সাংবাদিকদের দশম ওয়েজবোর্ড গঠন, আবাসনের ব্যবস্থা করা, কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়তের হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদেরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসের (বিএফইউজ) সম্মেলনে এসব প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর বিএনপির হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের যেভাবে মাটিতে ফেলে পেটানো হলো, নির্যাতন চালানো হলো এটা অমানবিক। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর দেখা যায়নি। এটা কেন করা হলো-সেই প্রশ্নের উত্তর বিএনপিকে দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয় তা দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি ছোট ছোট দল ছিল। আমরা বাধা দেইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু দেখা গেল শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করল। তাদের লক্ষ্যবস্তু দেখা গেল সাংবাদিক ও পুলিশ।
তিনি বলেন, তারপর পুলিশের ওপর অত্যাচার। পুলিশকে শুধু মাটিতে ফেলে পেটানোই নয়, বেহুশ হয়ে যাওয়ার পরও পেটানো ও কোপানো হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে ধাওয়া, হামলা করেছে। এত অমানবিক আচরণ একটা রাজনৈতিক দল করতে পারে না। কিন্তু এটাই বিএনপির চরিত্র। তারা ২০১৩, ১৪, ১৫ তে অগ্নিসংযোগ করেছে নির্বাচন ঠেকাতো। তারা পারেনি। তারা হত্যা, গুম, খুন ভালো পারে।
এ সময় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো কোনো পত্রিকা এটা (২৮ অক্টোবরের ঘটনা) কভার দেওয়ারও চেষ্টা করে, তাদের ধিক্কার জানাই। দেখা গেলো, যুবদলের একজন নেতা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরে আগুন দিচ্ছে, পুলিশ পেটাচ্ছে। তারা ভেবেছিল, রেহাই পেয়ে যাবে। ধরা তো পরে গেছে। এর শাস্তি হবে।
গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। এখন তারা কোথায়? আমাদের দেশের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কিছু নেই? আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানেও। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না।
এ সময় সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, একটা জমির আবেদন দিয়েছেন আমি দেখবো। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেবো। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা উচ্চমানের। এ পেশা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। আমি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আরও ১০ কোটি টাকা অনুদান দেবো। মালিকরাও কিছু কিছু দিয়েন। কারা দিলেন আমরা কিন্তু দেখবো।
এ সময় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, মালিকরা কেন কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দেয় না?
দশম ওয়েজবোর্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মালিকদের দায়িত্ব। সেটা বাস্তবায়ন না করে মামলা করলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। সেটা আমরা দেবো। টেলিভিশনের সাংবাদিকদেরও আমরা ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনবো। অনেক সময় আপনাদের মধ্যে নানামতের কারণে অনেক কিছু সময়মতো করা যায় না, এটায় আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তবে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডে নিয়ে আসতে হবে। সামনে ওয়েজবোর্ড গঠনে মাথায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দিয়ে থাকি। আজ এখানে আসার আগেও কিছু ফাইল দেখে এসেছি, সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যত বেশি, সংবাদপত্র তার চেয়েও বেশি। উন্নত দেশেও এত সংবাদপত্র নেই। এর বাইরেও দেশে বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও ১৫টা সম্প্রচারের অপেক্ষায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যার কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন। সাংবাদিক কলাকুশলীদের যাতে কর্মসংস্থান হয়, সমস্ত কিছু বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ করেছি।
সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএফইউজে প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য, সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।