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজারে।
সম্প্রতি ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে ‘বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়। তবে পরীক্ষায় অংশ নেন মাত্র ৪১৪ জন। পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন—‘যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার’ নামে তাদের কয়েক হাজার সহকর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ নিয়ে কয়েকজন কর্মী আদালতে রিটও করেছেন। হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।