আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রাপ্ত দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সময় মনোনয়ন লাভে বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়ে ভাল করেছেন কি খারাপ করেছেন সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত ভোটের মাঠে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটে কোন বিরোধী দল নয়, দলের বিরোধী দলই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নির্বাচনের বিরোধিতা করে নির্বাচনে আসেনি। জাতীয় পার্টি এবং আর যে কয়েকটি খুচরা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাদেরকে বিরোধী দল না বলে গৃহপালিত বিরোধীদল বলাই সঙ্গত। সুতরাং যখন মনো হচ্ছিল এই নির্বাচন বিনা চ্যালেঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য তার দলের অসন্তুষ্ট নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য সুযোগ দিয়ে বিরোধী দলের অভাব পূরণ করে দিয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের ১৬ টি আসনের ১১টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা এবং জনসমর্থন এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে তাতে তুমুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বয়োবৃদ্ধ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বড় আশা করে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলকে তার আসনে নির্বাচিত করিয়ে এনে তাকে রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই আশায় বাধ সেধেছেন তারই এলাকার প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা ও মিরসরাইয়ের প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। রুহেলের দাদা এমপি ছিলেন, পিতা সাতবারের এমপি, তারপরও মিরসরাইতে রুহেলই শেষ হাসি হাসবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে একটি উপভোগ্য লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি; বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ( বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলার পদত্যাগী চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব সনির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনে দ্বীপবন্ধু মোস্তাফিজুর রহমানের পুত্র বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তার পিতার ইমেজ এবং নিজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে মনে হচ্ছিল তিনিই হয়তো আবার সন্দ্বীপের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে যাচ্ছেন। কিন্তু ডা. জামাল উদ্দিন তার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে।
চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে সাবেক সাংসদ এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের পুত্র এসএম আল মামুন উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে গেছেন এবং দলীয় মনোনয়নও আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। মামুনের অবস্থা প্রথমদিকে ভাল থাকলেও পরে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লায়ন্স আলহাজ মোহাম্মদ ইমরান নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ; জাতীয় পাটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে তাকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রথমে দলের উত্তর জেলা শাখার সভাপতি এমএ সালামকে মনোনয়ন দিয়েছিল। জাপার সঙ্গে সমঝোতায় আনিসের নাম এসে যাওয়ায় সালাম তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন। কোন ডামি প্রার্থী থাকলেও এ আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিজয় নিশ্চিত এটা চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আবার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বিজয়ী হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই, তার বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চট্টগ্রাম-৮ চান্দগাঁও-বোয়ালখালী- পাঁচলাইশ (আংশিক) আসনটিও জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতার অংশ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ আসনে প্রথমে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বর্তমান এমপি নোমান আল মাহমুদকে। তিনি দলের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন সোলায়মান আলম শেঠ। এ আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। অন্য দুজন প্রার্থী হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুচ ছালাম এবং আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষান। এ আসনের তিন প্রার্থীর তিন সুবিধা- আবদুচ ছালাম আগে একবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন; সেবার জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদলকে ছেড়ে দিতে হওয়ায় তিনি আর নির্বাচন করতে পারেননি। তবে তার সেই পরিচিতিটা রয়েছে, তাছাড়া সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবেও তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সোলায়মান আলম শেঠকে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিলেও অন্য দুই প্রার্থীর তুলনায় তার পরিচিতি কম। তবে তিনি যদি বিএনপি সমর্থকদের নিরব ভোট টানতে পারেন তাহলে হয়তো তিনি কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। সোলায়মান শহরের অভিজাত শেঠ পরিবারের সন্তান, তার পিতা বাচ্চু নবাব শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং মহল্লা সর্দারদের নেতা ছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কিষান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ মহলে সুপরিচিত। এটা তার এক সুবিধা, দ্বিতীয় হচ্ছে হিন্দু প্রার্থী হিসেবে তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেতে পারেন।
চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালী আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের উপর কোন চাপ নেই। তিনি গতবারেরও এমপি, তাছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী। তবে তার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রামের তিনবারের মেয়র চট্টলবীর খ্যাত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান। তার সঙ্গে কোন পরিচিত বা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি ভোটের আগেই জিতে বসে আছেন। রোববারের ভোট তার বিজয়ের ঘোষণার জন্য একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে তুমুল লড়াই হতে পারে মঞ্জুর আলম ও মহিউদ্দিন বাচ্চুর মধ্যে। বাচ্চু আওয়ামী লীগের প্রার্থী, মঞ্জু স্বতন্ত্র প্রার্থী, আরো একজন স্বতন্ত্র রয়েছেন তিনি আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ। মঞ্জু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ছিলেন, আওয়ামী লীগেরও নেতা ছিলেন। তবে কিছুদিনের জন্য বিএনপি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। মঞ্জু বিত্তশালী লোক, তার অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে, সেখানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে তার সম্পর্কে বিশেষভাবে যেটা বলবার কথা সেটা হলো ভাল মানুষ হিসেবে তার একটি স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। তিনি একজন দানশীল মানুষ। শহরে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। মহিউদ্দিন বাচ্চু বর্তমানেও এ আসনের এমপি। ডা. আফছারুল আমিনের মৃত্যুর পর তার শূণ্য আসনের জন্য অন্য প্রার্থীর মধ্যে তাকেই বেছে নিয়েছিল দল। আওয়ামী লীগ এবং নৌকার জনপ্রিয়তা তার প্লাস পয়েন্ট। বাচ্চুও একজন ভাল ব্যবসায়ী, নিরবে দান করেন। এ আসনের অপর প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ এবং দক্ষ রাজনীতিবিদ। রাজনীতিতে তার দীর্ঘদিনের পদচারণা, ত্যাগ এবং নিষ্ঠার কারণে আওয়ামী লীগ কর্মী এবং সমর্থকরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ভোট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাছাড়া তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে গত তিন বারের এমপি এম এ লতিফকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও চসিক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। গোটা নির্বাচনী এলাকায় লতিফের ব্যাপক যোগাযোগ আছে এবং তিনি জনগণের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ-আয়োজন ও চেষ্টা-তদবির চালিয়েছেন। তিনি আগ্রাবাদ ও ইপিজেড এলাকার কর্মজীবী-শ্রমজীবী মানুষের জন্য বহুদিন থেকে স্বপ্লমূল্যে খাবার সরবরাহ করে আসছেন। নারীদের সংগঠিত করার জন্য তিনি নারীশক্তি নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। যে সংগঠনটি আগ্রাবাদ-গোসাইলডাঙ্গা, ইপিজেড এলাকার নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন।
জিয়াউল হক সুমন একটি এলাকার কাউন্সিলর হলেও পুরো আসনজুড়ে তিনি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। একজন দক্ষ সংগঠক ও ভাল মানুষ হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সুমন তার সমস্ত শক্তি, সামথ্য ও সম্পদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এবং অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে তিনবার এমপি হয়ে শামসুল হক চৌধুরী রেকর্ড সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন। চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে পটিয়া বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি জনপদ। ১৯১৯ সাল থেকে এদেশে নির্বাচন হয়ে আসছে। কিন্তু অতীতে কোন এমপি পটিয়া আসন থেকে তিনবারের জন্য নির্বাচিত হতে পারেননি। শামসুল হক চৌধুরী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। এসব কারণে তিনি আশা করেছেন এবারও তাকে দল মূল্যায়ন করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে শামসু ক্ষুব্ধ হন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মোতাহেরুল ইসলাম মনোনয়ন পাওয়ায় পটিয়ার আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ১৯৭৯ সালের পর পটিয়া সদর থেকে আর কোন রাজনৈতিক নেতা এমপি হতে পারেননি। ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পর ১৯৭৯ সালে নজরুল ইসলাম শেষ বার পটিয়া সদর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ জন্য পটিয়া সদরের রাজনৈতিক কর্মী এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বঞ্চিতের চাপা ক্ষোভ ও বেদনা ছিল। মোতাহেরের মনোনয়নে সে বেদনা উপশমের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মোতাহের পটিয়ার ঐতিহ্যবাহী সাব-রেজিস্ট্রার বাড়ির সন্তান। এই বাড়ির মোশাররফ আলী সাব-রেজিস্ট্রার, সিদ্দীক আহমেদ সাব-রেজিস্ট্রার আজও কিবদন্তী হিসেবে মানুষের মনে বেঁচে আছেন। মোতাহেরের ব্যক্তিগত যোগ্যতাও অনেক। তিনি স্কুল থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে ৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলা বাতিলের আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের পরিচয় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী ও আদর্শবান নেতা; বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তার অবিচল আস্থা কখনো ক্ষুণ্ণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় তাকে আর্মি পাহাড়তলী হাজী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আশির দশকে পটিয়ায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে তিনি নেতৃত্ব দেন। নির্বাচনে মোতাহের ও শামসুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকের কারণে মোতাহেরই বাজিমাত করতে পারেন। তবে নৌকা-স্বতন্ত্র যে জোর লড়াই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী তিন বার এমপি হয়েছেন। কিন্তু কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখিন হননি। এবারই প্রথম তাকে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এলডিপি নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার। দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে বিভিন্ন জরিপে আভাস দেয়া হয়েছে। নজরুল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আর আবদুল জব্বার স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ আসনেও নৌকা-স্বতন্ত্র সরাসরি লড়াই হবে।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনেও নৌকা-স্বতন্ত্র তুমুল লড়াই হবে। এখানে নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বনফুল ও কিষোয়ান গ্রুপের মালিক শিল্পপতি এমএ মোতালেব। তিনি আওয়ামী লীগেরই নেতা, তবে দলের কোন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার পর মোতালেব দলের অফিশিয়াল প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আশ্বাস দিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলেরই নেতা-কর্মী। তাদেরকে কোন রকম বাধা দেওয়া যাবে না। মোতালেব সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি গত তিনবারেরও এমপি। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মুজিবুর রহমান সিআইপি ও আবদুল্লাহ কবির লিটনও আওয়ামী লীগ নেতা। মুজিব দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং লিটন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ভাগ্নে। মুজিবুর রহমান সিআইপি একজন শিল্পপতি, তিনি স্মাট গ্রুপের এমডি। অন্যদিকে তিনি দৈনিক পূর্বদেশ’র সম্পাদক।