সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক, ১৪৩২, ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

মুক্তিযুদ্ধ যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁরা চলে গেছেন, হারিছই আছেন একা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম শহরে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। সাতজন ছিলেন তাঁরা, পাঁচজন ইতিমধ্যে তাঁদের প্রভুর ডাক পেয়ে এ গ্রহ ছেড়ে চলে গেছেন প্রভুর সন্নিধানে। সবচেয়ে যাঁর বেশি ছিলো বয়স, তিনিই আছেন বেঁচে আমাদের মাঝে। তাঁর জন্ম তারিখ তিনি আমাকে যা বলেছেন, তা’ যদি সত্য হয় তাহলে তাঁর বয়স চার কুড়ির ওপর আরো ছয় বছর।
তিনি আমাদের হারিছদা। শহরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় সবাই চেনেন তাঁকে। তিনি সর্বজ্যেষ্ঠ, তাঁর চেয়ে বড় আর কেউ নেই এখন চট্টগ্রামে। উত্তরের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও বয়সে তাঁর চেয়ে ছোট। নগরের নুর মোহাম্মদ চৌধুরী ও শাহ বদিউল আলমও ছোট। একজন সম্ভবত আছেন হারিছদার বড়, তিনি হালিশহরের মাইক এজাহার-এম এ আজিজের খালাতো ভাই।
পর্যায়ক্রমে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হন। কিন্তু শুরুর একটা আলাদা গুরত্ব থাকবেই। সর্বপ্রথম যারা মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যে একটি গ্রুপ গঠন করেছিলেন, সেজন্য একটা মর্যাদা তাঁরা পাবেনই। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পথিকৃৎ, তাঁরা প্রায় সবাই পরলোকবাসী, শুধু মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য একা হারিছদাই জীবনের তরী বেয়ে চলেছেন। যেমন একাদা এই বাংলায় বর্গী, হার্মাদ দস্যুদের ভয় দেখিয়ে মায়েরা শিশুদের ঘুম পাড়াতেন।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করে বাংলাদেশে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং আমাদের মাতৃভূমি থেকে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষার আহবান জানানোর পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি বিমান বাহিনী চান্দগাঁও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর বোমাবর্ষণ করে বেতার সম্প্রচার থামিয়ে দিয়েছিলো। ততক্ষণে বিভিন্ন দিক থেকে পাকিস্তানি হায়েনারা শহরে চলে আসে, ইপিআর, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, আনসার, পুলিশ ও ছাত্র-জতার প্রাথমিক প্রতিরোধ ভেঙে যায় এবং শহর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়।
নতুন করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাই গ্রামে চলে যান এবং এক সময় গ্রামের প্রতিরোধও খসে পড়তে থাকে। এই সময চট্টগ্রাম শহর এক ভূতুড়ে জনপদে পরিণত হয়। পাকি জানোয়াররা শহর বন্দর জনপদে চিরুণী অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার সমর্থক ছাত্র-জনতাকে খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করতে থাকে। দিনে আকাশে শকুনের ওড়াওড়ি, পথে ঘাটে পড়ে থাকা আদম সন্তানের লাশ খুবলে খুবলে খায়, কর্কশ আওয়াজে অনবরত ডাকে কাক, রাতে ভয়ার্ত কুকুরের বিলম্বিত স্বরের মধ্যে যেন কান্না ঝরে ঝরে পড়ে। শিশুরাও তখন কাঁদতে ভুলে গিয়েছিলো। এমনি ভয়ত্রাসিত জনপদে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে সাত মুক্তিযোদ্ধার চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার ঘটনা একটি ইতিহাস, একটি কিংবদন্তী। আজকে যে বিরাট চট্টগ্রাম মহানগর আমরা দেখি, একাত্তরে তা’ এত বড় ছিলো না। থানাও ছিলো তিনটি, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ। দেওয়ানহাট ব্রিজ সম্পূর্ণ হয়নি। কদমতলী রেলওয়ে আটমাসিং ক্রসিং থেকে উত্তর দিকে রেয়াজুদ্দিন বাজার, স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, নন্দনকানন, কে সি দে রোড, লালদিঘি, বক্সিরহাট, খাতুনগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, চাক্তাই, পাথরঘাটা, আলকরণ, ফিরিঙ্গীবাজার, সদরঘাট, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চকবাজার একটি চট্টগ্রাম; আর আটমাসিং ক্রসিং ও দেওয়ানহাটের দক্ষিণ দিকে আগ্রাবাদ, বন্দর, মাঝিরঘাট, মাদারবাড়ি, নিমতলা, সদরঘাট-আরেক চট্টগ্রাম। ডবলমুরিং-এর সবুজবাগ, পানওয়ালাপাড়া, বেপারীপাড়া, সুপারিপাড়া ইত্যাদি ছিলো বিচ্ছিন্ন একটি জনপদ। খাল, সবুজ গাছপালার বেষ্টনীতে ছাড়া ছাড়া দু’একটি বাড়ি। এমনি পটভূমিতে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে জুমার নামাজের পর রামপুরে আবদুল মোনাফের বাংলো ঘরে জড়ো হয়েছিলেন সাতজন যুবক এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর শপথ নিয়েছিলেন তাঁরা হলেন—মোহাম্মদ হারিছ (আনন্দীপুর), শেখ দেলোয়ার হোসেন (গোসাইলডাঙ্গা), আবদুল মোনাফ (রামপুরা), আবদুর রউফ (দামপাড়া) এবং মীর সুলতান আহমদ, সলিমুল্লাহ ও আবু সাঈদ সর্দার (পানওয়ালাপাড়া)। সেই বৈঠকে তাঁরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাঁরা অবিলম্বে চট্টগ্রাম শহরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের আলোচনায় যেটা বেরিয়ে আসে, সেটা হলো অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেছে, আর বসে থাকার সময় নেই, এখন এ্যাকশনে যাওয়ার সময়। তাঁরা পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে আল্লাহর নামে এই মর্মে শপথ গ্রহণ করেন যে, তারা মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।
মৌলভী সৈয়দ পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ভারতের সাহায্যে আবার যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভারতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় তাঁকে দেশে ফেলত আসতে হয় এবং সীমান্ত অতিক্রমের সময় সেনাবাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। মৌলভী সৈয়দের পর শেখ দেলোয়ার পরলোকে পাড়ি দেন। তারপর বিভিন্ন সময়ে আবদুল সোনাফ, আবদুর রউফ, মীর সুলতান, সলিমুল্লাহ, সর্বশেষ সম্প্রতি আবু সাঈদ সরদার পরলোকগমন করেন। সরদারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেন।
একাত্তরে সারা বাংলাদেশে মুুক্তিযুদ্ধের তিনজন প্রবাদপুরুষ ভারতে না গিয়ে দেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন-টাঙ্গাইলের আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দ আহমদ, সুলতান উল কবির চৌধুরী। মৌলভী সৈয়দ ছাড়া চট্টগ্রামের প্রথম সারির সব ছাত্রনেতাই ভারতে যান। ভারতে না গিয়ে তাদের উপায় ছিলো না। কারণ অধিকৃত চট্টগ্রাম তাদের জন্য নিরাপদ ছিলো না। যুদ্ধের একেবারে শুরুতে ২৭ মার্চ শহরে প্রতিরোধ যুদ্ধরত ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের জন্য রসদ সরবরাহ করতে গিয়ে শহর ছাত্রলীগের দু’জন বড় নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে যান। ২৮ মার্চ মোমিন রোড দিয়ে ষোল শহরে প্রতিরোধ যুদ্ধরত ইপিআর ও ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের জন্য খাদ্য ও রসদ নিয়ে যাওয়ার পথে চেরাগী পাহাড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর চোরাগোপ্তা হামলায় শহীদ হন বশরুজ্জামান চৌধুরী (আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছোট ভাই ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর চাচা), জাফর আহমদ, দীপক বড়ুয়া ও মাহবুবুল আলম চৌধুরী। ভারতে যাওয়ার পথে ১৩ এপ্রিল পাহাড়তলী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সম্মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এমবুশে পড়ে শাহাদাতবরণ করেন ছাত্রনেতা আবদুর রব (জিএস-চাকসু) ও জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (এজিএস- সিটি কলেজ ছাত্র সংসদ)।
সবাই চলে গেলেও ছাত্রনেতা মৌলভী সৈয়দ শহর ছেড়ে যাননি। চাইলে যেতে পারতেন, কিন্তু যেতে চাননি। অথচ তাঁরই বোধ হয় যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো বেশি। কারণ চট্টগ্রাম শহরে ছাত্রনেতা হিসেবে তিনিই বোধ হয় বেশি পরিচিত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছিলেন। তিনি ১৯৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ছাত্রদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং সেন্টার খোলেন। সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সামনের চত্বরে ট্রেনিং হতো। খুব ভোরে শুরু হতো ট্রেনিং, উৎসাহী তরুণরা দলে দলে ট্রেনিংয়ে সামিল হতে থাকলে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ট্রেনিংয়ের স্থানই পরিবর্তন করে পলোগ্রাউন্ডে নিয়ে যেতে হয়।

১ মার্চ ইয়াহিয়ার সংসদ অধিবেশন স্থগিতের বিতর্কিত ঘোষণা যেদিন বাংলার মানুষের মনে জমে থাকা বারুদে অগ্নিসংযোগ করলো, সেদিন থেকে কিংবা আরো আগে থেকে মৌলভী সৈয়দ ছিলেন অশান্ত ঝড়ের পাখির মতো চঞ্চল, অস্থির। শহর জুড়ে আন্দোলনের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ হয়ে তিনি সংগ্রামের জ্বলন্ত আগুন ছড়াতে ছড়াতে ছাত্র জনতার সংগ্রামী চেতনায় শান দিতে থাকেন।
২ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে হরতাল পালিত হয়। সকাল ৮ টায় মিছিল বের হয়। দুপুর ২টায় সিটি ছাত্রলীগের উদ্যোগে লালদিঘিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা। ছাত্রনেতা এসএম ইউসুফ, মৌলভী সৈয়দ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইদরিস আলম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম.আর. সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী, এমএ হান্নান, এমএ মান্নান এ সভায় বক্তৃতা করেন। সভায় পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানো হয় এবং উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। ২৫ মার্চ স্টেশন রোডের রেস্ট হাউসে জহুর আহমদ চৌধুরীর সিটি আওয়ামী লীগের দপ্তরকে কেন্দ্র করে মৌলভী সৈয়দ দিনরাত ব্যস্ত থাকেন অসহযোগ আন্দোলনে। ২৬ মার্চ সকাল থেকে বিদ্রোহী বাঙালি সৈনিকরা এসে ভিড় করতে থাকে রেস্ট হাউসে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যুহ রচিত হয়। বাঙালি সৈনিকদের খাদ্য, ওষুধ সরবরাহ করতে করতে ৩০ মার্চ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। অতঃপর বহদ্দারহাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর পাকিস্তানিদের করতলগত হয়। এতদিনের ছুটাছুটি, যুদ্ধ, গোলাগুলি, জনরব হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়। ১১ এপ্রিল কালুরঘাটের শেষ প্রতিরোধ ঘাঁটিরও পতন ঘটে। ছাত্র-যুব-রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রায় সকলেই এরই মধ্যে শহর ছেড়ে গ্রামে, কেউ কেউ ভারতের পথে রামগড়ে উপনীত হয়েছেন। সামান্য যে ক’জন শহর থেকে বের হতে পারেননি, তারা আত্মগোপন করেছেন। সাধারণ মানুষও দলে দলে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানিদের আক্রোশ বেশি, তারা নর-নারী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা পৈতৃক ভিটেমাটি, সহায়-সম্পদ ত্যাগ করে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। ধীরে ধীরে শহরটা খালি হয়ে গেল। কারফিউ কবলিত শহর প্রেতপুরীতে পরিণত হলো। পথে ঘাটে পড়ে থাকা মানুষের লাশ নিয়ে শেয়াল-শকুনের কাড়াকাড়ি। মাঝে মাঝে জলপাই রঙের ট্যাংক, সাঁজোয়া যানের আনাগোনা, যমদূতের মতো হঠাৎ মৌনতা ভেদ করে উদয় হয় খানসেনা। এমনি ভয়ানক ভয়ার্ত পরিবেশে যখন অতি বড় সাহসী পুরুষের বুকও অজানা ভয়ে কেঁপে ওঠার কথা, তখন পাহাড়তলী বাজারের নিজের সাইকেল রিক্সার পার্টসের দোকানে গা ঢাকা দিয়ে থেকে গেলেন দুঃসাহসী মৌলভী সৈয়দ। এই দোকানটি অসহযোগ আন্দোলনেরও অনেক পূর্বে তিনি খুলেছিলেন হয়তো আজকের এই দিনটিতে আশ্রয় নেবার জন্যে। সেই গুপ্ত আবাসে বসেই তিনি শহরের চারিদিকে খোঁজখবর নিতে থাকেন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের। একজন একজন করে অনেকের সাথে যোগাযোগ হতে থাকলো। এক সময় তাঁর এই দোকানটিই অধিকৃত চট্টগ্রাম শহরের রাজনৈতিক কর্মীদের একমাত্র যোগাযোগ কেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং তাদের যাতায়াত এত বেড়ে যায় যে, এক সময় গোপন আশ্রয় আর গোপন থাকে না। গন্ধ শুঁকে শুঁকে হাজির হয়ে যায় পাকিস্তানি গুপ্তচর। তারপর সুযোগ মত এক গভীর রাতে ওই দোকানে হানা দিয়ে মৌলভী সৈয়দকে তুলে নেয় পাকিস্তানি সেনারা। হাতকড়া পড়িয়ে গাড়িতে করে ট্রাঙ্ক রোড ধরে উত্তর দিকে নিয়ে যাবার সময় মৌলভী সৈয়দ মরিয়া হয়ে রাত্রির অন্ধকারে বাইরে ঝাঁপ দিলেন। পড়লেন রাস্তার পশ্চিম পাশে এবং গড়িয়ে গড়িয়ে একটি পানাভর্তি জলাশয়ে ডুব দিয়ে হারিয়ে গেলেন।
পাকিস্তানি সৈন্যরা পানির ওপর অনেক গুলি করলো, কিন্তু একটিও তাঁর গায়ে লাগলো না। অনেকক্ষণ পর সাবধানে মাথা তুলে দেখেন সৈন্যরা চলে গেছে। তিনি দামের ভিতর থেকে বের হলেন, কিন্তু কাপড় চোপড় কোথায় চলে গেছে। উলঙ্গ শরীর নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে হাজির হলেন আনন্দীপুর (মগপাড়া) মুন্সি বাড়িতে, সিটি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হারিছের বাড়িতে। সে বাড়ি তাঁর অনেক দিনের চেনা। হারিছদার ভাই সায়ফুল, জাহেদ (ভিপি-সিটি কলেজ ছাত্র সংসদ) তাঁর সঙ্গে সিটি কলেজে ছাত্রলীগ করেছেন। হারিছদা তখনো ঘুমাননি, তিনি তাঁর বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ের পাকা ঘাটে বসে পাড়ার আরো ক’জন বয়স্ক লোকসহ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করছিলেন। কাদামাখা সম্পূর্ণ উলঙ্গ একজন মানুষকে জ্যোৎস্না প্লাবিত রাতে অকস্মাৎ আবির্ভূত হতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন হারিছদা। মৌলভী সৈয়দ তাঁকে চিনতে পেরে ‘বদ্দা’ (বড়দা) বলে ডেকে উঠলে হারিছদা চিনতে পারেন। মৌলভী সৈয়দ তাড়াতাড়ি পুকুরে নেমে যান। হারিছদা বাড়ির ভিতরে গিয়ে পরনের কাপড় চোপড় নিয়ে আসেন। মৌলভী সৈয়দ গোসল সেরে উঠে সে কাপড় পরে নিলেন। হারিছদা’র বাড়ির ভিতরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর মৌলভী সৈয়দ সে রাতেই রঙ্গীপাড়ায় সুলতান আহমদ মিস্ত্রির বাড়িতে চলে গেলেন। এরপর মৌলভী সৈয়দ চট্টগ্রাম শহরে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হোসেন কচি : চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সবখানে তিনি নেতা

মিষ্টি হাসিমাখা মায়াবি মুখাবয়বের অধিকারী রবিউল হোসেন ছিলেন ষাটের দশকের চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতির একজন প্রিয়ভাজন নেতা। ষাটের শেষভাগে উদ্ভূত হয়ে তিনি নিজের জন্য আলাদা আসন

বিস্তারিত »

দম-এ মেহজাবীন

নাটকে বিরতি দিয়ে ওটিটিতে নিয়মিত হয়েছিলেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। এই অভিনেত্রী এখন পুরোপুরি চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সিনেমায় যুক্ত হতে যাচ্ছেন মেহজাবীন। শোনা

বিস্তারিত »

সাভারে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

ঢাকার সাভারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গত রোববার রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত বিরুলিয়া

বিস্তারিত »

সালমান খানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা

বলিউড সুপারস্টার সালমান খান এবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। সৌদি আরবের রিয়াদে এক অনুষ্ঠানে মুখ ফসকে এমন কথা বললেন, যা নিয়ে তোলপাড় পাকিস্তানজুড়ে। বেলুচিস্তানকে ‘ভিন্ন দেশ’ হিসেবে

বিস্তারিত »

অধ্যাপক নূরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু

২০১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত মুহাম্মদ নূরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু স্মারকগ্রন্থে আমার লেখায় আমি বলেছিলাম তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ ছিলেন। আমরা মানে, যারা সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত

বিস্তারিত »

আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবি জানালো বাংলাদেশ

জেনেভায় গৃহীত ‘জেনেভা কনসেন্সাস’ এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের ১৬তম মন্ত্রীপর্যায়ের শীর্ষ অধিবেশন (আঙ্কটাড ১৬) সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। ২০-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত

বিস্তারিত »

থাইল্যান্ডের রানি মা সিরিকিত মারা গেছেন

  থাইল্যান্ডের রানি মা সিরিকিত থাইল্যান্ডের রানি মা সিরিকিত আর নেই। দেশটির রাজপ্রাসাদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ৯৩ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজা

বিস্তারিত »

মির্জা ফখরুল : বিএনপি সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলবে

ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলবে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকায় ক্ষুদ্র

বিস্তারিত »

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে দাবি না মানলে বুধবার পদযাত্রা ঘোষণা

  অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সরকারের ঘোষিত পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়নসহ মোট পাঁচটি দাবি জানিয়েছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী

বিস্তারিত »