মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫, ১৭ আষাঢ়, ১৪৩২, ৫ মহর্‌রম, ১৪৪৭

জয় বাংলা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত গতকাল এক রায়ে বলেছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান নয়। ইতিপূর্বে হাইকোর্ট ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান বলে রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেই রায়কে বাতিল করে উক্ত রায় প্রদান করে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান থেকেই বাংলাদেশের জন্ম। আদালত তার জন্মদাতাকেই অস্বীকার করল। কিন্তু জাতীয় স্লোগান না হলেও মানুষের হৃদয় থেকে তো ‘জয় বাংলা’র স্থান মুছে ফেলা যাবে না। জাতীয় স্লোগান মানে সরকারি অনুষ্ঠানে এ স্লোগান দেওয়া হবে না। কিন্তু বেসরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে অসুবিধা কোথায়? আর এ স্লোগান তো প্রত্যেক বাঙালি বুকে স্থান নিয়ে বসে আছে। তাদের হৃদয়ে যার অধিষ্ঠান, তাকে আদালত কিভাবে উচ্ছেদ করবে?
‘জয় বাংলা’ স্লোগান সবাই শুনেছেন। কিন্তু এ স্লোগান কখন কিভাবে উদ্ভব হয়েছিল এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল সেটা হয় তো সবাই জানেন না। আমি এখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ইতিহাস তুলে ধরছি ু
পাকিস্তানের কুখ্যাত একনায়ক আইয়ুব খানের পতনের পর ১৯৭০ এর ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় । প্রথম দিনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মধুর কেন্টিনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বদলীয় সভা মিছিলে সব সময়ই শ্লোগানের প্রতিযোগিতা হতো। যেমন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের একাংশের শ্লোগান ছিল ‘আমার বাড়ি তোমার বাড়ি নকশালবাড়ি নকশালবাড়ি’। ‘নকশালবাড়ি শিখিয়েছে লড়াই করে বাঁচতে হবে’। এ রকম নানা ধরনের শ্লোগান দেয়া হতো। সর্বদলীয় ছাত্রসভায় এসব শ্লোগানের জবাবেই তৈরি হয়েছিল “আমার বাড়ি তোমার বাড়ি বাংলার প্রতি বাড়ি” ‘শেখ মুজিব শিখিয়েছে লড়াই করে বাঁচতে হবে’। ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ ইত্যাদি শ্লোগান।
১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মধুর কেন্টিনে সর্বদলীয় ছাত্র সভা ডাকা হলো । সভা শুরু হলে তৎকালীন মেধাবী ছাত্রনেতা (ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খানের গ্রুপের সদস্য) আফতাব আহমদ (ড. আফতাব আহমদুপরবর্তীকালে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন তিনি) প্রথম ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি দেন। চিশতি হেলালুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন) একাই তাঁর প্রত্যুত্তর দেন। পরে এ স্লোগান ছাত্রলীগের কর্মীরা ধরতে শুরু করে। তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন আরেকজনকে সামরিক কায়দায় এ স্লোগান দিয়ে সম্বোধন করত এবং স্লোগান উচ্চারণ করে করমর্দন করতো। এ শ্লোগানই সময়ের প্রেক্ষাপটে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ স্লোগান প্রথম উচ্চারণ করেন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায়। তিনি ‘জয় বেলুচিস্তান’, ‘জয় সিন্ধু’ এর সাথে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান উচ্চারণ করেন । আর ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা এর বিপরীতে বের করে ‘জয় সর্বহারা’ শ্লোগানটি যা কোনোদিন জাতীয় শ্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি ছিল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমদ ও আবদুর রাজ্জাক কর্তৃক গঠিত গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’র সৃষ্ট। ‘নিউক্লিয়াসে’রই সদস্য তৎকালীন মেধাবী ছাত্রনেতা আ ফ ম মাহবুবুল হককে এ স্লোগানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি ‘নিউক্লিয়াসে’র সদস্যদের নিয়ে এই কাজটি করতেন। অল্প সময়ের মধ্যে এই স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। স্লোগানটি হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের স্লোগান, মুক্তির স্লোগান, মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। উল্লেখ্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ‘নিউক্লিয়াস’ সদস্য আবদুল্লাহ সানির রুমে বসে অনেক আলাপ আলোচনার পর জাতীয় স্লোগান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়-‘জয় বাংলা’ স্লোগান। রণাঙ্গনে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার বুকে পোতা থাকত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। বাংকারে এবং শত্রু হননের অগ্রাভিযানে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে এ স্লোগানই প্রেরণা যোগাত।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান উৎপত্তি এই ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারলাম এটি কোন দলের স্লোগান নয়, আওয়ামী লীগের স্লোগান তো নয়ই। শেখ হাসিনার সরকার ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে বলেই তাকে জাতীয় স্লোগান থেকে বাদ দিতে হবে এটা কোন যুক্তির কথা হতে পারে না। শেখ হাসিনার সব কিছু খারাপ, এও তো সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

মুক্তিযুদ্ধ যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁরা চলে গেছেন, হারিছই আছেন একা

চট্টগ্রাম শহরে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ করেছিলেন, তাঁরা চলে যাচ্ছেন। সাতজন ছিলেন তাঁরা, পাঁচজন ইতিমধ্যে তাঁদের প্রভুর ডাক পেয়ে এ গ্রহ ছেড়ে চলে গেছেন প্রভুর সন্নিধানে।

বিস্তারিত »

আওয়ামী লীগ, বাঙালি জাতিসত্তার নির্মাণ ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাথা

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৩ বছরের অবিরাম সংগ্রাম এবং অবশেষে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেই

বিস্তারিত »

সুলতান কুসুমপুরী ও তাঁর কোম্পানি কমান্ডার হাবিলদার আবু’র মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ১৩জন এমপি সম্মুখ যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা সেনা কর্মকর্তাদের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধে তাদের গ্রæপকে কমান্ড করেন। এই ১৩ জন এমপি

বিস্তারিত »
প্রদ্যোৎ কুমার পাল

৭১-এর দুরন্ত গেরিলা প্রদ্যোৎ কুমার পাল

প্রদ্যোৎ কুমার একজন অসম সাহসী বীরের নাম। মুক্তিযুদ্ধে এই দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা দক্ষিণ চট্টগ্রামের রণাঙ্গণ মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁর অসীম সাহস ও পরাক্রম দিয়ে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চারটি

বিস্তারিত »

দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের ক্যান্টনমেন্ট বরকল, শাহজাহান ইসলামাবাদী জিওসি

মুক্তিযুদ্ধের এক কিংবদন্তী শাহজাহান ইসলামাবাদী। দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের তিনিই ছিলেন প্রধান নায়ক। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তাঁকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল। তাঁর

বিস্তারিত »

স্বাধীনতা ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অগ্রসৈনিক মিরসরাইর অহিদুল হক

অহিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে যে অসাধারণ বীরত্ব, অসীম সাহস ও শৌর্যবীর্যের পরিচয় দেন, তা মিরসরাই থানার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জাতীয় মুক্তির

বিস্তারিত »
বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি শিল্পপতি মিজানুর রহমান ।

দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমান পুরুষোত্তম

বাংলাদেশে পিএইচপির উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত প্রোটন ব্রান্ডের গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধনের পর মোনাজাত করছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপির

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে দোহাজারীর বীর চতুষ্টয় : খসরু-জাফর-রতন-কামাল

চট্টগ্রামের সভ্যতা মানুষ ও নদীর যুগ্ম-সৃষ্টি। ঐতিহাসিক কাল থেকে চট্টগ্রামে তিনটি বড় নদী পরিদৃষ্ট হয়। সর্ববৃহৎ কর্ণফুলী, অনতিবৃহৎ হালদা ও শঙ্খ নদী। কর্ণফুলী সদর ও

বিস্তারিত »

ষাটের_দশকের_ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সিরাজুল আলম

কাজী সিরাজুল আলম ষাটের দশকের শেষদিকে চট্টগ্রামের একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা ছিলেন। ৬৯-৭০-এ তিনি ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তাঁর বাড়ি সীতাকুÐে; তিনি সীতাকুÐে ৬৯-এর

বিস্তারিত »