ছাত্রজীবনে আমরা পড়েছি লন্ডনের টেমস নদীর তীরে একটা টানেল আছে। এই টানেল দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে যায়। একসময় আমি জাপান গিয়েছিলাম। সেখানে আমি একুয়া নামে একটি টানেল দেখার জন্য গিয়েছিলাম। নদীর তলদেশে এই টানেল, সুড়ঙ্গ দিয়ে চলাচলের পথ, এটা সত্যি একটা অবাক করা ব্যাপার। চট্টগ্রামের মানুষ কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হবে। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক সময় এই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন বীর চট্টলার তিন তিনবার নির্বাচিত সাবেক সফল সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সময় তিনিও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আশা-আকাক্সক্ষার কথা করেছিলেন।
সবকিছু মিলিয়ে বলতে হয় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আপনি যদি প্রশ্ন করেন কেন? এর উত্তরে আমি বলব আনোয়ারা-বাঁশখালী যে প্রান্ত রয়েছে সেটা শহরের অনেক কাছে কিন্তু একটা নদী কর্ণফুলী দিয়েই বিভক্ত। এই টানেল নির্মাণের ফলে দশ মিনিটের মধ্যেই চট্টগ্রাম শহর থেকে আনোয়ারা প্রান্তে যে ইপিজেড, শিল্প, কারখানা রয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পারবে। সুতরাং বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, কোন রকম যানজট ছাড়াই বিমান থেকে নেমে তারা কম সময়ে সেখানে পৌছাতে পারবে। এটা একটা মাইলফলক। এরপরে ওপারে যে শিল্প কারখানা রয়েছে, তার দ্রুতই পরিবর্তন আসবে। একই সাথে ওই এলাকার মানুষের জীবন মান অনেক উন্নত হবে। আগে যেখানে চট্টগ্রাম শহরে আসতে তাদের ঘণ্টার বেশি সময় লাগতো কর্ণফুলী নদী পার হতে। এখন তারা দ্রুত সময়ে শহরে পৌঁছাতে পারবে। বিমান বন্দর থেকে আগ্রাবাদ আসতে যে সময়টা লাগবে তার চেয়েও কম সময়ে তারা টানেল দিয়ে তাদের বাড়ি আনোয়ারা পৌঁছে যেতে পারবে। এই টানেল নির্মাণের ফলে তারা এখন চট্টগ্রাম শহরে বসবাস না করে আদিবাড়ি কর্ণফুলী-আনোয়ারায় বসবাসের জন্য যোগ্য মনে করবে। এতে করে আমাদের শহরের উপর চাপ কমবে, এবং ওই পাড়ে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এক বিরাট সাফল্য বয়ে আনবে। পাশাপাশি এই টানেল নদীর দুই পাড়ের মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। এই টানেল দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটক এখানে আসবে। সমুদ্র নদী টানেল পাহাড় থাকার কারণে চট্টগ্রামকে যে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয় এই টানেল নির্মাণের ফলে তা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। নেভাল রোড, লিংক রোড, পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রোড এগুলো চট্টগ্রামের পর্যটনের আরো নতুন মাত্রা যোগ করবে। সুতরাং সবকিছু মিলে আমি মনে করি এই টানেল চট্টগ্রামবাসীর জন্য আশীর্বাদ। চট্টগ্রামবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশাল উপহার।
বীর চট্টলার মানুষকে এই টানেল উপহার দেওয়া একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। এত বড় মহাউন্নয়নযজ্ঞ শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব হত বলে আমার মনে হয় না। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে সম্ভব হয়েছে নয় মাসে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া, বাঙালি জাতিকে একটি নতুন দেশ উপহার দেওয়া। ঠিক তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরীরে তার রক্ত বহমান, যার জন্যই এই দুঃসাধ্য কাজ তিনি সহজেই সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
বাংলাদেশে অনেক জাতীয় নেতা রয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে চট্টগ্রামে ৮ জন মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু এত মন্ত্রী পেয়েও চট্টগ্রামবাসী কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে পায়নি। সুতরাং এই কাজগুলো একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। আমি মনে করি বাংলাদেশে আর যদি পাঁচটি বছর তিনি সময় পান এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে যদি হায়াত দেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারেন তাহলে তিনি বাংলাদেশকে এমন একটি উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যেখান থেকে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ইউরেনিয়াম যুগে প্রবেশ করেছে যেটা আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে। এটা আমাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। এখন আমাদের তৃণমূলের যে মানুষ রয়েছে তাদের জন্য যে পেনশন স্কিম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাতে নিয়েছেন। বিদেশে যেটা চালু রয়েছে। ৬০ বছরের পরে ঘরের মানুষের কাছে, সমাজের মানুষের কাছে যারা নিজেদের বোঝা মনে করেন, অবহেলিত মনে করেন তাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে পলিসি, সেটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি পেনশন স্কিমের আওতায় যদি সবাইকে আনতে পারি তাহলে আমাদের এই সিনিয়র সিটিজেনরা নিজেদের সমাজের কাছে বোঝা মনে করবে না। বরং পরিবারের কাছে তারা সম্পদে পরিণত হবেন। পেনশনের টাকায় তারা পরিবারের দুঃসময়ে সহযোগিতা করতে পারবেন। সর্বোপরি সামাজিক পরিবর্তন, দেশের পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবকিছু মিলিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীতে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
তবে এখানে কিছু সংশোধনী আছে বলে আমি মনে করি। যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের তিন তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত প্যানেল মেয়র, তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দেশের বাইরে থাকাকালীন আমি পাঁচবার ভারপ্রাপ্ত মেয়য়ের দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে আমি চট্টগ্রাম চার সংসদীয় আসনের (উত্তর পাহাড়তলী উত্তর কাট্টলী এবং সীতাকুণ্ড) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সবকিছু মিলিয়ে বলতে চাই চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তত আরেকটিবার রাখা দরকার, দেশ পরিচালনায় থাকার দরকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) কর্ণফুলী তলদেশে টানেল উদ্বোধন হবে চট্টগ্রামের অধিবাসী হিসেবে আমার অনুভূতি অভূতপূর্ব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম লন্ডনের টেমস নদীর তীরে টানেল অবস্থিত কেমন হয় কিভাবে হয় কেমন হয় কিভাবে হয় কোনদিন লন্ডনে যেতে পারবো কিনা, এই টানেল পার হতে পারব কিনা নদীর দেশ নিয়ে টানেল দেখতে কেমন হবে, এটা মাটির তলদেশে কিভাবে হবে এই যে জানার আগ্রহ আগামী ২৮ অক্টোবর আমাদের সেটার ক্ষণ শেষ হবে। আমরা চট্টগ্রাম শহরের প্রান্ত দিয়ে টানেলে প্রবেশ করব এবং আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে উঠবো। আমাদের এই একটা কৌতূহলের বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ অনুভূতি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে চট্টগ্রামের এক জনসভায় বলেছিলেন তিনি চট্টগ্রামের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। তিনি তার কথা অনুযায়ী চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেস রোড লিংক রোড, চট্টগ্রাম বন্দরের এক্সটেনশন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের সম্প্রসারণ, এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশাল এক উপহার।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় প্রত্যেক দেশে একজন গুণী মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যেমন মালয়েশিয়ার মাহাথির মাহমুদ, সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান এ ধরনের ব্যক্তিদের নাম আপনারা শুনেছেন যারা নিজ নিজ দেশকে উন্নয়নের শিকড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনস্বীকার্য অবদান রেখেছেন। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে বাঙালি অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে পরিগণিত হবে।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে যে কলঙ্ক বাঙালির গায়ে লেপন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার কাজের মাধ্যমে দেশকে যে স্থানে নিয়ে গেছেন কৃতজ্ঞতা জানানোর মাধ্যমে আমরা কালিমামুক্ত হতে চাই। প্রবাদ আছে, যে দেশে গুণী মানুষের কদর নাই সে দেশে গুণীজন জন্মায় না, গুণী মানুষ জন্মগ্রহণ করে না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুণী একজন মানুষ, দেশপ্রেমিক মানুষ, বাঙালি জাতির জন্য অনেকটি সম্পদ। একজন চট্টগ্রামবাসী হিসেবে, আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু : কাউন্সিলর, ১০নং ওয়ার্ড কাট্টলি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।