সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক, ১৪৩২, ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

ডা. শাহ আলম বীর উত্তম : বাঙালির গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের দুঃসাহসী বীর

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য চট্টগ্রাম থেকে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম উপাধি পেয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন— চকরিয়া নিবাসী সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জিয়াউদ্দিন আহমদ বীর উত্তম, অপারেশন জ্যাকপটের কমান্ডার নোয়াখালী নিবাসী ডা. শাহ আলম বীর উত্তম এবং মিরসরাই নিবাসী মোজাহার উল্লাহ বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ বীরত্ব সূচক উপাধি হচ্ছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’। জীবিত কোন মুক্তিযোদ্ধা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি পাননি। কারণ প্রটোকল সমস্যা। আমি একজন সেনা অফিসারে মুখে শুনেছি প্রেডিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টারের চেয়েও বীরশ্রেষ্ঠ-এর মর্যাদা বেশি। কোন অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ-এর পদক হাজির করা হলে এবং একই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টার উপস্থিত থাকলে বীরশ্রেষ্ঠ-এর পদক চেয়ারে স্থাপন করতে হবে। তাতে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় কোন জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে বীর শ্রেষ্ঠ উপাধি দেয়া হয়নি। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বীরত্বের জন্য সর্বোচ্চ উপাধি ‘বীর উত্তম’ তারপর বীর বিক্রম এবং সর্বশেষ বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।
শাহ আলম বীর উত্তমের মধ্যেও উত্তম ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যে দুনিয়া কাঁপানো অপারেশন জ্যাকপটের জন্য আমরা গর্ববোধ করে থাকি, শাহ আলম সে অপারেশনের অন্যতম কমান্ডার ছিলেন। সাবমেরিনার এ ডব্লিউ চৌধুরী বীর উত্তম ছিলেন জ্যাকপটের সুপ্রিম কমান্ডার, তাঁর পরেই ছিলো শাহ আলমের স্থান। ১৫ আগস্ট যে অপারেশন হয়, তার সাফল্য নির্ভলশীল ছিলো নির্ভুল রেকির ওপর। ১৩, ১৪ আগস্ট রেকি করার কথা ছিলো। কিন্তু রেকি করার জন্য তেমন যোগ্য কাউকে না পেয়ে শাহ আলম নিজেই রেকি করতে বন্দরে চলে আসেন। জীবনের পরোয়া না করে তিনি জেটিতে ঢুকে পড়েছিলেন এবং নির্ভুল রেকি করে অপারেশন সফল করেছিলেন। রেকিতে ভুল হলে অপারেশন ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। সেজন্য অপারেশন জ্যাকপটে শাহ আলমের অবদান অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। তাঁকে সাহায্য করেছিলেন চট্টগ্রামের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যমণি এবং তৎকালীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. কামাল এ এ খান এবং ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসির মামুনের পিতা বন্দরের তৎকালীন সচিব মেসবাহউদ্দিন খান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম কমান্ডার মো. শাহ আলম বীর উত্তমের ১৯৪৬ সালের ১৩ নভেম্বর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার করমুল্লাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মো. আলী আহম্মদ চৌধুরী এবং মাতা জমিলা খাতুন।
শাহ আলমের বাড়ি নোয়াখালী হলেও তাঁর শৈশব ও কৈশোর চন্দ্রঘোনায় পিতার কর্মস্থলে অতিবাহিত হয়। তাঁর পিতা কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর দূরন্ত যৌবন, মুক্তিযুদ্ধ, ডাক্তার হওয়া-ডাক্তারি করা সমস্তই চট্টগ্রামকে ঘিরেই অবর্তিত হয়। তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কেপিএম হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করে ১৯৬৯-১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
মেডিক্যাল প্রথম বর্ষে শাহ আলমের সহপাঠী ছিলেন বর্তমানে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. গোফরানুল হক। প্রফেসর ডা. গোফরান পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হন।
তাদের ক্লাস শুরু হয় ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর। ৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দ মার্চ পর্যন্ত এ দেশের রাজনীতিতে একটা উত্তাল তরঙ্গ বয়ে যায়। সে সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ সংগঠিত ছাত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তখন গোফরানুল হক, শাহ আলম, আশরাফুল ইসলাম, নুর ইসলাম মাহমুদ, সৈয়দ আফজাল হক লাকী, কায়রুল আলম চৌধুরী, গোলাম রহমান, নুরুল ইসলাম, সিনিয়র ছাত্র ডা. মাহফুজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, বেলায়েত হোসেন, মঈনুল ইসলাম মাহমুদ, বোরহান উদ্দিন—এঁরা সবাই ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন।
শাহ আলম ছাত্রলীগের অত্যন্ত সক্রিয় কর্মী ছিলেন। শাহ আলম, ডা. গোফরান এবং আরো তিনজন ছাত্র একসাথে একই রুমে থাকতেন। শাহ আলম বন্ধুদের বিপদ-আপদে সব সময় সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তাঁদের তিন বন্ধু হচ্ছেন- প্রফেসর সৈয়দ আফজল করিম লাকী, প্রফেসর শামসুল হক, ডা. নজরুল ইসলাম।
৭ মার্চের পর থেকে সারা বাংলাদেশের ন্যায় চন্দ্রঘোণার পরিস্থিতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, ছাত্র-জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। রাঙামাটির ডিসি এইচ টি ইমাম (হোসেন তওফিক ইমাম) এবং এডিসি ড. সৈয়দ আবদুস সামাদ, যিনি চন্দ্রঘোণা বা কাপ্তায় বসতেন, জেলা প্রশাসনের এই দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তার অংশগ্রহণ ও পরিচালনায় জেলায় অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপক জনগণ সম্পৃক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং চন্দ্রঘোণা থেকে রামগড় চলে যান। এপ্রিলের প্রথমদিকে আগরতলার কাছাকাছি বগাফা নামক একটি শৈলচূড়ায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এপ্রিলের মাঝামাছি সময়ে বগাফায় প্রশিক্ষণের জন্য রামগড় থেকে ২য় ব্যাচে মুক্তিযোদ্ধা পাঠানোর সময় শাহ আলমও তাঁদের সঙ্গে প্রশিক্ষণের জন্য বগাফা যান। শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই মনসুরুল আমিন বাবলুও ছিলেন। আমিও একই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য রামগড় থেকে বগাফায় যাই। আমার সঙ্গে তখন শাহ আলমের পরিচয় ছিলো না। আমাকে প্রশিক্ষণে পাঠান এস এম ইউসুফ। তিনি এক সময় চট্টগ্রামের শীর্ষ ছাত্র ও যুবনেতা ছিলেন।
শহরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এস এম মাহবুব উল আলম (এফএফ কমান্ডার, ঘাটফরহাদবেগ), রণবিক্রম ত্রিপুরা (অপারেশন ঈগলের উত্তর কলাম কমান্ডার, খাগড়াছড়ি), আবুল কালাম আজাদ (সীতাকুণ্ডের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সীতাকুণ্ড পৌরসভার সাবেক মেয়র, প্রয়াত), ক্যাপ্টেন মনসুরুল আমিন বাবলু (সেনা কর্মকর্তা, শাহ আলমের চাচাতো ভাই) এবং আবুল কাশেম চিশতী (তিব্বত-খ্যাত প্রখ্যাত ব্যবসায়ী রাঙ্গুনিয়ার অছি মিয়া সওদাগরের নাতি বা পতি)-আমরা এই ৭জনকে প্রথমে ১৫দিন বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য রেখে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আরো উন্নত এবং বিশেষ ধরণের ভারি অস্ত্র ও আর্টিলারি প্রশিক্ষণের জন্য আমাদেরকে সিমলার ওম্পি নগরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রেনিং কমান্ডে নিয়ে আরো এক মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ওম্পি নগর থেকে আমাদেরকে ১নং সেক্টরের হরিণা ক্যাম্পে আনা হয়। হরিণা ক্যাম্পে ফিরে আসার পর ১ নং সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান আমাদেরকে একটি আত্মঘাতী মিশনে শুভপুর ব্রিজ ধ্বংসের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম যিনি জিয়ার পরে ১ নং সেক্টরের কমান্ডার হন, তিনিও আমাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম কমান্ডার মো. শাহ আলম বীর উত্তমের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার করমুল্লাপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মো. আলী আহম্মদ চৌধুরী এবং মাতা জমিলা খাতুন।
শাহ আলমের বাড়ি নোয়াখালী হলেও তিনি চন্দ্রঘোনায় পিতার কর্মস্থলে প্রতিপালিত হন। তাঁর পিতা কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে কেপিএম হাইস্কুল থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করে ১৯৬৯-১৯৭০ সেশনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মেডিকেলে ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
এপ্রিলের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ক্যাম্পে যান। সেখানে ছিল ১ নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার এবং ইয়ুথ ক্যাম্প। এই ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ট্রেনিংয়ে পাঠানো হচ্ছিল। এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে শাহ আলম এবং তাঁর চাচাতো ভাই মনসুরুল আমিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য ত্রিপুরার বগাফা নামক স্থানে বিএসএফের একটি ক্যাম্পে যান। সেখানে ১৫ দিন পর প্রশিক্ষণে ভলো করেছেন এমন ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে পরিচালিত অম্পি নগর নামক একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয়। এই ৭জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন ু শাহ আলম, মনসুরুল আমিন, রণ বিক্রম ত্রিপুরা, আবুল কালাম আজাদ, এস এম মাহবুবুল আলম, আবুল কাশেম চিশতী ও নাসিরুদ্দিন চৌধুরী (পরবর্তীকালে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত)। অম্পি নগর থেকে প্রশিক্ষণ শেষে হরিণা ক্যাম্পে ফিরে আসার পর ১ নং সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান তাদেরকে একটি আত্মঘাতী মিশনে শুভপুর ব্রিজ ধ্বংসের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন।
২৩ মে মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানীর নির্দেশে নৌ-কমান্ডো সেক্টর গঠনের পর বিভিন্ন সেক্টর থেকে নৌ কমান্ডো হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য তরুণদের বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। হরিণা ক্যাম্পেও বাছাই করা হয়। বাছাইকৃতদের মাঝে যাঁরা নৌ কমান্ডো হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে শাহ আলম ছিলেন অন্যতম। নির্বাচিত তরুণদের টানা আড়াই মাস কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ঐতিহাসিক পলাশীর ভাগীরথী নদীর তীরে। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে বলা হয়েছিল ‘এটি একটি আত্মঘাতী যুদ্ধ।
আগস্টের প্রথমে ২টি সমুদ্র বন্দর এবং ২টি নদী বন্দর আক্রমণের লক্ষ্যে ৪টি সেক্টরের পরিকল্পনায় সাজানো হয়। প্রথম ব্যাচকে ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের ২টি দল নিয়ে মোট ৪টি স্থানে আক্রমণের জন্য ৪টি দলে ভাগ করা হয়। ঠিক হয় সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬০ জন কমান্ডো চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জাহাজ আক্রমণ করবে। এই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম।
২ আগস্ট দুপুরে পলাশী ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে রওয়ানা দিয়ে রাত ৯টায় ব্যারাকপুর ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে পরদিন সকালে কলকাতার দমদম বিমানঘাঁটি থেকে ড্যাকোটা বিমানে চেপে ৪ আগস্ট ভোরে আগরতলায় এসে নিউক্যাম্পে উঠেন শাহ আলমসহ কমান্ডোরা। ৬-৮ আগস্ট অপারেশনের নানা পরিকল্পনা ও আবহাওয়া বার্তা জানানো হয় কমান্ডোদের।
৮ আগস্ট হরিণায় আসার পরে দলটিকে ৩ ভাগ করে প্রতিটি দলে ১জন করে কমান্ডার করা হয়। এই ৩ কমান্ডারের মধ্যে একজন ছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। অন্য দুই কমান্ডার ছিলেন মোজাহার উল্লাহ ও আবদুর রশিদ।
এরপর সাব্রুম সীমান্ত দিয়ে সারারাত দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ পথ হেঁটে শ্রীনগর ক্যাম্প হয়ে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেন কমান্ডোরা। এরপর কেএমহাট বাজারে এসে গাইড পরিবর্তনের পর নৌকায় চেপে মুহুরি ও ফেনী নদী দিয়ে ৯ আগস্ট দুপুরে মীরসরাইয়ের ইছাখালী গ্রামে এসে ১০ আগস্ট রাতে রওয়ানা দিয়ে ১২ আগস্ট মধ্যরাতে সমিতির হাটে এসে পৌঁছান শাহ আলমসহ নৌ কমান্ডোরা। কিন্তু রাস্তায় পাকিস্তানি চেকপোস্ট থাকায় যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছানো ছিল ভীষণ দুঃসাধ্য। ১৩ আগস্ট সকালের মধ্যেই চট্টগ্রামে পৌঁছাতে হবে তাদের। তখন শাহ আলমসহ নৌ কমান্ডোরা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে তরকারি বিক্রেতার ছদ্মবেশে দারোগার হাট থেকে বাসের ছাদে চেপে চট্টগ্রামে চলে আসেন।
১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় দুটি গ্রুপের কমান্ডোরা অলংকারের মতিন টেইলার্সে পৌঁছে সেখান থেকে আগ্রাবাদের মমতাজ মহলে পৌঁছান। নৌ কমান্ডোদের থাকার ব্যবস্থা হয় নাসিরাবাদের ও আর নিজাম রোড, সিডিএ রোডের পাশে কাকলী বাড়ি (রুবী প্লাইউড ফ্যাক্টরির ম্যানেজার এনায়েত মওলার বাসভবন, বর্তমানে এখানে ওয়াইএমসিএ’র বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে), মৌলভীপাড়া, সবুজবাগ, পানওয়ালাপাড়া, কমান্ডো খোরশেদের বাড়ি, চকবাজারে কবির সওদাগরের বাড়ি, পূর্ব নাসিরাবাদের একটি বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে। সবুজবাগের হাজির হোটেলটি ছিল কমান্ডোদের সম্মিলনের কেন্দ্র। কমান্ডোরা একে অপরকে চেনার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করতেন।
এদিন চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাস্টের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. কামাল এ খানের কাছ থেকে বন্দরের সচিব মিসবাহউদ্দিন খানের (ঐতিহাসিক ড. মুনতাসীর মামুনের পিতা) ঠিকানা আর ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেন মোহাম্মদ শাহ আলম। এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করে ডা. কামাল এ খানের পরিচয় গোপন করে বলেন, ‘এরশাদের বাবা আমাকে জরুরী কাজে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।’ মিসবাহউদ্দিন খান শাহ আলমকে সেদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আগ্রাবাদের জ্যাকস কনফেকশনারীর (আগ্রাবাদ বাদামতলীর মোড়ে, বেকারিটি এখন আর নেই) সামনে অপেক্ষা করতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি তাঁর গাড়ি নাম্বারও বলে দেন। যখন তাদের দেখা হয় মিসবাহউদ্দিন খান শাহ আলমকে গাড়িতে উঠিয়ে অফিসার্স কলোনির সরকারী বাসভবনে নিয়ে যান। এরপর শাহ আলম মিসবাহউদ্দিন খানকে তার আগমনের কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলে ২/৩ দিনের জন্য থাকার আশ্রয় চান। সে সময় বাসাতে বহিরাগত ও অতিথি কাউকে রাখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হতো। মিসবাহউদ্দিন খান তখন পোস্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আইএস মালিকের কাছ থেকে থাকার অনুমতি নেন।
পরদিন সকাল ৯টায় শাহ আলম মিসবাহউদ্দিন খানের বাড়িতে ১ থেকে ১২ নম্বর জেটি পর্যন্ত রেকি করে ৪ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। এসময়ে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে শত্রুর অবস্থান, বয়ার অবস্থান, কয়টি জাহাজ থাকবে, পাকিস্তানি সেনাদের গতিবিধি, কর্ণফুলীর টাইটেল চার্ট সংগ্রহ করেন। এরপর নিউমুরিং গেট দিয়ে ঢুকে নেভাল বেসের সামনে দিয়ে পতেঙ্গা বিচ পর্যন্ত ঘুরে আসেন। দ্বিতীয় দিন শাহ আলম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রেকি করতে চাইলে পাকিস্তানি বাহিনীর সন্দেহ এড়াতে মিসবাহউদ্দিন খান তাকে বিরত রাখেন।
নৌ কমান্ডোরা কাকলী অবস্থানকালে ১৩ আগস্ট রাতেই রেডিওতে বেজে উঠে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান।’ এই সতর্কতা সংকেত কেবল দলনেতা বা সমন্বয়কেরাই জানতেন। এই গান শোনার পর দলনেতা সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেন যেন যেভাবেই হোক ১৪ আগস্ট শহর অতিক্রম করে কর্ণফুলী পাড়ি দেওয়া যায়। তরকারির টুকরি, বাজারের ব্যাগ, মাছের ডালাসহ নানান কিছুতে করে অস্ত্রগুলো আনোয়ারার লক্ষ্যার চরে পৌছানো হয়। এদিন দুপুরে শাহ আলম গ্রুপ ও মোজাহার উল্লাহ’র গ্রুপ পৌঁছান চরলক্ষ্যা খামারবাড়ি। দ্বিতীয় গানটি বাজানোর কথা থাকলেও বাজানো হয়নি। ১৫ আগস্ট সকালে রেডিও আকাশবাণীতে বেজে উঠে দ্বিতীয় গান ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি।’
শেষ মুহূর্তে ৩ জন কমান্ডো অপারেশনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় কমান্ডোর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭ জনে। প্রতি গ্রুপে তিনজন করে মোট ১২টি গ্রুপ করে কমান্ডোরা ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই এসে পৌঁছান কর্ণফুলী নদীর তীরে। নির্দিষ্ট তিনজনের গ্রুপ পায়ে ফিনস ও গামছা দিয়ে বুকে মাইন বেঁধে কোমরে ড্যাগার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীর জলে। এসময়ে পাহারায় থাকা শাহ আলম, মোজহার উল্লাহ, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী কমান্ডোদের বিদায় জানান। নদীতে তখন পাকিস্তানি জাহাজের তীব্র আলো। নিস্তব্ধ চারপাশের মধ্যেই তিনজনের প্রতিটি দল সাঁতার কেটে নির্দিষ্ট টার্গেটের দিকে এগিয়ে মাইন লাগিয়ে, রাবার ক্যাপ খুলে, সেফটি পিন লাগিয়ে পুনরায় সাঁতরে নির্দিষ্ট অবস্থানে ফিরে আসেন। কমান্ডোরা নদীতে থাকা অবস্থাতেই ফাটতে শুরু করে একে একে মাইনগুলো। পাকিস্তানি বাহিনীর জাহাজ ও বাণিজ্যিক জাহাজগুলো আক্রান্ত হয়েছে বুঝতে পেরেই প্রচণ্ড শব্দে সাইরেন বাজায়।
এসময়েই পাকিস্তানি বাহিনী নদীর দুইপাশে গানবোট থেকেই শুরু করে গুলিবর্ষণ। বাণিজ্যিক জাহাজ থেকেও এসময় এসওএস বার্তা পাঠানো শুরু হয়। রাত দেড়টা দিকে দুটোর মধ্যে মাইনগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। সেদিন তাদের অপারেশনে প্রায় ১০টি টার্গেট এমভি আল আব্বাস, এমভি হরমুজ, মৎস্য বন্দরে নোঙ্গরকৃত বার্জ ওরিয়েন্ট, নৌ বাহিনীর দুটি গানবোট এবং ছোট কয়েকটি বার্জ সম্পূর্ণ ডুবে যায়।
অপারশন জ্যাকপট এতোটাই সাফল্যের মুখ দেখেছিলো যে এই অপারেশনের খবর বিশ্বখ্যাত সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছিলো। সাড়া ফেলেছিলো সারা পৃথিবীতে।
অপারেশন জ্যাকপটের পর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতিসংঘের কাছে জাহাজ ডোবানো বন্ধের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অন্যান্য দেশের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘কোন দেশ যেন বাংলাদেশের জলসীমায় তাদের জাহাজ না পাঠায়। নয়তো আমাদের সেনারা তা ধ্বংস করবে।’ এরপরে বিদেশী কোন পণ্যবাহী জাহাজ সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো।
১৯৭১ সালের মধ্য আগস্টে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা নির্ধারিত তারিখে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ মাইনের সাহায্যে ডুবিয়ে দেবেন এমন পরিকল্পনা করেন। এ জন্য অপারেশনের আগে দিনের বেলায় বন্দর ও আশপাশের এলাকা সরেজমিন রেকি (পর্যবেক্ষণ) করা প্রয়োজন। রেকিতে ভুল হলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। নৌ-কমান্ডোদের একটি দলের দলনেতা মো. শাহ আলম সিদ্ধান্ত নিলেন, এ দায়িত্ব তিনি নিজেই পালন করবেন। দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করে তিনি গোটা অপারেশন সফল করেন।
কথা ছিল, ১৩ ও ১৪ আগস্ট আকাশবাণী বেতারকেন্দ্র থেকে গানের মাধ্যমে দুটি ঘোষণা দেওয়া হবে। ঘোষণা দুটি শোনার পরই কমান্ডোরা অপারেশন করবেন। ঘোষণা দুটির প্রথমটি হলো পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া একটি গান, ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান।’ এ গান শোনার সঙ্গে কমান্ডোরা অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকবেন। দ্বিতীয় ঘোষণা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গান, ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি।’ এ গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে কমান্ডোরা প্রস্তুতি শেষ করে ওই দিন মধ্যরাতে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক অপারেশন করবেন। এ সংকেত শুধু সমন্বয়ক ও দলনেতাই জানতেন, বাকিরা জানতেন না।নৌ-কমান্ডোরা আগরতলা হয়ে ৮ আগস্ট ১ নম্বর সেক্টরের হরিণা ক্যাম্পে পৌঁছান। সেদিন রাতেই তারা বাংলাদেশে ঢোকেন। নৌকা যোগে ও হেঁটে ১৩ আগস্ট তারা চট্টগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছান। পরে শহরের ভেতরে বিভিন্ন নিরাপদ বাড়িতে আশ্রয় নেন। হরিণা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার পথ ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। চট্টগ্রাম শহরের সবুজবাগ হোটেলটি ছিল নৌ-কমান্ডোদের সম্মিলনকেন্দ্র। অপারেশনের আগে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান, তাদের গতিবিধি, বন্দরে কয়টি জাহাজ থাকবে, বয়রাগুলোর অবস্থান ইত্যাদি জানা এবং কর্ণফুলীর টাইটাল চার্ট সংগ্রহ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ কাজ করা ছিল তখন অত্যন্ত দুরূহ। কাজটি মো. শাহ আলমই দক্ষতার সঙ্গে করেন। ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে নৌ-কমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে অপারেশন করেন। এতে ১০টি টার্গেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা নিমজ্জিত হয়। এগুলো ছিল জাহাজ, গানবোট, বার্জ ও পল্টুন। চট্টগ্রাম বন্দরের ভয়াবহ অপারেশনের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে।
ঘটনার আকস্মিকতায় পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অন্য দিকে সারা বিশ্বে এ ঘটনা তোলপাড় তুলল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ ঐতিহাসিক এক ঘটনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো অভিযান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা এবং বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও অবদানের জন্য ডা. মোহাম্মদ শাহ আলমকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
শাহ আলম কৃতিত্বের সাথে মেডিকেলের প্রতিটি বর্ষে ক্লাস পাস করেন। স্বাধীনতার পর কলেজে ছাত্রলীগ দু’ভাগ হয়ে যায়— একভাগে ছিলো জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ, আরেক ভাগে ছিলো আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ। শাহ আলম জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৭২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহ সভাপতি পদ ছাড়া পুরো প্যানেল ছাত্রলীগ জয় লাভ করে। সে প্যানেলের বিজয়ে শাহ আলমের অবদান ছিলো সর্বাধিক । সেখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন ডা. মাহফুজ, ডা. আমীর হোসেন চৌধুরী, ডা. সুভাষ দাশ, ডা. সাইফুদ্দিন, ডা. শফিউল্লাহ, প্রফেসর সৈয়দ আফজল করিম লাকী, আশরাফুল ইসলাম, গোলাম রহমান, মঈনুল ইসলাম মাহমুদ এবং কায়সার। শাহ আলম সবার মধ্যমণি ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ২য়, ৩য় বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষ শেষ করেন।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্থে তিনি এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি শেষ করেন। তারপর তিনি সার্জারি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পান। সার্জারি ওয়ার্ডে থাকাকালে প্রফেসর নুরুল হক সরকার, মির্জা প্রফেসর করিম এদের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একজন ভালো সার্জন হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন শাহ আলম। তিনি নিজের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় একটি সার্জারি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠান করেন এবং সেখানে নিজেই অপারেশন করতেন। খুবই পরিশ্রম করতেন। বতর্মানে যেটি জিইসি’র মোড়ে মেডিকেল সেন্টার নামে যে হাসপাতাল আছে, সেটি প্রথমে ‘সার্জারি ক্লিনিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন শাহ আলম। তিনি বিভিন্ন টেকনিক্যালে ব্যাপারে ডা. গোফরানুল হকের সহযোগিতা চাইতেন।
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে শাহ আলম একদিন মেডিকেল সেন্টারে ডা. গোফরানুল হককে ডেকে তাঁর একটি রুমে নিয়ে যান এবং একটি এক্সরে ফিল্ম দেখান, সেটি ছিলো পাকস্থলী পিরামিড। এ এক্সরেটি দেখে ডা. গোফরানুল তাঁকে বলেন এটা কি, এটা কার ? শাহ আলম বলেন এটা তাঁর। তখন ডা. গোফরানুল হক মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। তাঁর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলো না। তিনি বললেন এটা তোর কি করে হয়। তুই মাত্র ২৮/২৯ বছর মানুষ, এই রোগ কিভাবে হয়। পাকস্থলী পিরামিড সবচেয়ে খারাপ রোগ, পাকস্থলী ক্যান্সারের পদচিহ্ন। ডা. গোফরানুল হক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি স্যারদের সাথে আলাপ করেছো, আমাদের সার্জারি স্যার। শাহ আলম জানান তিনি স্যারদের সাথে আলাপ করেছেন। স্যারেরা বলেছেন ঢাকা যেতে। এর পর থেকে শাহ আলমের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। এই রোগের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় যান। লন্ডন, ঢাকায় চিকিৎসা করে ফিরে আসেন। তাঁর মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সরকার তাঁর নামে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মিলনায়তন-এর নামকরণ করেন ‘শাহ আলম বীরোত্তম মিলনায়তন’।
১৫-১০-১৯৭৬ইং তিনি চন্দ্রঘোনা থানা হেলথ কমপ্লেক্স এ মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি এসিষ্ট্যান্ট সার্জন হিসাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সার্জারী ইউনিট-১ এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে একই ইউনিটের এসিষ্ট্যান্ট রেজিষ্টার (১১-০৪-১৯৭৮) এবং রেজিষ্টার (০৪-১২-১৯৮২) পদে উন্নীত হন।
পরবর্তী ১৯৭৫ সালে এমবিবিএস পাশ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে সহকারী সার্জন হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেলের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
শাহ আলম ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে মৃত্যুবরণ করে। তাঁকে গরবীউল্লাহ শাহ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
তাঁর স্ত্রীর নাম নাছিরা আক্তার। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম সাবরিনা আলম শম্পা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হোসেন কচি : চট্টগ্রাম, নোয়াখালী সবখানে তিনি নেতা

মিষ্টি হাসিমাখা মায়াবি মুখাবয়বের অধিকারী রবিউল হোসেন ছিলেন ষাটের দশকের চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতির একজন প্রিয়ভাজন নেতা। ষাটের শেষভাগে উদ্ভূত হয়ে তিনি নিজের জন্য আলাদা আসন

বিস্তারিত »

অধ্যাপক নূরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু

২০১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত মুহাম্মদ নূরুদ্দিন জাহেদ মঞ্জু স্মারকগ্রন্থে আমার লেখায় আমি বলেছিলাম তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ ছিলেন। আমরা মানে, যারা সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত

বিস্তারিত »

আতাউর রহমান খান কায়সার : বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করেছেন

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তিনি একজন Knowledgeable মানুষ ছিলেন। রাজনীতিকের বুদ্ধিজীবী হতে বাধা নেই। রাজনীতিওত এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা। যদিও বহুদিন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বুদ্ধিবৃত্তির পরিবর্তে

বিস্তারিত »

মুক্তিযুদ্ধে পটিয়ার বৃহৎ অপারেশন জিরি মাদ্রাসা, গুলিবিদ্ধ হন ইউসুফ

৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধে পটিয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা একটি বড় ধরণের অপারেশন করেন জিরি মাদ্রাসায়। উক্ত মাদ্রাসা ছিলো মুজাহিদ বাহিনীর ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজাকার

বিস্তারিত »

রাজনীতির বরপুত্র, সফল নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী

চট্টগ্রামের রাজনীতির একটি বর্ণাঢ্য আকর্ষক চরিত্র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া, চট্টগ্রামের অভিভাবক সংস্থা পৌর কর্পোরেশনের একবার প্রশাসক ও একবার মেয়র, দেশে

বিস্তারিত »

ভারত আশ্রয় না দিলে, সাহায্য না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না

ভারত একটি জুজু, কিছুদিন পর পর এই জুজুর ভয় দেখিয়ে মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। আগের দিনে যেমন পাড়া গাঁয়ের মা-বোনেরা বর্গীর ভয়

বিস্তারিত »

দেশের বর্তমান ক্রান্তিকাল উত্তরণে সিইউজের ঐতিহাসিক ভূমিকা স্মরণ

সাংবাদিকদের সমস্যা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকে যে সংগঠনটি জন্ম লাভ করেছিলো ষাটের দশকে, তার নাম সিইউজে বা চিটাগাং

বিস্তারিত »

ত্রিশের যুববিদ্রোহে শ্বেতাঙ্গদের জাহাজে চড়ে সমুদ্রে পলায়নের অজানা কাহিনি

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত, সেই বিদ্রোহে চট্টগ্রামের শ্বেতাঙ্গ নাগরিকেরা ভয়ে প্রাণ রক্ষার জন্য সমুদ্রে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিহাসে এটুকু তথ্যই পাওয়া

বিস্তারিত »

আহমদ শরীফ মনীর : রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

স্বাধীনতা-উত্তর পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভক্তি এবং একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করে; সেই দলের নাম জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এটা বোধ হয় কারো অজানা

বিস্তারিত »