চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন তাণ্ডবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এসময় সুজন বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় চৌধুরীহাট এলাকায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আনুমানিক ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে দ্রুত শুশ্রূষা কামনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষাথী সুজন।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর রাত অবধি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সেদিন রাতে উপাচার্যের বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুল এবং পুলিশ বক্সে ভাংচুরের পর অগ্নিসংযোগ করে এসব সুযোগ সন্ধানীরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সেদিনের ঘটনায় অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের ৫০টিরও অধিক বাস ও মিনিবাস ভাংচুর করা হয়েছে, অথচ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার সাথে বাস ভাংচুরের কোন সম্পর্ক নেই।
উপরন্তু এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্রের সম্পদহানি করার অধিকার কারো নেই। শিক্ষার্থীদের কোন যৌক্তিক দাবি থাকলে তা প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করতে পারতো কিন্তু তা না করে রাষ্ট্রীয় অমূল্য সম্পদ নষ্ট করে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ বিনষ্ট করতে চায় তারা কারা সে প্রশ্নও রাখেন সুজন।
তিনি বলেন, আমরা এও জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এ শাটল ট্রেন। আসন সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় শাটল ট্রেনে চুরি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, পাথর নিক্ষেপসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। আর প্রতি বছর বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়েনি শাটল ট্রেনের শিডিউল। যে কারণে ট্রেনের ছাদে চড়তে গিয়ে শিক্ষার্থী আহত এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন ভাংচুর।
আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে ভাংচুর চালিয়েছে একটি পক্ষ। যারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অশান্তি, অরাজকতা এবং দখল প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাই এ ভাংচুরের সাথে জড়িত বলে আমরা মনে করি। না হয় কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই পুলিশ বক্সে ভাংচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হবে কেন?
সাবেক এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি, ছাত্র রাজনীতি করেছি, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের নামে কোন প্রকার ধ্বংসাত্নক কর্মকাণ্ড চালাইনি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। সরকার সারাদেশে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু তারপরও কারা পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ বিনষ্টে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে একাডেমিক শাস্তির পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আসা যাওয়া নিশ্চিতে শাটল ট্রেনের বগি ও বাস বৃদ্ধি করা এবং প্রয়োজনে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান খোরশেদ আলম সুজন।