সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৭ মাঘ, ১৪৩১, ১০ শাবান, ১৪৪৬

জয় বাংলা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত গতকাল এক রায়ে বলেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান নয়। ইতিপূর্বে হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই রায়কে বাতিল করে উক্ত রায় প্রদান করে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান থেকেই বাংলাদেশের জন্ম। আদালত তার জন্মদাতাকেই অস্বীকার করল। কিন্তু জাতীয় স্লোগান না হলেও মানুষের হৃদয় থেকে তো ‘জয় বাংলা’র স্থান মুছে ফেলা যাবে না। জাতীয় স্লোগান মানে সরকারি অনুষ্ঠানে এ স্লোগান দেওয়া হবে না। কিন্তু বেসরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে অসুবিধা কোথায়? আর এ স্লোগান তো প্রত্যেক বাঙালি বুকে স্থান নিয়ে বসে আছে। তাদের হৃদয়ে যার অধিষ্ঠান, তাকে আদালত কিভাবে উচ্ছেদ করবে?
‘জয় বাংলা’ স্লোগান সবাই শুনেছেন। কিন্তু এ স্লোগান কখন কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল সেটা হয় তো সবাই জানেন না। আমি এখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ইতিহাস তুলে ধরছি ু
পাকিস্তানের কুখ্যাত একনায়ক আইয়ুব খানের পতনের পর ১৯৭০ এর ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় । প্রথম দিনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মধুর কেন্টিনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বদলীয় সভা মিছিলে সব সময়ই শ্লোগানের প্রতিযোগিতা হতো। যেমন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের একাংশের শ্লোগান ছিল ‘আমার বাড়ি তোমার বাড়ি নকশালবাড়ি নকশালবাড়ি’। ‘নকশালবাড়ি শিখিয়েছে লড়াই করে বাঁচতে হবে’। এ রকম নানা ধরনের শ্লোগান দেয়া হতো। সর্বদলীয় ছাত্রসভায় এসব শ্লোগানের জবাবেই তৈরি হয়েছিল “আমার বাড়ি তোমার বাড়ি বাংলার প্রতি বাড়ি” ‘শেখ মুজিব শিখিয়েছে লড়াই করে বাঁচতে হবে’। ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ ইত্যাদি শ্লোগান।
১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মধুর কেন্টিনে সর্বদলীয় ছাত্র সভা ডাকা হলো । সভা শুরু হলে তৎকালীন মেধাবী ছাত্রনেতা (ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খানের গ্রুপের সদস্য) আফতাব আহমদ (ড. আফতাব আহমদুপরবর্তীকালে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন তিনি) প্রথম ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি দেন। চিশতি হেলালুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন) একাই তাঁর প্রত্যুত্তর দেন। পরে এ স্লোগান ছাত্রলীগের কর্মীরা ধরতে শুরু করে। তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন আরেকজনকে সামরিক কায়দায় এ স্লোগান দিয়ে সম্বোধন করত এবং স্লোগান উচ্চারণ করে করমর্দন করতো। এ শ্লোগানই সময়ের প্রেক্ষাপটে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ স্লোগান প্রথম উচ্চারণ করেন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায়। তিনি ‘জয় বেলুচিস্তান’, ‘জয় সিন্ধু’ এর সাথে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান উচ্চারণ করেন । আর ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা এর বিপরীতে বের করে ‘জয় সর্বহারা’ শ্লোগানটি যা কোনোদিন জাতীয় শ্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি ছিল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমদ ও আবদুর রাজ্জাক কর্তৃক গঠিত গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’র সৃষ্ট। ‘নিউক্লিয়াসে’রই সদস্য তৎকালীন মেধাবী ছাত্রনেতা আ ফ ম মাহবুবুল হককে এ স্লোগানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি ‘নিউক্লিয়াসে’র সদস্যদের নিয়ে এই কাজটি করতেন। অল্প সময়ের মধ্যে এই স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্লোগানটি হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের স্লোগান, মুক্তির স্লোগান, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। উল্লেখ্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ‘নিউক্লিয়াস’ সদস্য আবদুল্লাহ সানির রুমে বসে অনেক আলাপ আলোচনার পর জাতীয় স্লোগান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়-‘জয় বাংলা’ স্লোগান। রণাঙ্গনে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার বুকে পোতা থাকত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। বাংকারে এবং শত্রু হননের অগ্রাভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এ স্লোগানই প্রেরণা যোগাত।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান উৎপত্তি এই ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারলাম এটি কোন দলের স্লোগান নয়, আওয়ামী লীগের স্লোগান তো নয়ই। শেখ হাসিনার সরকার ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে বলেই তাকে জাতীয় স্লোগান থেকে বাদ দিতে হবে এটা কোন যুক্তির কথা হতে পারে না। শেখ হাসিনার সব কিছু খারাপ, এও তো সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

ওসিকে ‘মারধর’: চট্টগ্রামের ৩ আনসার, এক পুলিশ কর্মকর্তাকে সরানো হল

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর তিন আনসার ও এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার নগরীর ফয়’স লেক এলাকায় ৩১ আনসার

বিস্তারিত »

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক সম্ভাবনাময় প্রার্থী

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি পদে অধ্যাপক ড. মো. আহসানুল হক সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তিনি অন্যান্যদের চেয়ে অধিকতর যোগ্য বলে বিভিন্নসূত্রে জানা যায়। তিনি বর্তমানে

বিস্তারিত »

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা আসছে

শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত প্রক্রিয়ার নানা ঘটনাবলি নিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র

বিস্তারিত »

স্বামীর ছোড়া অকটেনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ নাজমা আর নেই

চন্দনাইশে স্বামীর ছোড়া অকটেনের আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ নাজমা মারা গেছে। শুক্রবার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমা মারা যায়

বিস্তারিত »

দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করতে স্বাধীনতা অর্জন করিনি: রিজভী রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা পিন্ডির কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছি দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য নয় বলে মন্তব্য

বিস্তারিত »

জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের রায় স্থগিত

২০২০ সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট। ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত

বিস্তারিত »

সাংবাদিক মাহবুব উল আলমের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, বাম রাজনীতির নীরব সমর্থক ও সংগঠক, মাইজভাণ্ডারী দর্শন ও মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং সাহিত্যিক মোহাম্মদ মাহবুব উল আলম হাটহাজারী

বিস্তারিত »

আতাউর রহমান খান কায়সার

আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আনোয়ারার জমিদার এয়ার আলী খান বঙ্গীয় আইন পরিষদ

বিস্তারিত »