কিছু পানীয় দেখতে অস্বাস্থ্যকর না লাগলেও- অতিরিক্ত পান করলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, চিন্তাশক্তির ধীরগতি এমনকি ডিমেনশা বা স্মৃতিভ্রংশ ও স্ট্রোকের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পুষ্টিবিদ রানিয়া বাতায়নেহ ‘ইটদিস নট দ্যাট ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “কখনই কাউকে সম্পূর্ণভাবে কোনো খাবার বা পানীয় নিষিদ্ধ করতে বলি না। আসল বিষয় হল দীর্ঘমেয়াদে কী পান করছেন তার ধরন।”
তার মতে, “এক কাপ কোমল পানীয় বা এক গ্লাস অ্যালকোহল কারও ক্ষতি করবে না। তবে নিয়মিত অতিরিক্ত গ্রহণ, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারের সঙ্গে করলে— মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে।“
চিনি মিশ্রিত কোমল পানীয়
গরম দিনে ঠাণ্ডা কোমল পানীয় নিঃসন্দেহে সতেজতা দেয়। তবে এটি মস্তিষ্কের জন্য মোটেও ভালো নয়।
২০২৪ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মাত্র দুই ক্যান কোমল পানীয় পান করলেই হৃদস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে, ব্যায়াম করলেও ঝুঁকি কমে না।
রানিয়া বাতায়নেহ ব্যাখ্যা করেন, “নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে রক্তে শর্করা ও ইন্সুলিনের মাত্রা বারবার বাড়ে, যা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি মস্তিষ্কের আকার ছোট করে দিতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি কেউ একইসঙ্গে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খায়, তাহলে ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তাই কোমল পানীয়কে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত না করাই ভালো।“
শক্তিবর্ধক পানীয়
অনেকেই ক্লান্তি দূর করতে বা ঘুম ভাঙাতে শক্তিবর্ধক পানীয় পান করেন। তবে এটি সাময়িক শক্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
বাতায়নেহ বলেন, “অনেকেই সকালে নাশতার পরিবর্তে শক্তিবর্ধক পানীয় গ্রহণ করেন। এতে শরীরে প্রচুর ক্যাফিন ও উত্তেজক পদার্থ প্রবেশ করে। তবে মস্তিষ্ক সাধারণত খাবার থেকে যে ধীরস্থির পুষ্টি পায়, তা আর পাওয়া হয় না।”
তিনি বলেন, “এর ফলে রক্তে শর্করার ওঠানামা হয়, শক্তি দ্রুত ফুরিয়ে যায় এবং মনোযোগ কমে যায়। নিয়মিত এমন হলে স্নায়ুতন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্ষয় ডেকে আনে।“
অতিরিক্ত অ্যালকোহল
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সিটিটিউট অন অ্যালকোহল অ্যাবিউজ অ্যান্ড অ্যালকোহলিজম’-এর তথ্য অনুযায়ী, নারীদের জন্য দিনে চার বা সপ্তাহে আট গ্লাস এবং পুরুষদের জন্য দিনে পাঁচ বা সপ্তাহে ১৫ গ্লাসের বেশি পান করা ‘অতিরিক্ত’ হিসেবে গণ্য হয়।
রানিয়া বাতায়নেহ বলেন, “অতিরিক্ত মদ্যপান মস্তিষ্কের আয়তন কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে ‘হিপোক্যাম্পাস’ নামের অংশটি, যা স্মৃতি ও শেখার সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়া অ্যালকোহল মস্তিষ্ক সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ভিটামিন শরীরে শোষণে বাধা দেয়।”
কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত কোমল পানীয়
অনেকে মনে করেন ‘ডায়েট সোডা’ বা চিনিমুক্ত কোমল পানীয় তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে বাস্তবে তা নয়।
রানিয়া বাতায়নেহ বলেন, “ডায়েট সোডায় চিনি না থাকলেও কৃত্রিম মিষ্টি থাকে, যা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। আর এই দুই বিষয় সরাসরি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডায়েট কোমল পানীয় পান করলে স্ট্রোক ও ডিমেনশা’র ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, “যদি খাদ্যাভ্যাসে প্রক্রিয়াজাত খাবার থাকে, তবে এই ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়ে যায়।”
তার পরামর্শ, “এমন পানীয়ের পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানি, ফলের রস বা চিনি ছাড়া চা বেছে নিতে হবে।
অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত কফি
কফি মস্তিষ্কের জন্য উপকারী, কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তবে কফিতে চিনি, ক্রিম, সিরাপ বা হুইপড ক্রিম মেশালে সেটি আর উপকারী থাকে না।
রানিয়া বাতায়নেহ বলেন, “এভাবে কফিকে আসলে মিষ্টান্নে পরিণত করা হয়। নিয়মিত এমন পানীয় পান করলে রক্তে শর্করা হঠাৎ বাড়ে, প্রদাহ সৃষ্টি হয়, আর দীর্ঘমেয়াদে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “কফি উপভোগ করতে চাইলে চিনি ছাড়া বা খুব অল্প দুধ দিয়ে পান করতে হবে। এতে কফির প্রকৃত উপকার পাওয়া যায় এবং মস্তিষ্কও থাকে সতেজ।”